প্রতিনিধি কটিয়াদী : কটিয়াদীর করগাঁও ইউনিয়নের ভাটা আমির গাজী ভূঁইয়ার ছেলে রাকিবুল হাসান। রাকিবুল হাসান (২৫) এসএসসি পাস করেন ২০১৭ সালে। দারিদ্র্যের কারণে পড়াশোনা এগোয়নি। কাজ নেন ঢাকার চানখারপুলের একটি প্যাকেজিংয়ের দোকানে। সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন কটিয়াদীর এই যুবক। প্ল্যাকার্ড হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও শাহবাগেও যান। সেখানেই ৫ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হন। ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে ঢাকার হাসপাতালে ব্যান্ডেজ করেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ফিরে আসেন বাড়িতে। কিন্তু রক্তক্ষরণজনিত সমস্যায় কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন রাকিবুল। তিনি আশা করছেন, আন্দোলনের সুফল পাবে জাতি।
রাকিবুল বলেন, চাকরির ফাঁকে ফাঁকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে যোগ দিতেন। যখন এক দফা ঘোষণা করা হলো, তখন ওই দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহবাগেও যান।
রাকিবুলের ভাষ্য, ৫ আগস্ট অবস্থা ছিল ভয়াবহ। পুলিশের সঙ্গে তখন ছাত্র-জনতার তুমুল সংঘর্ষ, মুহুর্মুহু গুলি চলছে। তখন চানখারপুলের রাস্তায় মিছিলে ছিলেন। দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ একটি গুলি এসে লাগে তাঁর কোমরের ডান পাশে। এক টুকরা মাংসপিন্ড নিয়ে গুলিটি বেরিয়ে যায়। তার পাশেই একজন মারা যান। ঢাকা মেডিকেলে যাওয়ারও সুযোগ ছিল না।
লোকজন তাঁকে নিয়ে যায় পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে। ওই হাসপাতাল ততক্ষণে লাশের পাশাপাশি আহত রোগীতে সয়লাব। ভর্তিরও পরিবেশ নেই। রাকিবুলকে জরুরি বিভাগে একটি ব্যান্ডেজ করে ছেড়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, বাসায় থেকে ড্রেসিং করাতে। সেখান থেকে রাকিবুল চানখারপুলের বাসায় চলে আসেন। পরদিন চলে আসেন গ্রামের বাড়ি। কিন্তু ক্ষতটি বড় হওয়ায় বাড়িতে কোনো উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল না। রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। এ কারণে ভর্তি হন শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এখনও আশংকা মুক্ত নন রাকিবুল।
রাকিবুল ১৬ মাস আগে বিয়ে করেছেন ফাহমিদা দিশাকে। এখনও সন্তান হয়নি তাদের। সারাক্ষণ স্বামীর পাশে থেকে সেবা করছেন স্ত্রী দিশা। রাকিবুলের প্রত্যাশা, আন্দোলনের সুফল যেন জাতি পায়।