প্রতিনিধি, কটিয়াদী, মিয়া মোহাম্মদ ছিদ্দিক : কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ির পুকুর ঘাট সংলগ্ন রৌয়াডুবি বিল লাল শাপলা ফুলে রঙিন হয়ে ওঠেছে। জলের ওপর বিছানো থালার মতো গোলাকার সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে লম্বা ডগার উপর লাল শাপলা।
বিভিন্ন জায়গায় শাপলা চোখে পড়লেও কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মসুয়া বাজার সংলগ্ন রৌয়াডুবি বিলে ‘লাল শাপলা’র দৃশ্য যেন অপরূপ সৌন্দর্য্যরে এক বিশাল আয়োজন। সকাল বেলায় ফোঁটে থাকা লাল শাপলা দেখলে মনে হয় লালগালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে পুরো বিল জুড়ে। চোখ জুড়িয়ে যায় এই দৃশ্য দেখে।
রৌয়াডুবি বিলের পাড়ের ও মসুয়া গ্রামের বাসিন্দারা জানান, ‘মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে এই বিলে পদ্ম ফুলের গড় ছিল। প্রচুর পদ্মফুল ফুটতো। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে পদ্মফুল বিলীন হয়ে যায়। এরপর পুরো বিল জুড়ে প্রচুর সাদা শাপলা ফুটতে দেখা গেছে।
গত একদশক ধরে এই বিলে লাল শাপলা ফোঁটে। কয়েকদিন আগে কিছু লোক ভ্যানগাড়ি ভরে এই লাল শাপলা নিয়ে যেতে দেখেছি। পরবর্তীতে জেনেছি এই লাল শাপলা ঢাকায় বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা কয়েকজন মিলে বাধা দেই। বর্তমানে বিলের দুই পাশে পুকুর, জমি ও ঘর নির্মাণের কারণে রৌয়াডুবি বিল এখন জমি এবং পুকুরে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শাপলার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে দ‚র-দ‚রান্ত থেকে প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসছেন। দলবেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা স্মৃতি ধরে রাখতে মুহ‚র্তগুলো করে রাখছেন ক্যামেরাবন্দি।
দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক জলজ উদ্ভিদ প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। আগের মতো বিল-ঝিলের জৌলুসতা এখন নেই। এতে হারিয়ে যাচ্ছে শাপলা ও পদ্ম ফুলসহ আরও অনেক জলজ উদ্ভিদ।
উদ্ভিদবিদের মতে, পদ্মর সুবাস শাপলার চেয়ে তুলনাম‚লক বেশি। তবে দুটোই দু’ধরনের জাত। ফুল ও পাতা আলাদা। পদ্মফুল শাপলা ফুল থেকে আকারে বড়। অপরদিকে শাপলা ফুল আকারে ছোট। পাপড়িগুলো চিকন এবং লালচে রঙের। শ্রাবণ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত গ্রামীণ জনপদে শাপলা ও পদ্মর খোঁজ মেলে।
অস্কার বিজয়ী সত্যজিৎ রায়ের পৈত্রিক বাড়িটি দেখতে আসা তোফাজ্জল হোসেন জানান, আমরা একই সাথে দুইটির সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। লাল বর্ণের এই ফুল যে কারও নজর কাড়বে।
কটিয়াদী সদর ভোগপাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার কৃষি শিক্ষক মো. খাইরুল ইসলাম জানান, শ্রাবণ মাসে শাপলা ও পদ্ম ফুল ফোটে বলে একে ‘জলজ ফুলের রানি’ বলা হয়। জলজ উদ্ভিদ শাপলা ও পদ্ম প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদন হয়ে থাকে। গ্রামের মানুষের কাছে সবজি হিসেবেও খুব জনপ্রিয় ছিল এই শাপলা।
একসময় অনেকেই বিল থেকে শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। তবে বিল-ঝিল, জলাশয়, ডোবা ভরাট হওয়ায় অনেকটাই এগুলো বিলুপ্তির পথে।
স্থানীয় অনেকের ধারণা, নদী-নালা, খাল-বিল ও আবদ্ধ জলাশয় ভরাটের কারণে বিভিন্ন এলাকা থেকে এই জাতীয় ফুল শাপলা ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এছাড়াও অযত্নে, অবহেলা আর কৃষি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সংরক্ষণেও নেই কোনো উদ্যোগ।