এফএনএস : ‘লেখাপড়া বাদ দিয়ে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে’ শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনের কোনো ‘যৌক্তিকতা’ দেখছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রোববার গণভবনে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় এ কথা বলেন সরকারপ্রধান। শেখ হাসিনা বলেন, “শিক্ষার্থীরা মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করার আন্দোলন করছে। যারা এর আগে আন্দোলন করেছিল, তারা আগে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় কত পাস করত, এখন কত করছে। এটা সাবজুডিস ম্যাটার, আদালতে বিচারাধীন।
“পড়াশোনা বাদ দিয়ে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা সময় নষ্ট করছে। এ আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই।” শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা ওই পরিপত্রে বলা হয়, নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে
১৩তম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হল। এখন থেকে মেধারভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল হলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে কোটা ব্যবস্থা আগের মতই বহাল থাকবে বলে ওই পরিপত্রে বলা হয়। ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন।
ওই আবেদনের চ‚ড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। ওইদিনই রায় প্রত্যাখান করে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নতুন করে আন্দোলন শুরু করেন। এর মধ্যে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের একটি দল ঢাকার শাহবাগের মোড়ে আন্দোলন করছেন গত কয়েকদিন ধরে।
চারটি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা তারা দিয়েছেন। দেশব্যাপী ‘বাংলা বøকেড’ নামের কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, গতকাল রোববার থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘট পালন করা হবে। এ ছাড়া বিকাল ৩টা থেকে শাহবাগ, নীলক্ষেত, নিউ মার্কেট, চানখারপুল, সায়েন্স ল্যাব, মতিঝিলসহ সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো অবরোধ করারও ঘোষণা আসে শনিবারের অবরোধ কর্মসূচি থেকে।
কর্মীদের পেনশন স্কিমে যোগদানের পরামর্শ
মহিলা লীগের কর্মীদের পেনশন স্কিমে যোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সবার জন্য পেনশন স্কিম করা হয়েছে। জীবনের নির্ভরতার জন্য পেনশন। আমরা চাই সবাই একটু ভালোভাবে বাঁচুক।” নারীর ক্ষমতায় ও অগ্রগতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আন্দোলন-সংগ্রামে যুব মহিলা লীগ সব সময় ভ‚মিকা পালন করেছে।
দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করেছে সংগঠনটি।” বিএনপির সমালোচনা করে সরকার প্রধান বলেন, “ভোট চুরি করে মাত্র দেড় মাস টিকেছে তারা। গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ২০০১ সালে ক্ষমতায় গিয়েছিল বিএনপি। ভোট চুরির অবপাদে ২ বার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে তারা।বিএনপির নির্যাতনের চিত্র মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। তারা সমাজের অভিশপ্ত বোঝা। তাদের অত্যাচার-নির্যাতন যেন আবার ফিরে না আসে, সেদিকে সজাগ থাকতে হবে।”