একটা হিংস্র স্বভাবের বন্য পশুকে ছোটকাল থেকে বড় করে তোলার পিছনে একটি হীন মানসিকতার উদ্দেশ্য কাজ করে থাকে। মাহুত বা হাতির আরোহী, রক্ষক, প্রশিক্ষক ও পরিচালক অবুঝ বয়সে হাতিটিকে ক্রমে-ক্রমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তির জঘন্যতম পন্থার ঢংয়ে চাঁদাবাজি শিখিয়ে তোলে। যেমনি করে একজন সভ্য মনের অধিকারি মানুষকে একটি উগ্র গোষ্ঠী বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিপথগামী করে জঙ্গি বা নাশকতার পথে নামিয়ে দেয়। যা আইনের চোখে মারাত্মক অপরাধ।
তেমনি করে একটি হাতির বাচ্চাকে দালালের কাজ থেকে চড়া দামে কিনে লালন-পালন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বড় করে তোলতে থাকে। সাথে-সাথে হীন চরিতার্থ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য হাতিটিকে চাঁদাবাজির সকল ক‚প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রশিক্ষিত করে তোলে। এরই সাথে হাতিটি মাহুতের বিশেষ ভক্তে পরিণত হয়। মাহুতের বিশেষ ইশারা লব্ধ করে এবং সেভাবেই হাতিটি মাহুতের দ্বারায় পরিচালিত হতে থাকে।
মাহুত হাতিটির পিছনে এত ব্যয় ও শ্রম দেওয়ার একটাই কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। তা হল- বিশালদেহী, হিং¯্র প্রকৃতির প্রাণী হাতির উপর ভর করে পাড়া থেকে মহল্লা, গ্রাম থেকে গঞ্জে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করাবে বা করবে। আয়ের টাকায় মাহুত বড় বড় অট্টালিকা তৈরী করে আরাম আয়েশে জীবন পরিচালনা করবে। এমন সহজ ও দেমাগী ব্যবসায় যোগ হবে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম।
এভাবেই বংশ বিস্তার করে হাটুগেড়ে বসে আছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। কি অপূর্ব কৌশল আটকে নিরবে, নিভৃত্তে দাপটের সাথে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে বিত্তশালীদের নাকের ডগার সামনে দিয়ে। একটা প্রাণীকে চাঁদাবাজির প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে এমন প্রভাব বিস্তার করে এবং ভয় দেখিয়ে, প্রণাম বা আদবী মিথ্যা অভিনয়ের আশ্রয়ে জঘন্যতম প্রথা চালু করে রেখেছে। এমনও দেখা যায় প্রথম মাহুত মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় মাহুত এমনকি তৃতীয় মাহুত পর্যন্ত দায়িত্ব নিয়ে থাকেন।
বিশালদেহী প্রাণীটির প্রথম মাহুতের ইশারা যেভাবে শুনতো বা তার কাছে যতটুকু ভালবাসার ছিল, ততটুকু অন্যান্য মাহুতদের ক্ষেত্রে বেশীরভাগেই হয়ে উঠে না। তাই মাহুতদের ও কোন কোন সময় হিং¯্রতার স্বীকার হয়ে জীবন দিতে হয়, যা পত্র-পত্রিকা থেকে পরখ করা যায়। যেখানে মাহুতের জীবনের নিশ্চয়তা নিয়ে অনিশ্চিত যাত্রা, সেখানে অন্যের জীবন রক্ষার দায় কতটুকুই বা সুযোগ থাকে।
বলা যায়- একজন শ্রমিক হাড়-ভাঙ্গা পরিশ্রমের মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবে ৪০০-৫০০টাকা আয় করে থাকে। আবার দেখা যায় প্রতিদিন শ্রমিক তার শ্রম বিক্রি করতে পারেনি। এভাবেই কোন রকম দিন যাপনে চলে যায় সময়। অপরদিকে একজন মাহুত একটি বিশালদেহী হাতিকে বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কুপ্রবৃত্তি শিক্ষা দিয়ে, চাঁদাবাজির কাজে নিয়োজিত করে, হাজার-হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে আয়েশ জীবন-যাপন করতে দেখা যায়। এমনও নজির আছে প্রশিক্ষিত হাতি ভাড়া করে ভিক্ষাবৃত্তির ঢংয়ে চাঁদাবাজি করে ভাড়ার দেনা মিটিয়ে সংসার পরিচালনা করে থাকেন।
ভাড়া করা হাতি স্বল্প সময়ের মাহুতকে কতটা মানবে এ নিয়ে শংকা যেমন থেকেই যায়। এমন হাতি দ্বারা যে কোন দুর্ঘটনা ঘটবে না এসবের কি কোন নিশ্চয়তা আছে? এমন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে গত (২ জুলাই) মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জ পৌরসভার নগুয়া এলাকার এক ফার্মেসী ব্যবসায়ী মাসুদুর রহমান মিস্টন প্রথমে গুরুতর আহত পরে তার মৃত্যু হয়। ঘটনার দিন সংশ্লিষ্ট মাহুত হাতি দিয়ে ভিক্ষবৃত্তির ঢংয়ে চাঁদাবাজি করাকালে সাধারণ ব্যবসায়ী ও পথচারিরা ক্ষেপে উঠে।
প্রতিবাদ করতে থাকাকালীন সময়ে হাতিটি ক্ষুদ্ধ হয়ে শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে এক ঔষধ ব্যবসায়ীকে আছড় মারলে ঘটনস্থলে গুরুতর আহত হয়, পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। স্থানীয় মহল এমন লোমহর্ষক দুর্ঘটনার বিচার চেয়ে হাতির এ ধরনের তৎপরতাকে রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও সরকারের প্রতি দৃষ্টি কামনা করেছেন।
দোকানে, বাড়িতে ও রাস্তা-ঘাটে চলার সময় পকেটে টাকা নাও থাকতে পারে এ দরুণে যদি হাতির হামলার স্বীকার হতে না হয়ে, এজন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এমন জঘন্য প্রথা বন্ধ করে দেশের নাগরিকদের স্বস্থি ও শংকামুক্ত করবেন বলে আশা করছেন। আর যেন নতুন করে কোন পশুর চরিত্রকে কুলুষিত করে মাহুতরা সুবিধা না নিতে পারে এ ব্যাপারে সচেষ্ট থাকা বাঞ্ছনীয়।