শামসুল আলম শাহীন : এক সময়ের সাড়া জাগানো ভলিবল খেলোয়াড় ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব এ কে এম ফারুক’কে হারিয়ে কাঁদছে জেলার ক্রীড়াঙ্গন। দীর্ঘ সময় খেলোয়াড় ও সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন তিনি। কর্মগুণে সবার আপন হয়ে উঠেছিলেন। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় কিশোরগঞ্জ পুরাতন স্টেডিয়ামের আঙ্গিনা থেকে খেলোয়াড়, সহকর্মী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের চোখের জলে ভাসিয়ে আপনজনকে চিরবিদায় জানালেন।
এসময় এক নজর দেখার জন্য উপস্থিত হন জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, ফুটবল এসোসিয়েশন, ক্রিকেট এসোসিয়েশন ও রেফারী এসোসিয়েশনের কর্মকর্তাবৃন্দ, খেলোয়াড়, ছাত্রছাত্রীসহ সাধারণ জনগণ।
ক্রীড়াঙ্গনের প্রিয় মানুষ এ কে এম ফারুককে আর দেখা যাবে না প্রিয় শহর কিশোরগঞ্জের স্টেডিয়ামে। প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে ডাক পড়বে না। থেমে গেল তার অবিরাম পথচলা।
কেউ বলে-এক সময়ের সাড়া জাগানো ভলিবল খেলোয়াড়। কেউ বলে-ক্রীড়া সংগঠক ও ক্রীড়া প্রশিক্ষক। আবার কেউ বলে-খেলোয়াড় গড়ার কারিগর। সবকিছু উপেক্ষা করে পরপারে পাড়ি জমালেন কিশোরগঞ্জের ক্রীড়াব্যক্তিত্ব এ কে এম ফারুক। তাঁর অকাল মৃত্যুতে জেলার সব মতের, সব পথের মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিষিক্ত হলেন ভালোবাসার অকৃত্রিম বন্ধনে। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে কর্মময় জীবনের দীর্ঘ ৬৫ বছরের অধিকাংশ সময় ব্যয় করেছেন খেলাধুলা নিয়ে। ছাত্রজীবনে সাড়া জাগানো ভলিবল খেলোয়াড়ের পাশাপাশি ছিলেন গুরুদয়াল সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের খেলাধুলা সম্পাদক, সংগঠক এবং বাজিতপুর ডিগ্রী কলেজের শরীর র্চ্চা শিক্ষক।
এখানেই শেষ নয়। ক্রীড়াঙ্গনে নিরলস পরিশ্রম ও নিষ্ঠা তাঁকে এক উচ্চতর পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছিল। দেশি-বিদেশি দক্ষ প্রশিক্ষকের মাধ্যমে একাধিক প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। জাপান-জাইকা ও বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম, আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি কর্তৃক অলম্পিক সলিডারিটি কোর্স, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রশিক্ষক ফিল রাসেল কর্তৃক ক্রিকেট পীচ নির্মাণ প্রশিক্ষণ, বাংলাদেশ ভলিবল রেফারিজ বোর্ডের রেফারী প্রশিক্ষণ ও বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশনের আয়োজিত আন্তর্জাতিক ভলিবল কো-অপারেশন প্রোগ্রাম কোর্সে অংশগ্রহণ অন্যতম।
এছাড়াও জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক, ফুটবল এসোসিয়েশনের সহ সভাপতি, বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সদস্য, বিচ কাবাডি ফেডারেশনের চেয়ারম্যান হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি যেমন ভালো খেলোয়াড় ও সংগঠক ছিলেন তেমনি খেলোয়াড় তৈরিতে ছিলেন পারদর্শী। তাঁর হাতে তৈরি অনেক খেলোয়াড় জাতীয় পর্যায়ে সুনাম অর্জন করেছে। মরহুম এ কে এম ফারুকের মৃত্যুতে ক্রীড়াঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ যোহর শহীদী মসজিদে প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে নিজ বাড়ি করিমগঞ্জ উপজেলার কিরাটন ইউনিয়নের তালতলা গ্রামে আছরের নামাজের পর দ্বিতীয় জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য, গত (২১ মে) মঙ্গলবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না-ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে স্ত্রী, এক পুত্র, এক কন্যা, নাতি-নাতনি ও আত্মীয় স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।