মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৮ পূর্বাহ্ন

আজ নিকলী মুক্ত দিবস

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৩৮ Time View

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, মোঃ আবু জামান খোকন : আজ ১৯ অক্টোবর নিকলী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে নিকলী থানা সদর শত্রæমুক্ত হয়েছিল। দিনভর মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি গ্রæপের দফায় দফায় আক্রমণের মুখে রাজাকার ও পাক হানাদারদের অনুগত বাহিনী টিকতে না পেরে রাতে তারা আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছিল। অবশ্য এই যুদ্ধে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা, একজন মুক্তিযোদ্ধার সহযোগী ও একজন গ্রামবাসীকে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছিল।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদ্বয় হলেন- নিকলী পূর্বগ্রামের আব্দুল মালেক মালু, গুরুই গ্রামের মতিউর রহমান, মুক্তিযোদ্ধার সহযোগী হলেন নিকলী পূর্বগ্রামের নান্টু মিয়া এবং গ্রামবাসী হলেন ষাইটধার গ্রামের মেঘু মিয়া। তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রাজাকার বাহিনীর সম্মুখযুদ্ধের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন।

নিকলী থানা সদরে পাক সেনাদের আগমন ঘটেছিল ২১ আগস্ট এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মুহূর্মুহূ আক্রমণের মুখে সেপ্টেম্বরের শেষ অথবা অক্টোবরের প্রথম দিকে তারা নিকলী ত্যাগ করে কিশোরগঞ্জে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল। তবে নিকলী গোড়াচাঁদ হাইস্কুলে রাজাকারদের একটি শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। অন্যদিকে নিকলী থানা ভবনে স্থাপিত হয়েছিল ইয়াহিয়ার অনুগত পুলিশ, আনসার ও রাজাকার বাহিনীর আরো একটি শক্ত ঘাঁটি।

নিকলী থানাসহ তৎকালীন কিশোরগঞ্জ সাব-ডিভিশনের বিভিন্ন এলাকা শত্রুমুক্ত করতে ৫ নং সেক্টরের বড়ছড়া সাব-সেক্টরের কোবরা কোম্পানীর কমান্ডার মতিয়র রহমান সুপারিশে প্লাটুন কমান্ডার রিয়াজুল ইসলাম খান বাচ্ছু ও মোজাম্মেল হক আবীরের নেতৃত্বে ২ প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধাকে উপরোল্লিখিত স্থানে রেকী করে রিপোর্ট করার জন্য নিকলী প্রেরণ করেন।

১৫/১৬ দিন পর তাদের সহায়তা করার জন্য প্লাটুন কমান্ডার হাবিব ঠাকুর, প্লাটুন কমান্ডার জাহাঙ্গীর আলম ও সেকশন কমান্ডার সুবাসসহ আরও ২ প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা নিকলী প্রেরণ করা হয়। নিকলীর মুক্তিযোদ্ধাগণ রেকী করে মতিয়র রহমানের নেতৃত্বে আরও ৩’শত মুক্তিযোদ্ধার সমন্বয়ে নিকলী আক্রমণ করা হবে উল্লেখ করে ১৪ অক্টোবর মতিয়র রহমানের নিকট রিপোর্ট করেন।

নিকলীর মুক্তিযোদ্ধারা জালালপুর বাজারে অবস্থান করছে খবর পেয়ে নিকলীর রাজাকারেরা তাদের উপর অর্তকিত হামলা করে। এ ঘটনায় ক্ষীপ্ত হয়ে হাবিব ঠাকুর ও হাসান আলী স্বল্প সময়ের আলোচনায় মতিয়র রহমানের অপেক্ষা না করেই নিকলী আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯ অক্টোবর ভোরে মুক্তিযোদ্ধারা রিয়াজুল ইসলাম খান বাচ্ছুর নেতৃত্বে নিকলীতে অবস্থানরত রাজাকারদের ওপর আক্রমণ শুরু করে।

রাজাকারেরা সড়কগুলোর দু-দিকের পুকুরে ভাঙা কাঁচ ফেলে রাখা এবং গোলাবারুদের শক্তিতে কুলিয়ে উঠতে না পারায় মুক্তিযোদ্ধারা ওই সময় পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছিল। পিছু হটে মুক্তিযোদ্ধারা গুরুই চলে যায় এবং সেখানে গিয়ে গুরুই গ্রামের আব্দুল মোতালিব বসু ও দেয়ারিশ মিয়ার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে আরও শক্তি সঞ্জয় করে পুণঃ আক্রমণের সিদ্ধান্ত হয়।

একই দিন দুপুরে মুক্তিযোদ্ধরা পাঁচরুখী গ্রামে মিলিত হয়ে যুদ্ধের পরিকল্পনা সাজায়। বিকালে মুক্তিযোদ্ধারা ৪টি গ্রæপে বিভক্ত হয়ে রাজাকারদের ঘাঁটি ঘেরাও করে গোলাগুলি ছুঁড়তে শুরু করে।

ওই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নিকলী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও যুদ্ধকালীন প্লাটুন কমান্ডার মোজাম্মেল হক আবীর স্মৃতিচারণ করে বলেন, যুদ্ধ সন্ধ্যার পর পর্যন্ত চলছিল।

বিকালের দিকে নিকলী গোরস্থানের কাছে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের দলে থাকা আব্দুল মালেক মালু, মতিউর রহমান ও নান্টু মিয়া গুলিবিদ্ধ হন। আবদুল মালেক ঘটনাস্থলেই শহীদ হন এবং আহত অবস্থায় মতিউর রহমান ও নান্টু মিয়াকে মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার পর চিকিৎসার অভাবে তারা প্রাণত্যাগ করেন।

মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ আব্দুল মালেক মালু ও নান্টু মিয়ার লাশ গুরুই গোরস্থানে দাফন করেন। মেঘু মিয়া তার গ্রামেই গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। অবশেষে রাজাকারের দল নিকলী সদর ইউনিয়নের তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান আমির উদ্দিন আহমেদের কাছে আত্মসমর্পন করে ৪৫টি ৩০৩ রাইফেল ও প্রচুর গোলাবারুদ ফেলে রেখে রাতের আঁধারে পালিয়ে যায়। এরপর নিকলী শত্রæমুক্ত হয়। ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে নিকলীর আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়। ঘরে ঘরে উত্তোলিত হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা।

আপডেট সংবাদ পেতে শতাব্দীর কন্ঠ পড়ুন, শেয়ার করে সাথে থাকুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
All rights reserved © Shatabdir Kantha . Developed by SDTT Academy & Tech Liberty