স্টাফ রিপোর্টার, মিঠামইন, বিজয় কর রতন : পাঁচ বছর আগে প্রতিরক্ষা দেয়ালসহ সড়ক পাঁকাকরণ প্রকল্পের কোন কাজ না করেই উপজেলা প্রকৌশলী মাহগুব মুর্শেদ ও ঠিকাদার নুরুল ইসলাম সরকার মিলে প্রকল্পের ৩৫ লাখ টাকার বিল তুলে আত্মসাৎতের অভিযোগ উঠেছে। কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলা সদর ইউনিয়নের আড়ারপাড় গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ময়মনসিংহ অঞ্চল পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (এমআরআরআইডিপি) অধীনে, অষ্টগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ৬টি সড়ক উন্নয়ন ও পাঁকাকরণ প্রকল্পের কাজ পায় পাকুন্দিয়ার আতিক এন্টারপ্রাইজের নামে অষ্টগ্রামের নুরুল ইসলাম সরকার।
১ কোটি ৯০ লাখ ৪৯ হাজার ৫২৪ টাকা প্রাক্কলিত ও ১ কোটি ৮০ লাখ ৯৭ হাজার ৪৭ টাকা চুক্তিমুল্যে, ৬টি সড়ক উন্নয়ন ও পাঁকাকরণ প্যাকেজটি আতিক এন্টারপ্রাইজের সহকারী ঠিকাদার (বর্তমান সরকার কনস্ট্রাকশন মালিক) নুরুল ইসলাম সরকারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে অষ্টগ্রাম উপজেলা এলজিইডি অধিদপ্তর।
প্যাকেজের আওতায়, অষ্টগ্রাম সদর ইউনিয়নের আড়ারপাড় ঋষিপাড়া সরকারি পাথমিক বিদ্যালয় সংযোগ সড়কের ১০০ মিটার সড়কে প্রতিরক্ষা দেয়াল ও সড়ক পাঁকাকরণে নির্মাণ ব্যায় ধরা হয়, প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। কিন্তু, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘আতিক এন্টারপ্রাইজে’র সহযোগী ঠিকাদার নুরুল ইসলাম সরকার এই সড়কে কোন কাজ না করে, তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী মাহগুব মুর্শেদের সহযোগিতায় বরাদ্ধের সমুদয় টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খানাখন্দে বেহালদশা আড়ারপাড় ঋষিপাড়া কাঁচাসড়কটি। আড়ারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ঋষিপাড়ার মানুষের চলাচলের প্রধান এই সড়কটিতে চলে না কোন যানবাহন। বৃষ্টি হলেই বাঁধাগ্রস্ত হয় স্বাভাবিক যাতায়ত।
স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছর আগে সড়কটি পাঁকা হবে শুনেছি। পরে কেন হয়নি তা জানি না। আমরা বার বার বলেও রাস্তাটি পাঁকা করাতে পারিনি। এখন, শুনি কোন কাজ না করেই বরাদ্দের সকল টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে ঠিকাদার নুরুল ইসলাম।
একটি প্রকল্পের কাজ না করে পুরো টাকা আত্মসাৎত করেও নুরুল ইসলাম কিভাবে টানা দুই বছর ‘সিআইপি’ পুরস্কার পেলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ভুক্তভোগীরা। কাজ না করে পাঁচ বছর আগে বিল তুলে আত্মসাৎ করে বিষয়টি গোপন রাখার সাথে জড়িতদের শাস্তিসহ রাস্তাটি দ্রæত পাকাঁকরণের দাবি করেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম (খিরু) বলেন, অনেক দিন আগে শুনছি এখানে রাস্তা পাকাকরণের বরাদ্দ এসেছিলো, পরে তেমন কিছু জানি না। এখন শুনছি টাকা উঠিয়ে নিয়ে গেছে কন্ট্রাক্টর নুরুল ইসলাম। আমরা রাস্তা পাকাঁসহ ঠিকাদারের বিচার চাই।
ঝুটন রবিদাস (২৮) বলেন, স্কুলের ছাত্র ছাত্রী ও আমাদের শতাধিক পরিবারের মানুষ এই ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে নিয়মিত আসা-যাওয়া করি। বার বার চেষ্টা করেও সড়ক পাকা করাতে পারিনি। এখন, শুনি ৫ বছর আগে কন্ট্রাক্টার টাকা তুলে নিয়ে গেছে। আমরা রাস্তা পাকাঁসহ কন্ট্রাক্টর ও জড়িতদের বিচার চাই।
আতিক এন্টারপ্রাইজ মালিক ঠিকাদার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমার লাইসেন্সে অষ্টগ্রামের নুরুল ইসলাম সরকার প্যাকেজটি পান। তিনি কি করেছেন আমি জানি না। আপনি (প্রতিবেদক) তার সাথে কথা বলেন। তবে, কাজ না করে বিল তুলে নিলে নুরুল ইসলাম ও উপজেলা প্রকৌশলীর অন্যায় করেছে।
ঠিকাদার নুরুল ইসলাম সরকার বলেন, আমি বিদেশ রয়েছি। ৪-৫ বছর আগের তো, কতটুকু বিল গেছে দেখতে হবে। কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি, আর প্রতিরক্ষা দেওয়ালের কাজ হয়েছিল। রাস্তার জায়গা নিয়া সমস্যা থাকায় বাকী কাজ এখনও হয়নি।
তৎকালীন অষ্টগ্রাম উপজেলা প্রকৌশলী মাহগুব মুর্শেদ বলেন, এতদিন আগের বিল, আমার মনে নেই। জেলা প্রকৌশলী দপ্তরে খোঁজ নিন।
অষ্টগ্রাম উপজেলা প্রকৌশলী সৈয়দ রেজাউল হক বলেন, আড়ারপাড় ঋষিপাড়া সড়কের কাজ না করে নুরুল ইসলাম সরকার বরাদ্দের সমুদয় টাকা উত্তোলনের বিষয়টি একাধিক সূত্রে জেনে, সরেজমিনে সত্যতা পেয়েছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে অবহিত করেছি।