মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৪ পূর্বাহ্ন

আধুনিক অলিম্পিক ইতিকথা- ৫ম পর্ব

মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ
  • Update Time : সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৪
  • ৮২ Time View

৭৭৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শুরু হয়ে টানা ১৩শ’ বছর চলা প্রাচীন অলিম্পিক একটা সময় চলে যায় হিমঘরে। দীর্ঘ বিরতির পর আবার আবির্ভূত হয় আধুনিক রূপে। অলিম্পিকের এই নব পথ পরিক্রমা নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক বিশেষ আয়োজনে আজ থাকছে ৫ম পর্ব…

পূর্বে প্রকাশের পর
মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ : ১০ দিন ব্যাপী প্রথম অলিম্পিক গেমসের সমাপ্তি ঘটে গ্রেরিয়ন ক্যালেন্ডারের ১৮৯৬ সালের ১৫ এপ্রিল তারিখে (জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে ২ এপ্রিল ১৮৯৬)। প্রাচীন অলিম্পিকের রীতি মেনে আধুনিক অলিম্পিকেও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ মার্চপাস্ট এবং মশাল প্রজ্জ্বলন করা হয়। প্রাচীন অলিম্পিকে এথেন্সের এথেনার মূর্তির পাদদেশে গেমসের মশাল জ্বালানো হতো, আধুনিক গেমসও একই রীতি মানা হয়।

প্রথমবারের আয়োজন সফল হওয়ায় গেমসকে আরও সমৃদ্ধ করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যান কুবার্টিন। পরবর্তী প্রতিটি আসরেই তিনি কিছু না কিছু যুক্ত করতে থাকেন। ফলে পর্যায়ক্রমে অলিম্পিক পতাকা, অলিম্পিক থিম, রিং, লোগো, সঙ্গীত ইত্যাদি যুক্ত হতে থাকে। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি এসকল বিষয়কে নিজস্ব সম্পত্তি এবং আইকন হিসেবে গণ্য করে।

অলিম্পিক পতাকা : ব্যারন পিয়েরে দ্য কুবার্টিনের নির্দেশনায় ১৯১৩ সালে তৈরি হয় প্রথম অলিম্পিক পতাকা। ১৯১৪ সালে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায় অনুষ্ঠিত প্যান-ইজিপ্টিয়ান গেমসে প্রথমবারের মতো উত্তোলিত হয় এই পতাকা। পতাকায় ব্যবহৃত লাল, নীল, হলুদ, কালো এবং সবুজ রং পাঁচটি মহাদেশের প্রতিনিত্ব করে। পরবর্তীতে এই পতাকাকে আরও শানিত করা হয়।

অ্যান্টওয়ার্প পতাকা : অলিম্পিক গেমসের সর্বজনীনতা নির্দেশক পাঁচটি রিং সহ অলিম্পিক পতাকার আধুনিক সংস্করণটি ১৯২০ সালে বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্পে অনুষ্ঠিত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উত্তোলন করা হয়। যা ‘অ্যান্টিওয়ার্প পতাকা’ নামে খ্যাত। তবে গেমস শেষে পতাকাটি আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই ১৯২৪ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক আয়োজকদের হাতে হস্তান্তরের জন্য একটি নতুন অলিম্পিক পতাকা তৈরি করতে হয়েছিল।

এটি অ্যান্টওয়ার্প পতাকার স্থলে প্রতিস্থাপিত হওয়া সত্তে¡ও আইওসি আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও এটিকে ‘প্যারিস পতাকা’র পরিবর্তে ‘অ্যান্টওয়ার্প পতাকা’ বলে ডাকে। এই পতাকাটি গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের পাশাপাশি ১৯৫২ সালে অসলোতে অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিক পর্যন্ত হস্তান্তরিত হয়েছিল। অবশ্য পরবর্তীতে শীতকালীন অলিম্পিকের জন্য আলাদা পতাকা তৈরি করা হয়। ‘প্যারিস-১৯২৪’ পতাকাটি ‘১৯৮৮ সিউল গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক’ গেমস পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়ে ছিল।

অসলো পতাকা : ‘অসলো পতাকা’টি ১৯৫২ সালে নরওয়ের অসলোতে হওয়া শীতকালীন অলিম্পিকের সময় অসলোর মেয়র আইওসি’কে দিয়ে ছিলেন। ১৯৫২ থেকে ২০১৪’র পর্যন্ত পতাকাটি শীতকালীন অলিম্পিকের পরবর্তী আয়োজক শহরে পাঠানো হয়েছিল। ২০১৪ সালে সোচি’তে হওয়া শীতকালীন অলিম্পিকে ‘অসলো পতাকা’ শেষবার উত্তোলিত হয়। বর্তমানে ‘আসল অসলো’ পতাকাটি বিশেষ ভাবে সংরক্ষিত আছে।

সিউল পতাকা : ১৯৮৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে হওয়া গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে অ্যান্টওয়ার্প পতাকার উত্তরসূরি হিসেবে আর্বিভ’ত হয় ‘সিউল পতাকা’। ‘লন্ডন-২০১২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক’ পর্যন্ত ‘সিউল পতাকা’ ব্যবহৃত হয়ে ছিল। অবশ্য ২০১৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিকে ‘সিউল পতাকা’র ব্যবহার হয় এবং পরবর্তী শীতকালীন অলিম্পিক শহরে পাঠানো হয়।
রিও ডি জেনেরিও পতাকা : ২০১৬ সালে ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনেরিও শহরে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকে সিউল পতাকা’র স্থান দখল করে ‘রিও ডি জেনেরিও পতাকা’

সিঙ্গাপুর পতাকা : ২০১০ সালের প্রথম ‘যুব অলিম্পিক গেমস’ উপলক্ষে জন্ম হয় ‘সিঙ্গাপুর পতাকা’র। মূল অলিম্পিক পতাকার অনুরূপ হলেও কিছুটা ভিন্ন। এই পতাকায় আয়োজক শহর এবং বছর উল্লেখ থাকে। ‘সিঙ্গাপুর পতাকা’ প্রথম উত্তোলণ করেন আইওসি’র তৎকালীন হয় প্রেসিডেন্ট জ্যাক রগে। ২০১০ সালের ২৬ আগস্ট গেমসের সমাপনী অনুষ্ঠানে যুব অলিম্পিকের পরবর্তী আয়োজক ‘নানজিং ২০১৪’- এর কমিটির নিকট সিঙ্গাপুরের কর্মকর্তারা হস্তান্তর করেন এই পতাকা।

ইন্সব্রুক পতাকা : প্রথম ‘শীতকালীন যুব অলিম্পিক গেমস’ অনুষ্ঠিত হয় অস্ট্রিয়ার ইন্সব্রুক শহরে ২০১২ সালে। এই গেমসে ব্যবহৃত পতাকা ‘ইন্সব্রুক পতাকা’ নামে খ্যাত। তারপর থেকে এই পতাকাটি শীতকালীন যুব অলিম্পিক গেমসে ব্যবহার হচ্ছে।

অ্যান্টওয়ার্প পতাকা রহস্য উদ্ঘাটন : ১৯৯৬ সালে মার্কিন মুল্লুকের আটলান্টা শহরে বসে অলিম্পিক গেমসের ২৩তম আসর। আর ১৯৯৭ সালে মার্কিন অলিম্পিক কমিটি স্বর্ণযুগের মার্কিন অলিম্পিক বিজয়ীদের নিয়ে আয়োজন করে এক ভোজসভার। সেই সভায় ‘অ্যান্টওয়ার্প অলিম্পিক-১৯২০’ বিজয়ী ইউএস দলের সদস্য হ্যাল হাইগ প্রিস্ট সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে অভাবনীয় এক তথ্য দিয়ে বসেন।

প্ল্যাটফর্ম ডাইভিংয়ে ব্রোঞ্জ পদক জয়ী প্রিস্ট বলেন- ওআইসি ঐ অলিম্পিক গেমসে ব্যবহৃত আসল ‘অ্যান্টওয়ার্প পতাকা’ খুঁজে পাইনি, আমি এ ব্যাপারে আপনাকে সাহায্য করতে পারি, এটা আমার স্যুটকেসে আছে। ‘অ্যান্টওয়ার্প অলিম্পিক ১৯২০’ শেষে সতীর্থ ডিউক কাহানামোকু দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আমি অলিম্পিক পতাকা চুরি করি। ৭৭ বছর ধরে পতাকাটি আমার স্যুটকেসের নীচে সংরক্ষণ করে রেখেছি।

‘সিডনি অলিম্পিক গেমস-২০০০’-এ একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে ১০৩ বছর বয়সে প্রিস্টের দ্বারা পতাকাটি আইওসি’তে ফেরত দেওয়া হয়েছিল। আসল অ্যান্টওয়ার্প পতাকাটি সুইজারল্যান্ডের লুসানে অলিম্পিক মিউজিয়ামে প্রদর্শন করা হয়েছে। পতাকা দানের জন্য প্রিস্টকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি ফলক রয়েছে। পতাকাটি ২০০৪ সালে অ্যান্টওয়ার্পে ফিরে আসে এবং ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পতাকাটি অ্যান্টওয়ার্পের সিটি হলের প্রবেশদ্বার হলে সংরক্ষিত হয়।

উল্লেখ্য যে, ২০১৩ সালে অ্যান্টওয়ার্প ‘ইউরোপীয় ক্রীড়া রাজধানী’ উপাধি লাভ করে। তবে ২০১৭ সালে টাউন হলের সংস্কারের কারণে পতাকাটি গঅঝ-এর সংগ্রহে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। যদিও অনেক সমালোচক এবং ইতিহাসবিদরা মনে করেন- প্রিস্টের ফিরিয়ে দেওয়া পতাকার চেয়ে অনেক বড় ছিল অ্যান্টওয়াপ পতাকা। (আগামীকাল পড়ুন ৬ষ্ঠ পর্ব)

আপডেট সংবাদ পেতে শতাব্দীর কন্ঠ পড়ুন, শেয়ার করে সাথে থাকুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
All rights reserved © Shatabdir Kantha . Developed by SDTT Academy & Tech Liberty