ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি, মো. আবু জামান : স্থানীয় আওয়ামী রাজনীতিতে স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রভাব, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিস্ক্রীয়তা প্রভৃতি কারণে খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা মতিয়র রহমান বীর বিক্রম মৃত্যুর এক যুগেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও তার স্মৃতি রক্ষার নাগরিক কমিটির গ্রহণ করা কোন উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। অযতœ অবহেলায় পড়ে আছে তার কবরস্থান।
কবরের যেটুকু উন্নয়ন করা হয়েছে তা পারিবারিক উদ্যোগে। মতিয়র রহমান মৃত্যুর পর নিকলী নাগরিক কমিটির ব্যানারে প্রবীণ রাজনীতিবিদ কারার গিয়াস উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে দলমত নির্বিশেষে এক শোক সভার আয়োজন করা হয়। উক্ত শোক সভায় নিকলীর একটি সড়ক, খেলার মাঠ ও অডিটোরিয়াম মতিয়র রহমানের নামে নামকরণ, শহীদ স্মরণিকা বালিকা বিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তার মোড়টিতে মতিয়র রহমানের ভার্স্কয্য নির্মাণসহ ‘বীর বিক্রম স্কয়ার’ নামকরন, মতিয়র রহমান কল্যান ট্রাষ্ট ও একটি পাঠাগার স্থাপনের সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
মতিয়র রহমান বীর বিক্রম মৃত্যুর এক যুগেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও সে উদ্যোগ আজোবধি আলোর মুখ দেখেনি। মতিয়র রহমানের কবরস্থানের সন্মুখভাগে যাতায়তের কোন রাস্তা না থাকায় বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন করা কঠিন হয়ে পড়ে। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে পরিবারের সদস্য ও দু’একটি ছোটখাট সংগঠন ছাড়া আর কাউকে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে দেখা যায় না।
স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে কোন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় না। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকাকালে মুক্তিযোদ্ধাদের ছিল স্বর্ণযুগ। সেসময়ে যথেষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনা থাকা স্বত্তে¡ও শুধুমাত্র স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মনোভাবের অভাবে মতিয়র রহমান বীর বিক্রমের স্মৃতি রক্ষার উদ্যোগ বাস্তবায়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
মতিয়র রহমান নিকলী উপজেলা সদর ইউনিয়নের বানিয়াহাটি গ্রামের পিতা মরহুম কিনু মিয়ার ও মাতা হীরা বানুর বড় সন্তান। যুদ্ধকালীন সময়ে মতিয়র রহমান রড়ছড়া ৫নং সাব-সেক্টরের কোবরা কোম্পানীর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পাক-হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধসহ অনেক গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
তার নেতৃত্বে সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ থানা, কিশোরগঞ্জের নিকলী, অষ্ট্রগ্রাম ও কিশোরগঞ্জ সদর থানা হানাদার মুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা ও বিশেষ অবদানের জন্য সরকার ১৯৭২ সালে তাকে ‘বীর বিক্রম’ উপাধিতে ভূষিত করেন। দেশ প্রেমিক এই যোদ্ধা ২০১১ সালের ৬ অক্টোবর ইহলোক ত্যাগ করেন।