মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫১ পূর্বাহ্ন

আদি অলিম্পিক ইতিকথা : পর্ব-৪

মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৬ আগস্ট, ২০২৪
  • ৪৭ Time View

আজ থেকে প্রায় ৩ হাজার বছর আগে নিছক দেবদেবীদের সন্তুষ্টির নিমিত্তে গ্রীসের অলিম্পিয়া বা এ্যাথেনা নগরীতে যে ক্রীড়াযজ্ঞের সূচনা হয় তাই আদি বা প্রাচীন অলিম্পিক নামে খ্যাত। অনেক চড়াই-উত্থরাই পেরিয়ে টানা ১৩শ’ বছর নানা ঘটন-অঘটনের জন্মা দেয়া ক্রীড়াযজ্ঞ নিয়ে আমাদের এই বিশেষ ধারাবাহিক আয়োজন.. আজ থাকছে চতুর্থ পর্ব।

(পূর্বে প্রকাশের পর)
আদি অলিম্পিক ইভেন্টস : ‘স্টেড রেস’– যত দূর জানা যায়, আদি অলিম্পিকের প্রথম ১৩টি আসরে অর্থ্যাৎ ৭৭৬ থেকে ৭২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত কেবল মাত্র ফুটট্রেস বা ‘স্টেড’ নামে এক পায়ের দৌড় অনুষ্ঠিত হত। সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকে হাতকে প্রসারিত করে দৌড় শুরু করত প্রতিযোগীরা। মাত্র ১৯২ মিটার বা ২১০ গজ দৈর্ঘের সরলরেখায় অনুষ্ঠিত হত এই প্রতিযোগিতা। ইতিহাস থেকে জানা যায়, এলিসের দৌড়বিদ করোইবাস ফোরেওবস খ্রিস্টপূর্ব ৭৭৬ সালে প্রথমবারের মতো বিজয়ী হন স্টেড রেসে। এ জন্য তাকে পুরো স্টেডিয়াম দৌড়াতে হয়েছিল সোজা পথে যার দূরত্ব ছিল প্রায় ১৮০/১৯০ মিটার। রোডসের লিওনিডাস ১২ বার এই ইভেন্টে জয়ী হয়ে আদি অলিম্পিয়াডের সেরা তারকায় পরিণত হন।

৭২৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ১৪তম অলিম্পিয়াডে প্রবর্তিত হয় দু’ পায়ের দৌড় বা ‘দিয়াউলস’। দূরত্ব বেড়ে দ্বিগুণ হয়। তার পরের আসর থেকে শুরু হয় পুরো মাঠকে ১২ পাক বা প্রায় ৪ কিলোমিটার দৌড়ানোর ইভেন্ট। ৭২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ১৫তম আসরে যোগ হয় দীর্ঘ দৌড় বা ‘ডলিচোস’ প্রায় ৪০০ মিটার রেসের অনুরূপ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল এবং চার বছর পর ডলিচোস ১৫০০ বা ৫০০০ মিটারে উন্নীত হয়। প্রতিযোগীকে স্টেডিয়ামকে ২০ থেকে ২৪ পাক ঘুরতে হত যা প্রায় ৭.৫ কিমি থেকে ৯ কিলোমিটার।
৫২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অলিম্পিকে যুক্ত হয় হপলিটোড্রোমোস বা ‘হপলাইট রেস’। এতে সম্পূর্ণ সামরিক বর্মে সজ্জিত হয়ে একক বা ডাবল যা প্রায় ৪০০ বা ৮০০ মিটার অতিক্রম করতে হত। এই রেসটি সৈন্যদের একটি যুদ্ধ কৌশলের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল।

পেন্টাথলন : পাঁচটি ইভেন্ট নিয়ে গঠিত পেন্টাথলন ছিল আদি অলিম্পিকের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ইভেন্ট। ৭০৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ১৮তম অলি¤িয়াডে আবির্ভূত এই ইভেন্টে দৌড়, লং জাম্প, ডিসকাস থ্রো, জ্যাভলিন থ্রো এবং রেসলিং অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই প্রতিযোগিতার বিজয়ী অ্যাথলেটরা ছিল প্রাচীন অলিম্পিকের সব থেকে আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। কারণ এতে সাফল্য পেতে প্রতিযোগীকে হতে হতো শক্তিশালী, তড়িৎ গতি সম্পন্ন এবং আক্রমনাত্বক। প্রতিযোগিতায় লাফানোর সময় হাতে থাকত ভারী বস্তু। অবশ্য উৎসাহ দিতে বাজানো হতো বাঁশি। ডিস্কাস থ্রোতে ব্যবহার করা হতো ৫ কেজি ওজনের ব্রোঞ্জের গোলক বা ধাতব অথবা পাথরের চাকতি। যিনি অন্তত তিনটিতে জয়ী হতে পারতেন তাকেই দেয়া হতো অলিভ পাতার মুকুট। এই ইভেন্টে আধিপত্য ছিল গ্রীকদের।

কুস্তি বা রেসলিং : ৭০৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ১৮তম অলিম্পিকেই প্রচলন হয় হাল আমলের ফ্রিস্টাইল রেসলিংয়ের মতো কুস্তির। তখন ওজন শ্রেণির কোন ব্যাপার ছিল না, যে কেউ লড়তে পারতেন। প্রতিযোগীরা শরীরের সকল অংশই ব্যবহার করতে পারতেন প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে। প্রতিপক্ষকে তিনবার ধরাশায়ী করতে পারলেই নিশ্চিত হতো বিজয়। শরীর, নিতম্ব, পিঠ বা কাঁধ (এবং সম্ভবত হাঁটু) মাটিতে স্পর্শ করলে একটি নিক্ষেপ গণনা করা হত। উভয় প্রতিযোগী পড়ে গেলে কিছুই গণনা করা হতো না। তবে আধুনিক গ্রিকো-রোমান কুস্তি থেকে ভিন্ন ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে মিলানের ক্রোটন ছ’বার বিজয়ী হয়ে স্থায়ীভাবে স্থান করে নিয়েছেন ইতিহাসের পাতায়।

বক্সিং বা মুষ্টিযুদ্ধ (পিগমাচিয়া) : গ্রীক পুরাণে উল্লেখ আছে- সূর্যদেবতা এপোলো তাঁর সৎভাই এরেসের সঙ্গে মুষ্টিযুদ্ধে আবর্তীণ হয়ে ছিলেন। তার স্মারক হিসেবে খ্রিস্টপূর্ব ৬৮৮ সালে অলিম্পিকে যুক্ত হয়। প্রতিযোগীরা হাতের মুষ্টিতে ও কনুইয়ের ওপর পর্যন্ত চামড়া পেঁচিয়ে লড়াইয়ে নামতেন। প্রতিটি আঘাত যাতে প্রতিদ্ব›দ্বীকে ধরাশায়ী করতে পারে সে জন্য চামড়ার নিচে ব্যবহার করত ধাতব প্লেট অথবা ধারাল নখ। ফলে আহত হবার ঘটনা ঘটত অহরহই। মারা যাবার ঘটনাও ঘটেছে একাধিক বার।

এ প্রতিযোগিতার প্রথম বিজয়ী হিসেবে ওনোমাস্টাসের নাম নথিভুক্ত আছে। তবে মুষ্টিযুদ্ধ ইভেন্টের জন্য বিখ্যাত ছিল রোডসের দিয়াগোরাস পরিবার। তারা একের পর এক খেতাব জিতে ইভেন্টটি প্রায় নিজেদের করে ফেলে ছিল। যে কারণে প্রাচীন গ্রীকরা বিশ্বাস করতে শুরু করে যে দিয়াগোরাসরা এসেছে সরাসরি সৃষ্টি কর্তা থেকে। তবে স্পার্টানরা নিজেদেরকে বক্সিংয়ে আবিষ্কারক হিসেবে দাবি করত। যদিও তারা খুব সহসাই বক্সিং থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। (আগামীকাল পড়ুন ৫ম পর্ব)

আপডেট সংবাদ পেতে শতাব্দীর কন্ঠ পড়ুন, শেয়ার করে সাথে থাকুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
All rights reserved © Shatabdir Kantha . Developed by SDTT Academy & Tech Liberty