স্টাফ রিপোর্টার : কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে মাদকসেবী কিশোর গ্যাং এর ২ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কিশোরগঞ্জ মডেল থানার এস.আই মোঃ রোকনুজ্জামান এর নেতৃত্বে একটি পুলিশ দল তাদেরকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলো- সদর উপজেলার কাটাবাড়িয়া গ্রামের আবু তাহেরের পুত্র মোঃ ফাহিম (১৯) ও ময়মনসিংহ জেলা নান্দাইল উপজেলার নগর কচুরী গ্রামের মৃত আঃ রাশিদের পুত্র সেলিম মিয়া (৩৫)।
মাদকসেবীরা যে অফিসটিকে তাদের নিরাপদ আশ্রয় স্থল ভেবে কুকর্ম ও বিভিন্ন অপরাধসহ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পাসপোর্টের আবেদন ও পাসপোর্ট বই নিতে আসা নিরীহ সাধারণ মানুষকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও কাগজপত্র নিয়ে এলাকা থেকে গাঁ ঢাকা দিত সেই অফিস থেকেই তাদেরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
অভিযোগ রয়েছে, পাসপোর্ট অফিসের চ্যানেল বাণিজ্যের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে অফিসের হিসাবরক্ষক মোঃ আশরাফ আলী এই কিশোর গ্যাং সদস্যদেরকে ব্যবহার করে আসছেন। ইতিপূর্বে পাসপোর্ট অফিসের বিরুদ্ধে যে সকল সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশ করেছেন কিংবা কোন রাজনৈতিক কর্মী পাসপোর্ট অফিসের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন তাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে এই কিশোর গ্যাং সদস্যদেরকে। পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী ছাড়াও কথিত সাংবাদিকও তাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
পাসপোর্ট অফিসের এই দুর্ধর্ষ কিশোর গ্যাং এর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের আগে দীর্ঘ ৬ মাস এই এলাকায় কিশোরগঞ্জের কয়েকজন সাংবাদিক এলাকাটি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছিল। অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণ কালে পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক ও অন্যান্য কর্মচারীরা বরাবরই তাদের চ্যানেল বাণিজ্যের দুর্নীতির কথা অস্বীকার করে আসছিল। পর্যবেক্ষণকারী সাংবাদিকদের হাতে প্রমাণ রয়েছে পাসপোর্ট অফিস থেকে কয়েকজন সাংবাদিককে নিয়মিত মাসোহারা ও কয়েকজনকে সপ্তাহে একটি সম্মানি ভাতা দেয়া হয়।
পাসপোর্ট অফিসের বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর চালু রাখার জন্য যে জ্বালানি খরচ হয়, তা চ্যানেল বাণিজ্যের টাকা থেকে বহন করা হয়। উক্ত অফিসে দীর্ঘদিন যাবৎ রান্না বান্নার কাজে নিয়োজিত একজন গৃহকর্মী কাছ থেকে জানা গেছে, প্রতিদিন সকালে অফিসের খরচে সকল কর্মচারীদের নাস্তা ও দুপুরের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়ে থাকে চ্যানেল বাণিজ্যের টাকা থেকে।
অনুসন্ধানকালে সাংবাদিকরা জানতে পারে, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের সদস্যরা ২০২৩ সনের শেষ দিকে প্রথম হানা দেয়। তাদেরকে নাকি ৮ লাখ টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা হয় চ্যানেল বাণিজ্যের টাকা থেকে। এই চ্যালেন বাণিজ্যের টাকা উত্তোলনের জন্য অফিস বরকত উল্লাহ নামে একজনকে নিয়োগ দিয়েছিল। সে প্রতি সপ্তাহের বুধবার চ্যানেলের টাকা দোকানদারদের কাছ থেকে উত্তোলন করে অফিসের হিসাবরক্ষক মোঃ আশরাফ আলীর নিকট জমা দিত।
সুযোগ বুঝে নিয়োগপ্রাপ্ত বরকত উল্লাও চ্যানেল বাণিজ্যের ১৪ লাখ টাকা নিয়ে গাঁ ঢাকা দেয়। আরও জানা যায়, ২০২৪ সালের প্রথম দিকে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে পরিদর্শনে এলে তার পিছনেও নাকি মোটা অংকের টাকা খরচ করে চ্যানেল বাণিজ্যের টাকা থেকে। এর কিছুদিন পরে কিশোরগঞ্জ দুদুক অফিসের সদস্যরা আবারও কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে অভিযান চালায়। দুদুকের ২য় অভিযানকে ধামাচাপা দেয়া হয় চ্যানেল বাণিজ্যের টাকা দিয়ে।
এসব কারণে কোনদিনই বন্ধ হয়নি পাসপোর্ট অফিসে চ্যানেল বাণিজ্যের নামে গোপনে ঘুষ নেয়ার কৌশল। উল্টো পাসপোর্ট অফিসের লোকজন নিজেদের দোষ বিভিন্ন কৌশলে পুলিশের ডিএসবি শাখার উপর চাপিয়ে দিয়ে তারা বাঁচার পথ খোঁজে। আর ভ‚ক্তভোগীরা বছরের পর বছর, মাসের পর মাস হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
এদিকে সচেতন জেলাবাসী দুর্ধর্ষ কিশোর গ্যাং এর ২ সদস্যকে গ্রেফতার করায় কিশোরগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জকে সাধুবাদ জানিয়ে বাকিদের দ্রæত গ্রেফতারের প্রত্যাশা করছেন।