প্রতিনিধি, কটিয়াদী, ফজলুল হক জোয়ারদার আলমগীর : ৩৬ কোটি টাকায় নির্মিত হাসপাতালের প্রশাসনিক অনুমোদন মিলছে না ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। নবনির্মিত ভবনটি কাজে আসছে না জনসাধারণের সেবায়। নবনির্মিত ভবনটির ম‚ল ফটকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ৫০ শয্যার কাঠামোতেও জনবল সংকট। রয়েছে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা। স্বাস্থ্যসেবা হচ্ছে বিঘ্নিত।
জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রায় চার বছর প‚র্বে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণের কার্যক্রম শুরু হয়। সাবেক স্বাস্থ্য সচিব মো. আব্দুল মান্নানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০০ শয্যা হাসপাতাল হিসেবে উন্নীতকরণের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করেন। চলতি বছর মে মাসের মাঝামাঝি বাস্তবায়িত প্রকল্প হস্তান্তর করা হয়।
নবনির্মিত কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে একটি চারতলা, একটি সাততলা বিশিষ্ট সুবিশাল ভবন। ভবনে রয়েছে অপারেশন থিয়েটার, পরীক্ষা-নিরীক্ষার ল্যাব, এক্স-রে, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিনসহ আধুনিক সুযোগ সুবিধা। উন্নত বিদ্যুৎ সঞ্চালনসহ জেনারেটর ব্যবস্থা। আছে অক্সিজেন প্লান্ট।
কমপ্লেক্স সীমানার ভেতরে নির্মাণ করা হয়েছে ডাক্তার এবং অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের জন্য বহুতল আবাসিক ভবন। অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে এলাকাবাসী চিকিৎসা সেবা নিয়ে আশান্বিত হয়েছে। কিন্তু ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও ১০০ শয্যার হাসপাতালের প্রশাসনিক অনুমোদন না হওয়ায় তালাবদ্ধ রয়েছে সকল কার্যক্রম। সেই আগের ৫০ শয্যা হাসপাতাল কাঠামোর ভিত্তিতেই ঠাসাঠাসি ঘিঞ্জি পরিবেশে চলছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।
৫০ শয্যার হাসপাতাল কাঠামোতে যে পরিমাণ লোকবল প্রয়োজন তাও নেই। ফলে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। কাক্সিক্ষত সুফল এখনো পাচ্ছে না এলাকাবাসী। ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কাঠামোতে চারটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ চিকিৎসক পদ রয়েছে ৩১জনের। এর মধ্যে ১৭জন চিকিৎসক পদায়ন থাকলেও ৫জন চিকিৎসক ডেপুটেশনে রাজধানী ঢাকা কিংবা তাদের সুবিধাজনক স্থানে রয়েছেন। মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।
ফলে ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ ১১ জন ডাক্তার দিয়ে চলছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। এর মধ্যে রয়েছেন একজন আবাসিক ও চারজন মেডিকেল অফিসার, দুইজন কনসালটেন্ট ও একজন ইউনানী চিকিৎসক, একজন হোমিও চিকিৎসক (সপ্তাহে ৩দিন)।
সরেজমিনে দেখা যায়, টিকেট কাউন্টারের অব্যবস্থাপনা। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টিকেট কাউন্টারে ভিড় লেগেই আছে। কাউন্টার কক্ষটি খুবই ছোট। একই কক্ষে নারী-পুরুষ ঠেলাঠেলি করে টিকেট নিতে হয়। ফলে চুরিসহ নানারকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে অহরহ। টিকিটের ম‚ল্য ৫ টাকা। কাউন্টার থেকে ভাঙতি দিতে চায় না। ভাঙতি টাকা না দিলে কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা আউট সোর্সিং এর লোকজন রোগীর সঙ্গে অসদাচরণ করেন।
শিক্ষক নিলুফা ইয়াসমিন (৩৫) বলেন, টিকেটের জন্য ১০ টাকার নোট দিয়েছি। কাউন্টার থেকে বলে ৫টাকা ভাঙতি নাই। কাউন্টার থেকে ভাঙতি দিতে চায় না। ভাঙতি টাকা না দিলে কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা আউট সোর্সিং এর লোকজন রোগীর সঙ্গে অসদাচরণ করেন, বলে ভাঙতি টাকা নিয়ে আসেন। তারপর টিকেট নিবেন। শেষে ১০টাকা দিয়েই টিকিট নিয়েছেন।
ভাঙতি নাই বলে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার এমন অনেক অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতাল স‚ত্রে জানা যায়, দৈনিক ৭-৮শ’ রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। তাছাড়া অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন ধারণ ক্ষমতার চেয়েও বেশি রোগী। তাদেরকে ফ্লোরে বা বারান্দায় রেখে চিকিৎসা করাতে হয়।
১০০ শয্যা অনুমোদন হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারসহ ৫০ জনের অধিক ডাক্তার পদায়ন হবে। নবনির্মিত ভবনে রোগী স্থানান্তর হলে ঘিঞ্জি পরিবেশ থাকবে না। এতে সেবার মান বাড়বে। সকল ধরনের রোগী উন্নত চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন।
এক্স-রে, ইসিজি, আল্ট্রাসনোসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার আধুনিক যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে তালাবদ্ধ আছে। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় তালাবদ্ধ থাকায় হয়তো কোটি টাকার এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অনুপোযোগী বা অকেজো হয়ে যাবে।
এগুলোর ব্যবহার শুরু হলে দরিদ্র, হত দরিদ্র ও সাধারণ মানুষ ন্যায্যম‚ল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসা সেবা নিতে পারতো। যা বর্তমানে অধিক ম‚ল্যে বেসরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রাইভেট ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করাতে হয়।
১০০ শয্যা হাসপাতালের অবকাঠানো নির্মাণ শেষ হয়েছে। দ্রুত এর অনুমোদন ও কার্যক্রম চালুকরণের দাবি জানান এলাকার লোকজন। এটি চালু হলে ম‚ল্যবান যন্ত্রপাতিগুলোর সঠিক ব্যবহার এবং এলাকার মানুষ উন্নত চিকিৎসা সেবা পাবে।
কিশোরগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, আমরা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। ১০০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম চালু করতে জনবল, লজিস্টিক সাপোর্ট ইত্যাদি কিছু বিষয় রয়েছে। আমরা মানসিকভাবে তৈরি আছি। অনুমোদন পেলেই কার্যক্রম শুরু করতে পারবো। এ ব্যাপারে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। আশাকরি দ্রুত সময়ের মধ্যেই অনুমোদন হয়ে যাবে।