বিজয় কর রতন, মিঠামইন (কিশোরগঞ্জ) : কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের জয় সিদ্ধি গ্রামে ১৮৪৪ সনে ব্রিটিশ শাসন আমলে নির্মিত বাড়িটি ভারতীয় উপমহাদেশের রেঙ্গলার আনন্দ মোহন বসু’র। তিনি জীবিত না থাকলেও বাড়িটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়েছে। আনন্দ মোহন বসুর পিতা ছিলেন পদ্ম লোচন বসু এবং মাতা উমা কিশোরী দেবী। তার পিতা ময়মনসিংহ আদালতে পেসকার হিসাবে কর্মরত ছিলেন।
পিতার কর্মস্থল সুবাদে আনন্দ মোহন বসুর শিক্ষা জীবন শুরু হয় ময়মনসিংহে। তিনি ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে মেধা তালিকায় নবম স্থান সহকারে এনট্রান্স পাশ করে ছিলেন ১৮৬২ সনে। শীর্ষ স্থান অর্জন করেন বি.এ এবং এফ.এ পাশ করেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে। ১৮৭০ সাথে আনন্দ মোহন বসু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করায় প্রেমচাদঁ-রায়চাদঁ বৃত্তি লাভ করে এবং ১০ হাজার টাকা সন্মানিও পান। ১৮৭১ সালে ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য। সেখানে ক্যামব্রীজের ক্রাইষ্টর্স কলেজ থেকে গণিত বিষয়ে সম্মান পাশ করেন। সেখানে ট্রাইপাস পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যমে উপ মহাদেশের প্রথম রেঙ্গলার উপাদিতে ভূষিত হন।
১৮৭৪ সাথে আনন্দ মোহন বসু বার এট ল ডিগ্রি সম্পন্ন করে ভারতে ফিরে আসেন। উকালতির পাশাপাশি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৮৬৯ সনে খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ড. জগদীশ চন্দ্র বসুর ভগনী স্বর্ণ প্রভার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি সংস্কার বাদি ছিলেন বলে সমাজের মানুষের উপকারে সক্রীয় ছিলেন। আইন পেশর পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাÐে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতেন। ১৮৮৩ সালে শিক্ষার বিস্তার ঘটানোর লক্ষ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট স্কুল। এই স্কুলেই আনন্দ মোহন কলেজের ক্যামপাস চালু করেন।
পরবর্তীতে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং এদেশের প্রথম মুসলিম গ্র্যাজুয়েট মৌলভী হামিদ উদ্দিনের দান কৃত জমিতে ১৯০৮ সালে স্থায়ীভাবে আনন্দ মোহন কলেজ স্থাপিত হয়। এর পূর্বে তিনি ১৮৮৪, ১৮৯০, ১৮৯৫ এ বছর গুলোতে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৮৯৮ সালে তিনি কলকাতায়ও আনন্দ মোহন কলেজের শাখা চালু করেন। তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মাদ্রাজের সভাপতি ছিলেন।
১৯০৫ সালে আনন্দ মোহন বসু শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়িতে পাঠানো হয়েছিলো। পড়ে এগুণী শিক্ষাবিদ ১৯০৬ সালের ২০ আগষ্ট কলকাতায় ইহলোক ত্যাগ করেন। তিনি কোনো বংশধর রেখে যাননি।
সরেজমিনে ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি গ্রামে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে এই কীর্তিমানের বাড়ির অবস্থা খুবই নাজুক। নেই কোনো স্মৃতি চিহ্ন, নেই কোনো প্রকার নিদর্শন। এমনকি কোনো সাইনবোর্ডও নেই। বাড়ির ভিতরে ঝোপঝাড়, দেয়ালের আস্তর খসে পড়ছে। ভবনের ভিতরে গা ছমছম করে। সীমানা প্রাচীরও ধ্বসে পড়ছে। বাড়ির সামনে টিনের ঘরটি ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানান, বাড়িটি যথাযথ কর্তৃপক্ষ সংস্কার করায় ভূমিকা রাখতে পারেন। এলাকাবাসী বাড়িটি সংস্কারের জোর দাবি জানান। বর্তমানে বাড়টি ইটনার প্রভাবশালী ব্যাক্তি আমির উদ্দিনের ছেলেদের দখলে রয়েছে। সাবেক ট্রাষ্টি ইটনা জয়সিদ্ধি এলাকার বাসিন্দা সুরঞ্জন ঘোষ জানান, তার বাড়ি একই গ্রামে। তিনি ট্রাষ্টি থাকার সময় বাড়িটি প্রত্নতাত্বিক বিভাগের লোকজনকে এনে অনেক বার পরিদর্শন করিয়াছি, কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি। তিনি এই বাড়ির ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য সংস্কারের দাবি জানান।