স্টাফ রিপোর্টার : আজ ধোবাজোড়া গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালে এই দিনে কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের ধোবাজোড়া গ্রামে পাক হানাদার বাহিনী ৭ ঘন্টাব্যাপী অপারেশন চালিয়ে ২০জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে ধরে নির্মমভাবে ধরে নিয়ে হত্যা করে। পাক হানাদার বাহিনীর দ্বারা যখন সারাদেশ অবরুদ্ধ তখন কিশোরগঞ্জ জেলার বির্স্তীন হাওড় অঞ্চল ছিল শক্রমুক্ত। আগস্ট মাসের মাঝামাঝি বর্ষাকালের শেষ পর্যায়ে স্থানীয় রাজাকার ও আল বদরেদের সহযোগিতায় কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা, অষ্টগ্রাম, নিকলী উপজেলা পাকবাহিনী ক্যাম্প স্থাপন করে।
তখন থেকে হাওড় অঞ্চলে রাজাকার আলবদরদের সহযোগিতায় পাকবাহিনীর তান্ডবলীলা শুরু হয়। অন্যদিকে বর্তমান মিঠামইন উপজেলার ধোবাজেড়া গ্রামের হাজী সওদাগর ভূইয়ার বাড়ীতে গড়ে উঠে মুক্তি বাহিনীর একটি ক্যম্প। এই বাড়ী থেকে মুক্তি যোদ্ধারা হাওর অঞ্চল সহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাতো। ১৯৭১ সনের ১ সেপ্টেম্বর খুব ভোরে ধোবাজোড়ার পাশের গ্রাম কান্দিপাড়ার কুখ্যাত রাজাকার কমান্ডার। কুরবান আলীর নেত্বতে সশস্ত্র অবস্থায় পাক-হানাদার বাহিনীর একটি দল পরিকল্পিতভাবে নৌকা যোগে চারিদিক ঘেরাও করে ফেলে। সে দিন ধোবাজোড়া গ্রামে মুক্তিবাহিনীর কেউ ছিল না।
গ্রামের লোকজন কিছু বুঝার আগেই গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে পাকবাহিনীর গ্রামের বিভিন্ন বাড়ীকে ঢুকে পড়ে ঘুমন্ত অবস্থায় প্রায় দেড়শতাধিক লোককে আটক করে ফেলে। হাজী মো. সওদাগর ভূইয়া, আব্দুল গণি ভূইয়া, রওশন ভূইয়ার বাড়ীতে তল্লশী চালিয়ে কোন মুক্তিযোদ্ধাকে না পেয়ে গ্রামের মানুষের উপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। বর্ষাকাল থাকায় গ্রামের অধিকাংশ মানুষ পালাতে চেষ্টা করেও পালাতে পারেনি। এ ঘটনার পর রাজাকার আলবদররা গ্রামের বাড়ী বাড়ী লুটপাট ও অগ্নি সংযোগ করে।
এবং শত শত গবাধি পশু অগ্নিদদ্ধ হয়ে মরা যায়। পাক-হানাদার বাহিনী ধোবাজোড়া গ্রাম থেকে চলে যাওয়ার সময় দেড়শতাধিক লোকের মধ্য থেকে বাছাই করে নেতৃত্ব স্থানীয় বুদ্ধিজীবি ও বিশিষ্ট বিশ ব্যক্তিকে ইটনা থানার ক্যম্পে নিয়ে যায়। এবং সেখানে তাদের নির্মমভাবে নির্যাতন ও অত্যাচার চালিয়ে হত্যা করে। শহীদের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। পেরিয়ে গেছে ৫৩টি বছর। কিন্তু ধোবাজোড়া গ্রামে এই গণ হত্যার স্মৃতি নতুন প্রজন্মের জন্য গড়ে উঠেনি কোন স্মৃতি পলক। শহীদের তালিকায় লিপিবদ্ধ হয়নি তাদের নাম।
এ দিবস উপলক্ষে শুক্রবার শহীদচত্বরে বেঁচে থাকা শহীদের স্বজনেরা ও এলাকবাসী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচিতে রয়েছে বিকাল ৪টায় কোরআন খানী, মিলাদ, দোয়ার মাহফিল, শোক ও আলোচনা সভা। এছাড়াও মিঠামইন হাজী তায়েব উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক শহীদ আব্দুর মান্নান সাহেবের স্মৃতি চারণ অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।