মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৮ পূর্বাহ্ন

আদি অলিম্পিক ইতিকথা : পর্ব-৫

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ১২ আগস্ট, ২০২৪
  • ৫৬ Time View
প্রাচীন অলিম্পিক রথ দৌড়

আজ থেকে প্রায় ৩ হাজার বছর আগে নিছক দেবদেবীদের সন্তুষ্টির নিমিত্তে গ্রীসের অলিম্পিয়া বা এ্যাথেনা নগরীতে যে ক্রীড়াযজ্ঞের সূচনা হয় তাই আদি বা প্রাচীন অলিম্পিক নামে খ্যাত। অনেক চড়াই-উত্থরাই পেরিয়ে টানা ১৩শ’ বছর নানা ঘটন-অঘটনের জন্মা দেয়া ক্রীড়াযজ্ঞ নিয়ে আমাদের এই বিশেষ ধারাবাহিক আয়োজন.. আজ থাকছে ৫ম পর্ব।

(পূর্বে প্রকাশের পর)
রথ দৌড় ও ঘোড় দৌড় : পৃথিবীর প্রাচীন খেলাগুলির মধ্যে ঘোড় দৌড় ও রথ দৌড় ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতা। তন্মধ্যে চার ঘোড়ার রথ দৌড় (টেথ্রিপন) ছিল অলিম্পিকে প্রথম অশ্বারোহী ইভেন্ট যা ৬৮০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চালু হয়েছিল। মর্যাদাপূর্ণ হবার কারণ- শুধুমাত্র ধনী ব্যক্তিরা ঘোড়ার রক্ষণাবেক্ষণ, প্রশিক্ষণ এবং পরিবহনের অধিকার রাখতেন। আর জনপ্রিয়তার মাত্রা বুঝা যায় বিখ্যাত রোমান সম্রাট নিরোর রথ দৌড়ে অংশ গ্রহণ। কথিত আছে- ৬৭ সালে সম্রাট নিরো ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতিযোগিতায় রথ থেকে পড়ে গিয়েও নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেছিলেন এই যুক্তিতে যে, তিনি পড়ে না গেলে বিজয়ী হতেন।

ঘোড়দৌড়ের প্রতিযোগিতা বিভিন্ন ইভেন্টে বিভক্ত ছিল। চার ঘোড়ার রথ দৌড়, দুই ঘোড়ার রথ দৌড় এবং ঘোড়ার সাথে ঘোড়ার দৌড়। ঘোড়ার মালিক নির্বাচন করত প্রতিযোগিতায় কে ঘোড়ার পিঠে চড়বে। রথ দৌড় ও ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতার প্রচলন হয় ৬৮০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ২৫তম অলিম্পিকে।

ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রধান্য দেখিয়ে ছিলেন মেসোডনিয়ান ফিলিপ-২। ৩৫৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ফিলিপ-২ যখন তৃতীয় বারের মতো ঘোড় দৌড়ে বিজয়ী হন, তখন তাঁর সন্তান ‘আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট’-এর জন্ম হয়। ইভেন্টটি ছিল তিন ভাগে বিভক্ত। ঘোড় সোয়ার বিজয়ী হলেও পদক জোটত ঘোড়ার মালিকের ভাগ্যে। ঘোড়ার সাথে রাইডার প্রতিযোগিতার প্রচলন হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৬৪৮ সালে, আর দুই ঘোড়ার রথটি ৪০৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। খ্রিস্টপূর্ব ৬৩২ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৬১৬ সালের মধ্যে ছেলেদের জন্য বেশ কিছু ইভেন্ট চালু করা হয়েছিল।

অশ্বারোহী ইভেন্টে মজার ঘটনা : রথ দৌড় এবং ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতার ইভেন্টগুলোকে ঘিরে বেশ কিছু মজার ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রাচীন অলিম্পিকে অশ্বারোহী ইভেন্ট বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত ছিল। আর এসব প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া অশ্বারোহীগণ নয় বিজয়ী হিসেবে ঘোষিত হতেন ঘোড়ার মালিক বা প্রশিক্ষক। এই প্রেক্ষাপটে জন্ম নেয় মজার ইতিহাস।

প্রাচীন রীতি অনুসারে অলিম্পিকে অংশ নেয়া ঘোড়ার মালিক, রক্ষণাবেক্ষণ, প্রশিক্ষণ এবং পরিবহণের অধিকার ছিল শুধুমাত্র ধনাঢ্য অভিজাত শ্রেণির পুরুষদের হাতে। ঘোড়ার মালিক নির্বাচন করত প্রতিযোগিতায় কে ঘোড়ার পিঠে চড়বে। এই রীতির বদৌলতে আদি অলিম্পিকে যখন নারীদের অংশ গ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল, সে সময়ই ঘোড়ার প্রশিক্ষক স্পার্টান রাজকুমারী সিনিস্কা প্রথম মহিলা হিসেবে অলিম্পিক বিজয়ী হবার গৌরব অর্জন করেন।
সে সময় ঘোড় দৌড় এবং রথ দৌড়ে একজন ধনী ব্যক্তির পক্ষে একাধিক দল গঠন এবং একাধিক দল নিয়ে অলিম্পেকে অংশ নেয়ার সুযোগ ছিল। প্লুটার্কের বর্ণনায় উল্লেখ্য আছে- অ্যালসিবিয়াডসের অন্তর্গত এক ধনাঢ্য ব্যক্তি একটি একক প্রতিযোগিতায় সাতটি রথ নিয়ে এসেছিলেন। প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বা চতুর্থ স্থান অর্জন করেছিলেন।

প্যানক্রাশন : ঘোড়া দৌড় (কেলেস) বা প্যানক্রাশন চালু হয়েছিল ৬৪৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ৩৩তম অলিম্পিয়াডে। তবে ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ১৪৫তম অলিম্পিয়াডে ঘোড়া দৌড় সরাসরি ছেলেদের ইভেন্টে পরিণত হয়। এই ইভেন্টে বক্সিং ও কুস্তির কৌশল প্রয়োগের পাশাপাশি প্রতিদ্ব›দ্বীকে মাটিতে ফেলে লাথি, তালা ও চোক ব্যবহার করত। তবে নিষিদ্ধ ছিল কামড় দেওয়া এবং গজ করা। এটি ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় ইভেন্টগুলির মধ্যে একটি এবং নৃশংস। প্যানক্রেশনের বিজয়ীদের প্রশংসা করে আটটি ওড লিখেছেন পিন্ডার। প্যানক্রাশন ইভেন্টে ফিগালিয়ার আরিচিওন অমর হয়ে আছেন মরণোত্তর বিজয়ী খ্যাতাব লাভ করে। আরিচিওন প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বীর আঘাতে মারাত্মক আহত হন। পরে পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে মৃত্যুরকোলে ঢলে পড়েন।

আর্মোড রেস : আদি অলিম্পিকের সকল প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীরা নগ্ন হয়ে সব ইভেন্টে অংশ নিলেও আর্মোড রেসে অংশগ্রহণকারীরা পরিধান করত বিশেষ ধরনের বস্ত্র। যাতে থাকত নানা অস্ত্রশস্ত্র, মাথায় হেলমেট, এক হাতে থাকত ঢাল, আরেক হাতে বল্লম। এ অবস্থাতেই তাদের দু’বার প্রদক্ষিণ করতে হত পুরো স্টেডিয়াম। খ্রিস্টপূর্ব ৫২০ সাল থেকেই নিয়মিত হত এই প্রতিযোগিতাটি।

ডিস্কাস : প্রাচীন অলিম্পিকেও আধুনিক কালের অনুরূপ ছিল ডিস্কাস ইভেন্টটি। খুঁজে পাওয়া পাথর এবং লোহার গোলক যার স্বাক্ষ্য বহন করছে। তবে ধারনা করা হয়, সে যুগেও ব্রোঞ্জের গোলকের ব্যবহার ছিল সর্বোচ্চ। সাধারণ ভাবে গোলকের ওজন ছিল ২ কেজি, যার ব্যাস প্রায় ২১ সেন্টিমিটার। মোটামুটি আধুনিক ডিস্কাসের সমতুল্য। আধুনিককালে ২.৫ মিটার (৮.২ ফুট) ব্যাসের বৃত্তের ভিতরে থেকে লৌহ গোলক ছুড়তে হয়। হোমারের ইলিয়াড এবং ওডিসি’তে অলিম্পিক গেমসের পেন্টাথলনে অন্তর্ভুক্ত পাঁচটি ইভেন্টের একটি হিসেবে ডিস্কাস থ্রো’র উল্লেখ আছে।

লম্বা লাফ : লং জাম্পে প্রতিযোগীরা লাফানোর সময় হালটারেস নামক একজোড়া ওজন দোলাতেন। জাম্পাররা হাতের সাথে মানানসই পাথরের অথবা সীসার তৈরি গোলাকার ওজন ব্যবহার করত। লং জাম্পে সময়ের ব্যাপ্তি নিয়ে অর্থ্যাৎ লাফানো শুরু করার পর থেকে, নাকি রান আপের পর থেকে গণনা করা হতো তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। (আগামীকাল পড়ুন ৬ষ্ঠ পর্ব)

আপডেট সংবাদ পেতে শতাব্দীর কন্ঠ পড়ুন, শেয়ার করে সাথে থাকুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
All rights reserved © Shatabdir Kantha . Developed by SDTT Academy & Tech Liberty