প্রতিনিধি, কটিয়াদী, এম এ কুদ্দুছ : কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে বিভিন্ন হাটবাজারসহ যত্রতত্র ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে নিষিদ্ধ পলিথিন শপিংব্যাগ। আইনের তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্যেই বিক্রি ও ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। পাশাপাশি ব্যবহার হচ্ছে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক (ওয়ান টাইম) পণ্যও।
বছরের পর বছর পরিবেশে টিকে থেকে এসব প্লাস্টিক পণ্য জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের চরম ক্ষতি করে চলেছে। প্লাস্টিক দ‚ষণের নেতিবাচক প্রভাবও পড়ছে সামগ্রিক জীববৈচিত্র্যের ওপর। ফলে পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। পলিথিন ব্যবহারের ফলে রাস্তাঘাট, নদী, নালা, ড্রেন ও মাটির গর্তে আবর্জনায় ছড়িয়ে পড়ছে। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা হলেও মজুত ও ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, থার্মোকলে থাকে থার্মোপ্লাস্টিক যৌগ পলিস্টাইরিন। পলিস্টাইরিন ও ফেনিলিখিন পলিমারাইজেশনে পলিস্টাইরিন যৌগ তৈরি হয়। এটি হচ্ছে বিষ। পাশাপাশি ‘ওয়ান টাইম’ পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয় বিসফেনল এ’ ও ন রাসায়নিক। আর এসব রাসায়নিক খাবারের সঙ্গে প্রবেশ করে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট করছে।
জানা গেছে, ২০০২ সালে সরকার সব ধরনের পলিথিন শপিং ব্যাগ ব্যবহার সম্প‚র্ণ নিষিদ্ধ করে। এছাড়া উচ্চ আদালতও নিষিদ্ধ করেন পলিব্যাগ ও ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্য। একই সঙ্গে দেশব্যাপী নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ, পলিথিন কারখানা বন্ধ এবং যন্ত্রপাতি জব্দকরণের মাধ্যমে পলিব্যাগের ওপর আইনি নিষেধাজ্ঞার প‚র্ণ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে বলেন।
এই প্রজ্ঞাপন জারির পর কিছুদিন পলিব্যাগ ও ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার থমকে পড়লেও পুনরায় বিভিন্ন পন্থায় তা বাজারে চলে এসেছে। পলিব্যাগ উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও আইন বাস্তবায়নে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয় না। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো এই উপজেলার সর্বত্র পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এই পলিব্যাগ ও ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্য অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কটিয়াদী বাজারের কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী নিষিদ্ধ এই পলিব্যাগ ও ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্য মজুত করেন। পরে বিভিন্ন হাটবাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে পাইকারি দরে বিক্রি করেন। পলিব্যাগ ও ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের ফলে ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগ বিস্তার লাভ করতে পারে। এ অবস্থায় ‘ওয়ান টাইম’-এর বিকল্প হিসেবে কাগজ কিংবা পাটের তৈরি পণ্য ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছেন পরিবেশবিদরা।
বাংলাদেশ পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্টজনরা বলেন, আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় এবং প্রশাসনের গাফিলতির কারণে প্রকাশ্যে এভাবে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ ও ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের মাসিক সভায় কঠোর সিদ্ধান্ত নিলে অতিদ্রæত পলিথিন ব্যাগ ও ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব। পাশাপাশি এলাকার সচেতন ব্যক্তিদেরও এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তামারা তাসবিহা বলেন, ‘পলিথিন শপিং ব্যাগ বন্ধ করতে হলে প্রথমে যেখান থেকে উৎপাদন হচ্ছে সেখানে হাত দিতে হবে। তা ছাড়া জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সম‚লে পলিথিন ব্যাগ নির্ম‚ল করা সম্ভব নয়। তারপরও দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’ বলে তিনি জানান।