মুহিব্বুল্লাহ বচ্চন, পাকুন্দিয়া প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় আলু বীজের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বাড়তি দাম দিয়েও আলু বীজ কিনতে পারছেনা কৃষক। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে বাজারে সব ধরনের আলু বীজের দাম বৃদ্ধি ও সংকট থাকায় এখানকার হাজরো কৃষক বিপাকে পরেছেন।
এছাড়াও গত বছরের তুলনায় বাজারে সব ধরনের সার ও কীটনাশকের দাম বেড়ে গেছে। এতে আলুর উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সামনের বছর ভোক্তা পর্যায়ে আলুর দাম অনেক বেশী থাকবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার অন্য দেশ থেকে আলু আমদানি করলে লোকসান গুনতে হবে কৃষকদের।
সরেজমিনে পৌর সদর সহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভাল জাতের বক্স আলু প্রকাশ্যে পাওয়া যাচ্ছেনা, যারা পাচ্ছেন তারা কয়েক গুণ বেশি দামে ক্রয় করছেন। নেদারল্যান্ড থেকে আমদানীকৃত (বীজ সংরক্ষণ) আলু বীজ (৫০ কেজী) প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। গত বছর যার দাম ছিল ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা, ডায়মন্ড জাতের আলু বীজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৪৫০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা।
বিগত বছর দাম ছিল ২৭০০ থেকে ৩০০০ টাকা, বগুরা লাল আলু বীজ ৩৫০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ছিল ২০০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা। এছাড়াও কৃষিতে ব্যবহৃত সব ধরনের সার-কীটনাশক বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
জানা যায়, এ উপজেলার মাটি আলু চাষের জন্য বেশ উপযোগী তাই দিন দিনেই আলুর আবাদ বাড়ছে।পৌর সদর সহ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নেই কম বেশী আলুর আবাদ হয়ে থাকে ,আমন ধান কাটার পর পরই আলু রোপনের জন্য কৃষক জমিতে কাজ শুরু করেনে। আলু রোপনের পূর্বে জমিতে প্রচুর সার ব্যাবহার করতে হয়।
এ উপজেলায় বছরে ১৩২০ হেক্ট্রর জমিতে আলুর আবাদ হয়ে থাকে ।যা থেকে প্রায় ২৬ হাজার মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়। এখানকার উৎপাদিত আলু এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি হয়।
এ অঞ্চলের কৃষক ডায়মন্ড জাতের আলুর আবাদ বেশি করে থাকেন। বগুড়া লাল গুটি জাতের আলুর আবাদও হয়। এ ছাড়াও আগাম জাতের আলু বারী-৭২ ও স্পীড আলুর আবাদ হয়ে থাকে।
আগাম আলু ৬০ থেকে ৬৫ দিনেই খাবার উপযোগী হয়। ভাল ভাবে পরিচর্যা করলে প্রতি বিঘা (৩৫ শতক) জমিতে ১০০-১২০ মণ আলু উৎপাদন হয়। বীজ আলুর আবাদও এখানকার কৃষক করে থাকে। এ অঞ্চলে আলু সংরক্ষণের জন্য সরকারি, বেসরকারি ৩টি কোল্ড ষ্টোর রয়েছে।
আলু চাষি উপজেলার তারাকান্দি গ্রামের মুছলেহ উদ্দীন জানান, এ বছর সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আলু চাষ করছেন, অস্বাভাবিক ভাবে বীজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কি করবেন ভেবে উঠতে পারছেননা। আলু চাষের জন্য সার, কীটনাশক ও চড়া মূল্যে কিনতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাবে। ফলনের পর ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন এ চাষি।
বিএডিসির ডিলার মোঃ এরফান উদ্দীন জানান, ভাল মানের বীজের সংকট রয়েছে, আগের বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বাড়তি দাম দিয়েও বীজ পাওয়া যাচ্ছেনা। পাশাপাশি সব ধরনের বীজ-সার, কীটনাশকের দাম আগের বছরের তুলনায় বেশি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নূর-ই-আলম জানান, উপজেলা প্রশাসন আলু বীজ নিয়ে কারসাজি রোধে কাজ করছে। এজন্য কৃষকদের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। কোথাও আলুবীজের অতিরিক্ত দাম চাওয়া হলে, উপজেলা প্রশাসনকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।