প্রতিনিধি, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) ফজলুল হক জোয়ারদার আলমগীর : কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে মো.শাহীন মিয়া (৩৫) নামে এক যুবককে পরিকল্পিত ভাবে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় নিহত শাহীনের দ্বিতীয় স্ত্রী ঝুমুর আক্তার উরফে ঝর্ণাকে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোররাত সাড়ে ৩িটার দিকে কটিয়াদী পৌর সভার পশ্চিমপাড়া মহল্লায়। নিহত শাহীন উপজেলার আচমিতা ইউনিয়নের পাইকশা গ্রামের মো. তৈয়ব উদ্দিনের একমাত্র ছেলে।
জানা যায়, শাহীন মিয়া তিন কন্যা সন্তানের জনক। এক বছর পূর্বে কটিয়াদী পশ্চিমপাড়া মহল্লার আবুল হোসেনের মেয়ে দুই সন্তানের জননী ঝর্ণাকে ঘটনাক্রমে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। দ্বিতীয় বিয়ের করার পর থেকেই পশ্চিমপাড়া মহল্লায় স্ত্রী ঝর্নার বাবার বাড়ির পাশে ভাড়াবাসা সৌদিয়া ভবনের পাঁচতলায় শাহীন বসবাস করতেন। দু’জনেই স্থানীয় একটি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে চাকরি করেতেন। দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে প্রথম স্ত্রী ও পিতা-মাতার সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটে শাহীনের।
প্রথম স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া সন্তানদেরকে নিয়ে কামারকোনা মহল্লায় পৃথক বাসায় থাকতেন। শাহীন মাঝে মধ্যে সন্তানদেরকে দেখার জন্য প্রথম স্ত্রীর বাসায় যেতো। বুধবার সন্ধ্যায় সন্তানদেরকে দেখার জন্য প্রথম স্ত্রীর বাসায় গিয়েছিল শাহীন। প্রথম স্ত্রী সুলতানা রাজিয়ার বাসায় দেখা করতে যাওয়ার সংবাদ পেয়ে ঝর্ণা তার স্বামী শহীনের সাথে ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয়।
স্বামীকে শায়েস্তা করতে গভীর রাতে চেতনানাশক দ্রব্য সেবন করালে শাহীন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন ঝর্ণা তার মাকে সংবাদ দেয়। মা বাসার মালিক শাহ আলমকে ডেকে আনেন। শাহ আলম এসে কি হয়েছে জানতে চাইলে তারা জানান, জামাই শাহীন রাতে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে হাসপাতালে নিতে হবে। শুনে শাহ আলমসহ ঝর্ণার মা’র সাথে পাঁচতলায় যান।
বাড়িওয়ালা শাহ আলম জানান, পাঁচতলায় শাহীনকে ফ্লোরে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পাশে তার স্ত্রী ঝর্না বসে আছে। পরে মা-মেয়ে মিলে শাহীনকে তুলে কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মেহেদী হাসান জানান, ভোর ৫টায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তখন ইসিজি এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া যায় বেশ কিছুক্ষণ আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
পরিবারের লোকজন শাহীনকে পরিকল্পিত ভাবে নির্যাতনের পর হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন।
দ্বিতীয় স্ত্রী ঝর্ণা আক্তার স্বামী আত্মহত্যা করেছে বলে দাবী করলেও প্রথম স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া ও শাহীনের পিতা মাতা ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যাকাÐ বলে দাবি করেন। তারা সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
শাহীনের পিতা মো. তৈয়ব উদ্দিন জানান, শাহীন তার স্ত্রী ও তিন সন্তান রেখে আবারও বিয়ে করায় আমাদের সাথে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তবে ছেলে প্রায় সময়ই তার মাকে বলতো ঝর্ণা তার বন্ধু ও স্বজনদের নিয়ে তাকে নির্যাতন করতো। এতে সে মানসিকভাবে অনেকটা বিপর্যস্ত হয়ে গত কিছুদিন পূর্বে বিদেশ যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করে। কিন্তু ঝর্ণা বিষয়টি স্বাভাবিক ভাবে মেনে নেয়নি।
কটিয়াদী মডেল থানার অফিসার ইন চার্জ মো.তরিকুল ইসলাম জানান, শাহীনের লাশ হাসপাতাল থেকে নিয়ে সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। স্ত্রী ঝুমুর উরফে ঝর্ণাকে আটক করা হয়েছে। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।