শতাব্দী ডেস্ক : প্রায় তিন মাসের মধ্যে ইউক্রেনে বৃহত্তম বিমান হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। গতকাল রোববার এই হামলায় ১২০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ৯০টি ড্রোন নিক্ষেপ করেছে দেশটি। এতে একাধিক স্থানে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। ‘গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে বিদ্যুৎব্যবস্থা। ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে। ২০২২ সালের ফেব্রæয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার দেশটির জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা করেছে দেশটি।
বিদ্যুৎ অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করে রাশিয়ার হামলার কারণে চলতি শীতেও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ইউক্রেনীয়রা। কয়েক সপ্তাহ ধরেই সে প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন তারা। এর মধ্যেই বিদ্যুৎ সুবিধায় রুশ হামলার ঘটনা ঘটলো। বিদুৎ অবকাঠোমোতে হামলার ফলে অসংখ্য অঞ্চলে জরুরীভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমাতে বাধ্য বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
চলতি মাসের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের পরই এ ধরণের হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। নির্বাচনি প্রচারণায় বারবার ট্রাম্প এই যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে কীভাবে তিনি সেটি করবেন তা স্পষ্ট করেননি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা লিখেছেন, ‘রাশিয়া সবচেয়ে বড় বিমান হামলার একটি শুরু করেছে।
শান্তিপূর্ণ শহর, ঘুমন্ত বেসামরিক, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ওপর ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র’ হামলা করছে দেশটি। এদিন রাতে রাজধানী কিয়েভে বিমান প্রতিরক্ষামূলক ড্রোনের আওয়াজ শোনা যায় এবং সকালেই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়। এ সময় শহরের কেন্দ্রজুড়ে একের পর এক শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে।
এ বিষয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ইউক্রেনের বৃহত্তম বেসরকারি জ্বালানি সরবরাহকারী ডিটিইকে-এর সিইও ম্যাক্সিম টিমচেনকো বলেছেন, ‘ডিটিইকে বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ ইউক্রেনের শক্তি ব্যবস্থার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।
এই আক্রমণগুলো আবারও আমাদের মিত্রদের কাছ থেকে ইউক্রেনের অতিরিক্ত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।’ বিদ্যুৎকেন্দ্রে বারবার রুশ হামলার পর কর্মকর্তারা খুব কমই শক্তি অবকাঠামোর অবস্থাও হামলার ফলাফল নিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে থাকেন।
‘গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর’ ক্ষতি হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন কর্মকর্তারা। তারা পশ্চিমে ভলিন, রিভনে, লভিভ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব ডিনিপ্রপেট্রোভস্ক ও জাপোরিঝিয়ার বিস্তৃত অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর দিয়েছেন। পিটিইকে জ্বালানি কর্মকর্তাদের নির্দেশে দক্ষিণ ওডেসা অঞ্চলে জরুরি বিদ্যুৎবিভ্রাট আরোপ করেছে কর্তৃপক্ষ।
প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের সব অঞ্চলকে লক্ষ্য করে ব্যাপক সম্মিলিত হামলা’ হয়েছে। গভর্নর বলেছেন, দক্ষিণে মাইকোলাইভে রাতারাতি ড্রোন হামলায় দুইজন নিহত হয়েছেন। রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ডিনিপ্রোপেট্রোভস্ক অঞ্চলে একটি রেল ডিপোতে হামলায় আরও দুইজন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন।
পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী লভিভ অঞ্চলে একটি গাড়িতে থাকা এক নারী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন গভর্নর। ওডেসা অঞ্চলে আরও দুইজন নিহত হয়েছেন। টেলিগ্রামে কিয়েভের কর্মকর্তারা বলেছেন, ধ্বংসাবশেষ পড়ে শহরটির একটি আবাসিক ভবনের ছাদে আগুন লেগে অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন।