মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩০ পূর্বাহ্ন

আধুনিক অলিম্পিক ইতিকথা- ২য় পর্ব

মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ :
  • Update Time : শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৪
  • ৮৯ Time View

৭৭৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শুরু হয়ে টানা ১৩শ’ বছর চলা প্রাচীন অলিম্পিক একটা সময় চলে যায় হিমঘরে। দীর্ঘ বিরতির পর আবার আবির্ভূত হয় আধুনিক রূপে। অলিম্পিকের এই নব পথ পরিক্রমা নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক বিশেষ আয়োজনে আজ থাকছে ২য় পর্ব…

পূর্বে প্রকাশের পর
১৬১২ সালে ‘কোটসউল্ড গেমস’ আয়োজনের মধ্যদিয়ে ব্রিটিশ আইনজীবী রবার্ট ডোভার যে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার শুরু করে ছিলেন গ্রীকরা তাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যায়।

অলিম্পিক পূনর্জাগরণে গ্রীক উদ্যোগ : ১৮২১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে অটোমান সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই গ্রীকরা অলিম্পিক গেমসকে পূনর্জীবিত করার চিন্তাভাবনা করে আসছিল। অলিম্পিকের এই পূনর্জাগরণের স্বপ্নদ্রষ্টা হলেন প্যানাজিওটিস সটসস, যিনি ছিলেন একাধারে কবি ও সংবাদপত্রের সম্পাদক। ১৮৩৩ সালে ‘ডায়ালগ অফ দ্য ডেড’ নামে একটি কবিতায় তাঁর এই চিন্তা তুলে ধরেন। পরবর্তীতে ইভাঞ্জেলোস জ্যাপ্পাস নামের এক বিত্তশালী এবং লোকহিতৈষী ব্যক্তি গ্রিসের রাজা অট্টোকে একটি চিঠির মাধ্যমে অলিম্পিক গেমস পুনরায় স্থায়ী ভাবে চালু করার জন্য একটি তহবিল গঠনে সহায়তা করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

১৮৫৯ সালে ইভাঞ্জেলোস জ্যাপ্পাসের পৃষ্ঠপোষকতাতেই অ্যাথেন্সের সিটি স্কয়ারে প্রাচীন অলিম্পিকের আদলে গেমস অনুষ্ঠিত হয়। তাতে অটোমান সাম্রাজ্য এবং গ্রীসের ক্রীড়াবিদেরা অংশগ্রহণ করেছিল। এছাড়াও তিনি তার অর্থ দিয়ে একটি স্টেডিয়ামও সংস্কার করে দেন যাতে করে ভবিষ্যতের আসরগুলো নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হতে পারে।
ইভাঞ্জেলোস জ্যাপ্পাসের সংস্কারকৃত স্টেডিয়ামে ১৮৭০ এবং ১৮৭৫ সালের অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয়।

১৮৭০ সালের অলিম্পিকে প্রায় তিরিশ হাজার দর্শক উপস্থিত হয়, তবে ১৮৭৫ সালে কত দর্শক হয়েছিল তার প্রামান্য তথ্য পাওয়া যায়নি। ১৮৯০ সালের ওয়েনলক অলিম্পিয়ান সোসাইটির অলিম্পিয়ান গেমস দেখে ব্যারন পিয়ের দ্য কুবেরত্যাঁ আন্তর্জাতিক অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠার অনুপ্রেরণা পান। তিনি ব্রুকসের সাথে এমন একটি অলিম্পিক কমিটি গঠনের পরিকল্পনা করেন যা প্রত্যেক চার বছর পর পর বিভিন্ন দেশে অলিম্পিক গেমসের আয়োজন করবে।

ব্যারন পিয়েরে ডি কুবেরত্যাঁ : ব্রিটিশ আইনজীবী রবার্ট ডোভার, জন হুলি এবং চার্লস মিলির পাশাপাশি গ্রীক কবি প্যানাজিওটিস সটসস আধুনিক অলিম্পিককে অনেকটাই এগিয়ে নেন। তাদের সাথে যুক্ত হয় গ্রীক ধনাঢ্য ইভাঞ্জেলোস জ্যাপ্পাসের আর্থিক সহযোগিতা। তার পরও কোথাও যেন একটা ঘাটতি থেকেই যাচ্ছিল আধুনিক অলিম্পিককে প্রাতিষ্ঠানিক ও আনুষ্ঠানিক রূপ দেয়ার। সেই ঘাটতিটুকু দূরভিত করে অলিম্পিককে আজকের দুনিয়ায় ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’-এ রূপ দেন ফরাসি শিক্ষাবিদ ব্যারন ডি কুবেরত্যাঁ। তিনি দুঃখের সাথে লক্ষ্য করেন, ইউরোপ-আমেরিকার বড় বড় শহরগুলোতে বাণিজ্য মেলা কিম্বা সার্কাসের অংশ হিসেবে ক্রীড়া প্রতিযোগিতাগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাতে ক্রীড়ার স্বাতন্ত্রতা যেমন ছিল না, তেমনি প্রাচীন অলিম্পিককে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আন্তঃরাষ্ট্র সম্পর্কও ছিল অনুপস্থিত।

তাই তিনি অনেক ভেবে-চিন্তে উদ্যোগ নিলেন ক্রীড়াকে কেন্দ্র করে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একটা মহা-মিলন মেলার আয়োজন করতে। সে লক্ষ্যে পিয়ের ডি কুবেরত্যাঁ ১৮৯৪ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠা করেন আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (International Olympic Committee) বা আইওসি। প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন দিমেত্রিওস ভাইকেলাস। আইওসি’র সদর দপ্তর স্থাপিত হয় সুইজারলেন্ডে।

ব্যারন ডি কুবের্ত্যা ১৮৯৬ থেকে ১৯২৫ সাল পর্যন্ত আইওসি’র সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে তিনি আধুনিক গেমসে আদি অলিম্পিকের স্পর্শ বিদ্যমান রাখতে হেঁটেছেন এ্যাথেন্সের পথে প্রান্তরে। চোখ বুলিয়েছেন কুড়িয়ে পাওয়া প্রত্নতত্ত্বের ধ্বংসাবশেষে। সচেষ্ট থেকেছেন প্রাচীন অলিম্পিকের ঐতিহ্য এবং আবেগকে ধারণ করতে। তাই তিনি একে একে অলিম্পিক মশাল, মার্চপাস্ট, পতাকা, মূলমন্ত্র, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, অলিম্পিক রিং, সঙ্গীত নিয়ে ব্যাপকভাবে কাজ করেছেন।

তবে প্রথম অলিম্পিক গেমসে এগুলোর অনেক কিছুই ছিল অনুপস্থিত। অলিম্পিক স্পিরিট বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে কুবেরত্যাঁ তার বিখ্যাত উক্তি করেন ‘জয় পরাজয় বড় কথা নয়, অংশ গ্রহণ করাই বড় কথা’।

(আগামীকাল পড়ুন ৩য় পর্ব)

আপডেট সংবাদ পেতে শতাব্দীর কন্ঠ পড়ুন, শেয়ার করে সাথে থাকুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
All rights reserved © Shatabdir Kantha . Developed by SDTT Academy & Tech Liberty