এফএনএস: কুষ্টিয়ায় এক মাসে ২ জন বাউলের আখড়া উচ্ছেদ করেছে দুর্বৃত্তরা। চলতি মাসের ৮ তারিখে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আহম্মদপুর গ্রামে বাউল নিশানের আখড়া বাড়ি এবং গত ২৬ জুন সদর উপজেলার টাকিমারা গ্রামে মসজিদে মাইকিং করে বৃদ্ধা বাউল চায়না বেগমের বাড়িঘর ভাঙচুর করে তাকে উচ্ছেদ করেছে স্থানীয় মৌলবাদীরা। এসব হামলা-ভাঙচুর, উচ্ছেদের ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
উল্টো ভাঙচুরের শিকার হওয়া এক বাউলকে গ্রেপ্তারও করেছিল পুলিশ। জানা গেছে, চলতি মাসের ৮ তারিখে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আহম্মদপুর গ্রামে বাউল নিশানের আখড়া বাড়ি উচ্ছেদ করা হয়। চাচাতো ভাইদের সঙ্গে দ্ব›েদ্বর জেরে নিশানের আখড়াবাড়ি ভেঙে জিকে ক্যানেলে ফেলে দেয় দুর্বৃত্তরা। ঘর ভেঙে গাছ কেটে নিশানের বাড়ি পুরোপুরি উচ্ছেদ করেছে তারা। কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘নিশান সরকারি জায়গায় ঘর বানিয়ে আখড়া করেছিলো।
যারা আখড়াটি ভেঙে দিয়েছে তারা আগের দিন নিশানসহ তার চাচাতো ভাইদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলো। সেই মামলাতেই ডিবি পুলিশ নিশানকে গ্রেপ্তার করা হয়ছিল।’ বাউল নিশান জানান, তিনি আবাসস্থল থেকে ১ কিলোমিটার দূরে আখড়া বানিয়ে সেখানে সাধুসঙ্গ করতেন। সমাজপতিদের সঙ্গে তার কোনো দ্বন্দ্ব নেই। দুর্বৃত্তরা রাতের অন্ধকারে তার আখড়া বাড়ি ভেঙে জিকে ক্যানালে ফেলে দিয়েছে।
বাউল নিশান আরও জানান, তার আখড়ায় হামলা করার আগে হামলাকারীরা তারই বিরুদ্ধে থানায় যে মামলা করেছিল সেটা তিনি জানতেন না। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথও জানান, নিশানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিলো সেটা তার জানা ছিলো না। যেহেতু তিনি ফৌজদারি মামলার আসামি তাই তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিলো। গ্রেপ্তারের সময় আখাড়াবাড়িতে হামলার ঘটনা পুলিশ জানতো না।
এছাড়া বাউল নিশানও কোনো মামলা বা অভিযোগ করেননি বলে পুলিশ জানিয়েছে। এদিকে, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার টাকিমারা গ্রামে মসজিদে মাইকিং করে স্থানীয় বৃদ্ধা বাউল চায়না বেগমে বাড়িঘর ভাঙচুর করে তাকে উচ্ছেদ করেছে স্থানীয় মৌলবাদীরা। বাউল চায়না বেগম জানান, তার স্বামী ও তিনি লালন অনুসারী।
তিনি টাকিমারা গ্রামে নিজের জমির ওপরে আখড়া বানিয়ে বসবাস করে আসছেন। স্বামীর মৃত্যুর পরে আখড়াতে তাকে সমাহিত করা হয়। কিন্তু গত ২৬ জুন বুধবার সকাল ৬টার দিকে তার আখড়া বাড়ি ভেঙে দেন স্থানীয় মৌলবাদীরা। সা¤প্রদায়িক ওই গোষ্ঠি শুধু তার বাড়ি ভেঙে থেমে থাকেনি।
গাছপালা কেটে প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিও করেছে বলেও জানান তিনি। কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা জানান, অভিযোগ পেয়েছি, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া করা হবে। কুষ্টিয়া ভাবনগর শিল্প ও সাহিত্য চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি হবিবর রহমান বিশু বলেন, ‘হঠাৎ করে কুষ্টিয়ায় বাউলদের ওপর হামলা মামলার ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনও নীরব, যা উদ্বেগজনক।’