স্টাফ রিপোর্টার, কুলিয়ারচর, মো. নাঈমুজ্জামান নাঈম : কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলা সদরে অবস্থিত বেগম নুরুন্নাহার পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মতিয়ার রহমান এর সাথে বেতন বৈষম্য নিয়ে ক্লাস বর্জন করেছেন সহকারী শিক্ষকগণ। গত সোমবার বেলা ১১টায় ক্লাস বর্জনের কর্মস‚চি পালন করেন সহকারী শিক্ষকগণ।
বেগম নুরুন্নাহার পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. আবু হানিফ (টিআর) বলেন, প্রধান শিক্ষক অত্র বিদ্যালয় হতে মাসিক ভাতা গ্রহণ করেন ১৭ হাজার টাকা। পক্ষান্তরে একজন সহকারী শিক্ষক ভাতা পান মাত্র ১ হাজার টাকা। এমনিভাবে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় থেকে দুটি ঈদ বোনাস বাবদ গ্রহণ করেন ৩৪ হাজার টাকা।
তন্মধ্যে একজন সহকারী শিক্ষক পান মাত্র ২ হাজার টাকা। বার্ষিক নৈমিত্তিক ছুটি (সিএল) বাবদ প্রধান শিক্ষক গ্রহণ করেন ১৭ হাজার টাকা আর একজন সহকারী শিক্ষক পান মাত্র ১ হাজার টাকা। এ বেতন বৈষম্য নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত প্রধান শিক্ষকের সাথে সহকারী শিক্ষকদের বিরোধ চলছে।
তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে গত ৮ অক্টোবর অত্র বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর একটি লিখিত আবেদন দেয়া হয়। গত জুলাই মাস থেকে বেতন বৈষম্য দ‚রীকরণ না হওয়া অদ্যবধি পর্যন্ত বিদ্যালয় প্রদত্ত ভাতা গ্রহণ করছেন না সহকারী শিক্ষকগণ। এমনকি প্রধান শিক্ষকের কোনো কাজেই সহযোগিতা করছেন না তারা।
পরবর্তীতে অত্র বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে মিটিং করে বেতন বৈষম্য দ‚রীকরণের আশ্বাস পেয়ে পুনঃদিবস কর্মবিরতি স্থগিত করে ক্লাসে ফিরে যান বলে জানান তিনি ।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা রোকসানা সুলতানা বলেন, প্রধান শিক্ষকের সাথে বেতন বৈষম্য নিয়ে আজকে পুরোদমে ক্লাস বর্জনের কর্মস‚চি চলছে। তিনি বলেন, বেতন বৈষম্য নিয়ে প্রধান শিক্ষকের প্রতি সহকারী শিক্ষকগণ অনেক অসন্তোষ। যার ঠিকমতো ক্লাসে মনোযোগ দিচ্ছেন না সহকারী শিক্ষকগণ।
সিনিয়র শিক্ষক আছমা বেগম বলেন, প্রধান শিক্ষকের আচরণ খুবই খারাপ এবং সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হওয়ার সময় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। বেতন বৈষম্য নিয়ে আছমা বেগম বলেন, প্রধান শিক্ষকের নিয়োগপত্রে লিখা ছিলো চাকরি স্থায়ীকরণের ভিত্তিতে সবরকম সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। স্থায়ীকরণের নিয়ম হলো দুই বছর।
কিন্তু তিনি তা না করেই বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। সহকারী শিক্ষক মো. উজ্জল মিয়া বলেন, প্রধান শিক্ষক অত্র বিদ্যালয় প্রদত্ত বছরে ভাতা পান প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা আর একজন সহকারী শিক্ষক পান মাত্র ১৫ হাজার টাকা। তিনি বলেন, এতো বৈষম্য রেখে নতুন বাংলাদেশ চলতে পারে না। প্রধান শিক্ষকের সাথে সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দ‚রীকরণের জোর দাবি জানাচ্ছি।
সহকারী শিক্ষক তামান্না শারমিন বলেন, দীর্ঘদিন যাবতই প্রধান শিক্ষকের সাথে বেতন বৈষম্য নিয়ে আমাদের বিরোধ চলছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক বেতন বৈষম্য দ‚রীকরণে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছেন না। আমরা যখন বেতন বৈষম্য দ‚রীকরণের কথা বলি তখনই প্রধান শিক্ষক বলেন স্কুলের ফান্ড ভালো না।
কিন্তু প্রধান শিক্ষক যে বছরে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা নিচ্ছেন তখনতো ফান্ডের কোনো সমস্যা থাকে না। তিনি বলেন, আমরা চাকরিতে যোগদানের দুই বছর পর থেকে বিদ্যালয় প্রদত্ত ভাতা (পিএফ) নিচ্ছি। কিন্তু প্রধান শিক্ষক যোগদানের পর থেকেই বিদ্যালয় প্রদত্ত ভাতা (পিএফ) নিচ্ছেন।
সহকারী শিক্ষক রনি চন্দ্র বনিক বলেন, আমরা যখন নতুন যোগদান করি তখন বিদ্যালয় প্রদত্ত ভাতা পায় সরকারি বেতনের ৬% আর প্রধান শিক্ষক পান ৪২% এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক পান ১৬%।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, বেতন বৈষম্য নিয়ে শিক্ষকগণ কর্মবিরতি পালন করায় দুটি ক্লাস হয়নি। ইউএনও স্যারের সাথে মিটিং করে পরবর্তী ক্লাসগুলো করেছেন শিক্ষকগণ।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মতিয়ার রহমান বলেন, বেতন বৈষম্য নিয়ে সহকারী শিক্ষকদের দাবি অনুযায়ী অত্র বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে সকল শিক্ষকদের নিয়ে মিটিং করা হয়েছে। তিনি বলেন, মিটিংয়ে বেতন বৈষম্য দ‚রীকরণের বিষয়ে প্রদক্ষেপ নিবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন ইউএনও স্যার।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও অত্র বিদ্যালয়ের সভাপতি সাবিহা ফাতেমাতুজ্- জ্হোরা বলেন, প্রধান শিক্ষকের সাথে বেতন বৈষম্য নিয়ে সহকারী শিক্ষকদের পুনঃকর্মবিরতি পালনের বিষয়ে অবগত হয়েছেন এবং খুব শীঘ্রই বেতন বৈষম্য দ‚রীকরণে সহকারী শিক্ষকদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।