শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন

আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দলিল রেজিস্টি

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১৮ Time View

স্টাফ রিপোর্টার : কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার মিনতি দাস। অভিযোগ ছিল যোগদানের পর থেকে অর্থের বিনিময়ে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দলিল রেজিস্ট্রি করে আসছেন। এমন অভিযোগ থাকার পরও নীরব ভ‚মিকায় দলিল দাতা ও গ্রহীতারা।

এরই মধ্যে অভিযোগ আসে, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নে আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে দলিল রেজিস্ট্রি করেছেন সাব রেজিস্ট্রার মিনতি দাস। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে গেলে বোবার অভিনয় করেন মিনতি। কোন কথা না বলে চুপ করে বসে থাকেন তার চেয়ারে।

তথ্য বলছে, মারিয়া মৌজাস্থ আরএস ৮৫৩ খতিয়ানের মালিক জুবেদা খাতুন আরএস ৩৯০৫ দাগে ২০১০ সালের ১৯ জুলাই ৮১৮২নং দলিলে আরএস ৩৭৬৪ দাগে ২৫ শতাংশ ভ‚মি ছেলে মোমতাজ উদ্দিন মন্তু’র কাছে সম্পাদন দলিলের মাধ্যমে হস্তান্তর করেন। পরবর্তীতে একই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রিকৃত করে দেন।

মোমতাজ উদ্দিন মন্তু’র রেজিষ্ট্রিকৃত দলিলের সেই জায়গায় জুবেদা খাতুনের অপর ছেলে আবু হানিফ ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট রেজিস্ট্রিকৃত দলিল নং ৬৮৯৭ হেবা ঘোষণা করে নিজে জমির মালিক দাবি করেন। বিষয়টি জানতে পেরে মোমতাজ উদ্দিন আদালতে মামলা করেন। আদালত শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে উল্লেখিত জমিতে দু’পক্ষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেন।

সরেজমিনে জানা যায়, বিবাদমান জমির মোট পরিমাণ ৪১ শতাংশ। সেখান থেকে ৮ শতাংশ জমি ১৯৯০ সালে মা জুবেদা খাতুন ছেলে মোমতাজ উদ্দিন মন্তুকে দিয়ে দেন। পরে ওই জমি ফাতেমা খাতুনের কাছে হস্তান্তর করেন। বাকি জমি মোমতাজ উদ্দিনের কাছে থাকা অবস্থায় ২০১০ সালে আবারও ২৫ শতাংশ জমি মোমতাজ উদ্দিনকে লিখে দেন জুবেদা খাতুন।

শুরু থেকেই জমির দখলে ও খাজনা দিয়ে আসছিলেন মোমতাজ উদ্দিন। সবকিছু ঠিক থাকলেও কৌশলে দলিল করে নিজের বলে দাবি করেন মোমতাজ উদ্দিনের সহোদর ভাই আবু হানিফ। বিষয়টি জানতে পেরে আদালতের দারস্থ হোন মোমতাজ উদ্দিন।

আদালতে মামলার কাগজ ও আদেশ পর্যালোচনা করে জানা যায়, আবু হানিফ হতে নালিশী জমি দখলের সমর্থনে কোন কাগজাদি দাখিল হয়নি। ফলে নালিশী হেবা দলিল ম‚লে আবু হানিফ আদৌ দখলপ্রাপ্ত হয়েছিলেন কি না এই মর্মে সন্দেহ তৈরী হয়। ফলে নালিশী জমি সংক্রান্তে মোমতাজ উদ্দিন মন্তু’র তর্কযোগ্য মোকদ্দমা রয়েছে বিধায় নালিশী জমি অন্যত্র হস্তান্তর করা হলে কিংবা এর আকার আকৃতির পরিবর্তন করা হলে মোমতাজ উদ্দিন মন্তু’র অপ‚রণীয় ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে যায়। কাজেই সুবিধা-অসুবিধার ভারসাম্য মোমতাজ উদ্দিন মন্তু’র অনুক‚লে ও আবু হানিফের প্রতিক‚লে।

এমতাবস্থায় ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর আবু হানিফকে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তফসিল বর্ণিত জমিতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। আদালতের নিষেধাজ্ঞার সেই নোটিশ আবু হানিফের পাশাপাশি পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট সাব রেজিস্ট্রি অফিসে। নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও ৩৮ লাখ টাকা ম‚ল্যে ১৯ শতাংশ জমি বিক্রি করে দেন আবু হানিফ। এবং চলতি বছরের ২৭ নভেম্বর কিশোরগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে সাফকাওলা দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়।
মোমতাজ উদ্দিন মন্তু বলেন, এই জমিটা আমি কয়েক যুগ ধরে ভোগদখল করে আছি। আমার মা আমাকে লিখে দিয়ে গেছেন। যখন মা লিখে দিয়েছেন তখন জমিটার দাম ছিল না। কারণ পুরো জমিটা গর্ত। এখন দাম বেড়েছে।

আমার ভাই আমার সাথে জালিয়াতি করেছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কিভাবে বিক্রি করেছে জানি না। আর নিষেধাজ্ঞার কপি সাব রেজিস্ট্রি অফিসেও দেওয়া আছে। তারপরও কিভাবে দলিল করা হয়েছে এ বিষয়ে জানতে বেশ কয়েকবার সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে গিয়েছি কিন্তু কোন উত্তর পায়নি। দলিল লেখকের কাছেও গিয়েছি। কোন সমাধান না পেয়ে আদালতকে আবার জানিয়েছি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

জমি বিক্রি’র বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আবু হানিফ বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিক্রি করায় আমি ভুল করেছি। আর এ কারণে আমি ঠকেছিও। আমার এমনটা করা ঠিক হয়নি। এখন সমাধান করতে চাই।

আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দলিল রেজিস্ট্রির বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মিনতি দাসের কাছে। প্রতিবেদকের কাছে এক সপ্তাহের সময় নেন ওই কর্মকর্তা। এরপর যাওয়া হলে এ বিষয়ে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোন কথা বলবেন না বলে তিনি জানান। উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া ও অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য বারবার বলা হলেও বোবা হয়ে বসে থাকেন তিনি।

আপডেট সংবাদ পেতে শতাব্দীর কন্ঠ পড়ুন, শেয়ার করে সাথে থাকুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
All rights reserved © Shatabdir Kantha . Developed by SDTT Academy & Tech Liberty