স্টাফ রিপোর্টার : আজ মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর পাক-হানাদারবাহিনী সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যোনে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে) আত্মসমর্পণ করে। সেই সাথে পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। আজ বাংলাদেশ এর ৫৩তম শুভ জন্মদিন। জাতি আজ পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নতুন করে উদযাপন করছে মহান বিজয় দিবসকে।
আজ বেকলই মনে পড়ছে সেইসব স্মৃতি, যা নাকি আমাদের শুধু গর্ব করতেই শেখায় না, বরং বিশ্বের বুকে জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শেখায়। ৩০ লাখ শহিদের রক্তে স্নাত, দুই লাখ নারীর সম্ভ্রম এবং কোটি কোটি মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের এই বিজয়। ১৭৫৭ সালে পলাশীর আ¤্রকাননে যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল তা উদিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত ছেড়ে চলে গেলেও বাংলার মানুষের ভাগ্য পশ্চিম পাকিস্তানীদের হাতে রেখে যায়। অবশ্য সেসময় বাংলার মানুষ পাকিস্তানের সাথেই থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু স্বৈরাচারী-নিষ্ঠুর পাক শাসকরা অচিরেই প্রমাণ করে তাদের সাথে বাংলার মানুষের চলতে পারে না। পায়ে পারা দিয়ে ঝগড়া বাঁধিয়ে বাংলার মানুষকে চিরতরে থামিয়ে দিতে মেতে ওঠে নিষ্ঠুর খেলায়।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শেখ মুজিবকে বন্দি করে হায়ানার দল শুরু করে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, বিডিআর সদর দপ্তর, রাজারবাগ পুলিশলাইন্স সহ ঢাকা শহরের আনাচে-কানাচে চালানো হয় নির্মম হত্যাযজ্ঞ। যুদ্ধে বাধ্য করা হয় নিরস্ত্র বাংলার আপামর জনসাধারণকে, তাঁরা জীবন বাজি রেখে নেমে পড়েন মুক্তি সংগ্রামে। অবশেষে ৩০ লাখ শহিদ, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম আর কোটি কোটি মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর চ’ড়ান্ত বিজয় লাভ করে বাংলার মানুষ।
মহান বিজয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদা এবং ভাবগাম্ভীর্যের সাথে উদ্যাপনের লক্ষ্যে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচী। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্টেডিয়ামে একত্রিশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের শুভ সূচনা। সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবন/প্রতিষ্ঠানসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন।
সকাল ৭টায় গুরুদয়াল সরকারি কলেজে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ। ৮টায় সার্কিট হাউজে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন। ১০টায় পুরাতন স্টেডিয়ামে দিনব্যাপী বিজয়মেলা। বেলা ১১টায় শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা। সুবিধাজনক সময়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারিত স্থানে স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা) ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে ক্রীড়া অনুষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বাদ যোহর ও সুবিধাজনক সময়ে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য এবং জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে সকল মসজিদ, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত/প্রার্থনা। দুপুর ২টায় হাসপাতাল/জেলাখানা/এতিমখানা/সরকারি শিশু পরিবার (বালক ও বালিকা)/পাগলা মসজিদ এতিমখানায় উন্নতমানের খাবার পরিবেশন।
বিকেল ৩টায় শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্টেডিয়ামে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ (জেলা প্রশাসন, কিশোরগঞ্জ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা একাদশ বনাম কিশোরগঞ্জ পৌরসভা ও সুধীজন সম্মিলিত একাদশ)। সুবিধাজনক সময়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপ এবং বিভিন্ন স্থাপনাসমূহে জাতীয় পতাকাসহ রঙিন নিশান দ্বারা সজ্জিতকরণ। দিনব্যাপী সরকারি ও বেসরকারি/স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার জাদুঘর/পার্কসমূহ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিনা টিকিটে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা।