প্রতিনিধি, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) এম এ কুদ্দুছ : কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নে আমন খেতে ইঁদুরের উপদ্রব বেড়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষক ফসল রক্ষা করার জন্য আমন ক্ষেতে কলার গাছ, বাঁশে কনচির ওপরে প্লাস্টিক বেঁধে দিচ্ছেন।
কেউ বা কলার গাছের শুকনো অংশ আমন খেতে ব্যবহার করছেন। আবার কোনো কৃষক সন্ধ্যায় ইঁদুরের কাঁটা ধানের নিকট বিভিন্ন উপকরণে বিষ প্রয়োগ করছেন। এতেও ফসল রক্ষা করতে পারছেন না কৃষক।
rকটিয়াদী উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১২ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে। চাষ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৯৯০ হেক্টরে।
উপজেলার বীরনোয়াকান্দী গ্রামের সোহেল মিয়া বলেন, আমার আমন ধানের জমিতে ইঁদুরের আক্রমণ হয়েছে। অনেক প্রকার বিষ প্রয়োগ করে ইঁদুর দমন করা যাচ্ছে না। প্রতি রাতেই ইঁদুর এসে আমন ধান কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। ধান কাটার কারণে ওই ধান শুকিয়ে লাল হয়ে যাচ্ছে।
এভাবে ইঁদুরে ধান কেটে ফেলায় ক্ষতির সম্মখিন হচ্ছি। একই এলাকার কৃষক সাজ্জাদ বলেন, ইঁদুর দমনের জন্য জমিতে বিষসহ অনেক উপকরণ দেওয়া হয়েছে তাতেও কাজ হয় না। জমিতে পানি থাকার পরও দিন দিন ইঁদুরের উপদ্রব বাড়ছে। দিনের বেলায় ইঁদুর জঙ্গলে এবং গাছে উঠে যায়। রাত হলেই নেমে আসে ধানক্ষেতে।
চাষি সাইফুল ইসলাম জানান, চলতি আমন মৌসুমে ১৪৮ শতক জমিতে ধানের আবাদ করেছি। আবাদ করতে গিয়ে বীজতলা তৈরি, ক্ষেত চাষ দেওয়া, সার, সেচ, শ্রমিকদের মজুরিসহ প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই ধান ঘরে তোলার কথা। কিন্তু এর মধ্যে ইঁদুরে ধানের গাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে।
কীটনাশক বিষ দিয়েও ইঁদুরকে থামানো যাচ্ছে না। তাই ফলন ভালো হলেও ঘরে সম্পূর্ণ ধান তুলতে না পারার শঙ্কায় আছি।
মুমুরদিয়া গ্রামের কৃষক মজিবুর রহমান বলেন, ‘মৌসুমের মাঝামাঝিতে পোকার আক্রমণ শুরু হয়েছিল, কীটনাশক দিয়ে তা দমন করা গেছে। এখন ধানক্ষেতে ইঁদুর এসে গাছ কেটে নষ্ট করায় চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। তবে এ বিষয়ে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শ কাজে আসছে না।’
কটিয়াদী উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ইঁদুর দমনের জন্য কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ধান ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণ নির্ভর করে বৃষ্টি ও সেচ সুবিধাযুক্ত জমির উপর। সাধারণত ইদুরের কারণে ফসল কাটার পূর্বে গড়ে শতকরা ৫-১৭ ভাগ ক্ষতি হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় জলী আমন ধান (শতকরা ৩২-৩৭ ভাগ)।
বিভিন্ন ধরনের ইঁদুরের মধ্যে কালো ইঁদুর, মাঠের বড় কালো ইঁদুর, নরম পশমযুক্ত মাঠের ইঁদুর ও ছোট লেজযুক্ত ইঁদুর ধানের ক্ষতি করে। এদের মধ্যে কালো ইঁদুর মাঠে ও গুদামে এবং মাঠের বড় কালো ইঁদুর নিচু জমিতে বেশি আক্রমণ করে।