৭৭৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শুরু হয়ে টানা ১৩শ’ বছর চলা প্রাচীন অলিম্পিক একটা সময় চলে যায় হিমঘরে। দীর্ঘ বিরতির পর আবার আবির্ভূত হয় আধুনিক রূপে। অলিম্পিকের এই নব পথ পরিক্রমা নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক বিশেষ আয়োজনে আজ থাকছে ১ম পর্ব…
প্রায় ৩ হাজার বছর আগে গ্রিসের অলিম্পিয়া বা এ্যাথেনা নগরিতে শুরু হওয়া ‘আদি অলিম্পিক গেমস’ নানা ঘাত-প্রতিঘাতে একটা সময় সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ হয়ে যায়। অলিম্পিক গেমসের উপর প্রথম আঘাতটা আসে যখন গ্রীকরা রোমান সাম্রাজ্যের অধীনস্থ হয়। কারণ রোমানরা অ্যাথলেটিক্স ইভেন্টগুলোতে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে অংশ নেয়ার ঘোর বিরোধী ছিল। গ্রীকদের সাথে তাদের নানা বিষয়ে মতানৈক্য ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার অলিম্পিককে হুমকির মুখে ফেলে।
তাছাড়াও গ্রীকদের লাগামহীন পৌত্তলিকতা রোমানদের বিরক্তি ঘটায়। রোমান সাম্রাজ্যে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে খ্রিস্টধর্ম প্রতিষ্ঠা এবং পরবর্তীতে ইসলাম ধর্মের আগমনে বিভিন্ন পূজো উৎসব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হিমঘরে চলে যায় বিভিন্ন ক্রীড়া উৎসবও। তবে বিশ্ব জুড়ে ব্রিটিশদের রাজ্য বিস্তারের ফলে ক্রীড়া ক্ষেত্রেও আসে পরিবর্তনের হাওয়া। এছাড়াও, ১৮২১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে অটোমান সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই গ্রীকরা অলিম্পিক গেমসকে পূনর্জীবিত করার চিন্তাভাবনা শুরু করে। আমাদের এ বিশেষ আয়োজনে আধুনিক অলিম্পিক গেমসের পথ-পরিক্রম নিয়ে আলোকপাত করা হবে।
ব্যক্তি পর্যায়ে আয়োজন : প্রাচীন অলিম্পিক সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ হয়ে যাবার বহুকাল পর্যন্ত বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গণ স্থবির থাকার পর ব্রিটিশদের মাধ্যমে তা সচল হতে থাকে। বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন নগরে শুরু হয় ব্যক্তি পর্যায়ে নানা ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন। অবশ্য সেগুলো ছিল সার্কাস কিংবা বাণিজ্য মেলার অংশ। যত দূর জানা যায়, প্রাচীন অলিম্পিক গেমস বন্ধ হয়ে যাবার পর ১৬১২ থেকে ১৬৪২ সালের মধ্যে ব্রিটিশ আইনজীবী রবার্ট ডোভার ‘কোটসউল্ড গেমস’ নামে একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেন। ২০১২ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক গেমসের সমাপনী অনুষ্ঠানে সপ্তদশ শতকের ‘কোটসউল্ড গেমস’কে বৃটেনে অলিম্পিকের সূচনার অভ’্যদয় হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
লন্ডনের অনুকরণে ফ্রান্সে ১৭৯৬ থেকে ১৭৯৮ সালের মধ্যে প্রাচীন অলিম্পিক গেমসের ঐতিহ্য বহন করে অনুষ্ঠিত হতো ‘এল অলিম্পিয়াডে ডি লা রিপাবলিক গেমস’। প্রাচীন গ্রীক অলিম্পিক গেমসে অনুষ্ঠিত কিছু ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এই অলিম্পিকেও অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৭৯৬ সালে অনুষ্ঠিত এই এল অলিম্পিয়াডে ডি লা রিপাবলিক গেমসে সর্বপ্রথম ম্যাট্রিক পদ্ধতির পরিমাপ অনুসরণ করা হয়েছিল।
ড. উইলিয়াম পেনি ব্রুকস ১৮৫০ সালের দিকে ইংল্যান্ডের শ্রপশায়ারের মাক ওয়েনলকে আধুনিক যুগের মত করে অলিম্পিক গেমসের প্রচলন শুরু করেন। তিনি এই গেমসের নাম দেন ‘ওয়েনলক অলিম্পিয়ান গেমস’। এই ক্রীড়াযজ্ঞটিই ধারাবাহিকভাবে আজ পর্যন্ত চলে আসছে। ড. ব্রুকস এই গেমসের জন্য ১৮৬০ সালের ১৫ নভেম্বর ওয়েনলক অলিম্পিয়ান সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৬৫ সালে জন হুলি এবং ড. ব্রুকস ন্যাশনাল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন গঠন করেন যা পরবর্তীতে ব্রিটিশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন গঠনের পথ প্রদর্শকের কাজ করে।
শুধু তাই নয় এই সংস্থার সংবিধানের বিভিন্ন পরিচ্ছেদের ভিত্তিতেই আধুনিক অলিম্পিক সনদ লেখা হয়।
১৮৬২ থেকে ১৮৬৭ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডের লিভারপুলে জন হুলি এবং চার্লস মিলির তত্ত¡াবধানে বার্ষিক অলিম্পিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই ক্রীড়া আসরটি আন্তর্জাতিক হলেও পেশাদারিত্বের মান ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। এই আসরে শুধুমাত্র ভদ্র সমাজের শৌখিন এবং অপেশাদার খেলোয়াড়রাই অংশগ্রহণ করতে পারতেন। তবে ১৮৯৬ সালে গ্রীসে অনুষ্ঠিত প্রথম আধুনিক অলিম্পিক ছিল লিভারপুলে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকের প্রায় হুবহু অনুরূপ। ১৮৬৬ সালে গ্রেট ব্রিটেনের লন্ডন ক্রিস্টাল প্যালেসে একটি জাতীয় অলিম্পিক গেমসের আয়োজন করা হয়েছিল। (আগামীকাল পড়–ন ২য় পর্ব)