প্রতিনিধি ভৈরব ঃ ভৈরবের পানাউল্লাহরচর ও বেলাব ইব্রাহিমপুর হালগড়া খেয়া ঘাটের মাঝি মো: বাচ্চু মিয়াকে (৬০) ২৯পিস ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে ইব্রাহিমপুর গ্রামের শাহজালাল মিয়ার ছেলে ও একই খেয়া ঘাটের মাঝি আলমগীর ও তার সহযোগী ইব্রাহিমপুর গ্রামের লালু মিয়ার ছেলে ফারুক ও সোর্স সাদ্দাম মিয়ার বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোর্স সাদ্দাম মিয়া, ফারুক ও আলমগীর মিয়া পূর্বপরিকল্পিতভাবে মাঝি বাচ্চু মিয়ার খেয়া পারাপারের নৌকার মধ্যে ২৯পিস ইয়াবা রেখে র্যাব-১৪, ভৈরব ক্যাম্পের সদস্যদের খবর দিয়ে মাঝি বাচ্চু মিয়াকে গ্রেফতারে সহযোগিতা করে। র্যাবের ওই অভিযানের নেতৃত্ব দেন ভৈরব ক্যাম্পের অপারেশন অফিসার কর্পোরাল মহিবুল আলম। গত (৮ এপ্রিল) রাত ৯টায় এ ঘটনা ঘটে ভৈরবের পানাউল্লাহরচর ও বেলাব ইব্রাহিমপুর খেয়া ঘাট ভৈরব প্রান্তে।
নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের মৃত হাসিম মিয়ার ছেলে মাঝি বাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে কিশোরগঞ্জ জেল হাজতে পাঠানো হয়। নিরীহ মাঝিকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় এলাকাবাসী। যারা মাঝিকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর সাথে জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী এবং নিরীহ মাঝি বাচ্চু মিয়াকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার দাবি জানান।
এছাড়াও গ্রেফতারের পর র্যাব সদস্যরা মাঝি বাচ্চু মিয়াকে অমানবিক নির্যাতন ও মারধোর করেছে বলেও ভুক্তভোগী মাঝি ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ তুলেছেন র্যাবের বিরুদ্ধে। মাঝি বাচ্চু মিয়া ওই মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর বর্তমানে বিজ্ঞ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত রয়েছেন।
ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মাঝিকে ফাঁসানোর চক্রান্তে জড়িত থাকার সন্দেহে সোর্স সাদ্দামকে আটক করে তার স্বীকারোক্তি নেয়। সাদ্দামের স্বীকারোক্তি মতে ঘটনার মূলরহস্য প্রকাশ পায়। খেয়া ঘাটের দ্ব›েদ্বর জেরে আক্রোশবসত একই ঘাটের মাঝি আলমগীর ও ফারুক নেক্কারজনক এ ঘটনা ঘটায়।
গত ৫ মে দুপুরে স্থানীয় এলাকাবাসী গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের সমন্বয়ে ইব্রাহিমপুর হালগড়া মাঠের আমতলায় চক্রান্তের সাথে জড়িত মাঝি আলমগীর, ফারুক ও সোর্স সাদ্দামের বিরুদ্ধে সালিশ দরবার হয়। ওই সালিশে তারা তিনজনই দোষী সাবস্ত হয়।
এঘটনায় ছেলের জড়িত থাকার অপরাধ স্বীকার করে আলামগীরের পিতা শাহজালাল মিয়া প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ওই সালিসে খেয়া ঘাটে অভিযুক্ত আলমগীরের নৌকা তাৎক্ষণিক সরিয়ে নেয়া হয় এবং আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ওই সালিশে সভাপতিত্ব করেন সাল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন। এসময় বেলাব, রায়পুরা এবং ভৈরব উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ইউপি মেম্বার ও মাতব্বরগণ এবং স্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সালিশে সল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আতাউর রহমান বলেন, ইব্রাহিমপুর গ্রামের মাদকাসক্ত সাদ্দাম হোসেনকে গ্রামবাসীর সম্মুখে জিজ্ঞাসা করলে সাদ্দাম জানান, মাঝি আলমগীর তাকে দিয়ে (সাদ্দাম) মাঝি বাচ্চুর নৌকার পিছনে কালো রংয়ের প্লাস্টিকের পলিথিনে মোড়ানো ২৯পিস ইয়াবা ট্যাবলেট কয়েকজন র্যাবের উপস্থিতিতে নৌকাতে রেখে আসে। বাচ্চু মাঝিকে ফাঁসাতে তারা এই চক্রান্তের সাথে যুক্ত হয়। এঘটনা প্রকাশ পাওয়ায় আলমগীর এলাকা থেকে পালিয়ে আত্মগোপন করে এবং তার ব্যবহৃত নাম্বার বন্ধ করে রাখেন।
এবিষয়ে অভিযুক্ত ফারুক জানান, তিনি আলমগীরকে নৌকা কিনার জন্য ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন। এজন্য প্রতি মাসে তাকে ৫ হাজার টাকা দিতো আলমগীর মাঝি। মাসে মাসে চাঁদা নেয়ার অভিযোগ সত্য নয়। মাঝি বাচ্চু মিয়াকে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর ঘটনায় তিনি জড়িত নয় বলে দাবি করেন।
সল্লাবাদ ইউনিয়নের ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন বলেন, বাচ্চুর ব্রহ্মপুত্র নদে ইব্রাহিমপুর হালগড়া ও ভৈরব পানাউল্লারচর খেয়াঘাটে ইউনিয়ন পরিষদের ইজারা নিয়ে এবং ট্রেড লাইসেন্স করে খেয়াঘাটে নৌকা চালায়। তার পাশের মাঝি আলমগীর তাকে ফাঁসানোর জন্য এ কাজ করেছে বলে এলাকাবাসী রহস্যটি উদঘাটন করেছে। অপরাধ স্বীকার করে আলমগীরের পিতা জনসম্মুখে ক্ষমা চেয়েছেন।
ভুক্তভোগী মাঝি বাচ্চু মিয়া বলেন, তিনি কোনো মাদকের সঙ্গে জড়িত না। দীর্ঘদিন ধরে খেয়াঘাটে যাত্রী পাড়াপাড় করেন। মামলায় যারা স্বাক্ষী হয়েছেন তারাই মাদক রেখে পরিকল্পিতভাবে র্যাব দিয়ে তাকে গ্রেফতার করিয়েছেন।
ভৈরব থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৮ এপ্রিল রাত ৯টায় কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানাধীন পানাউল্লাহরচর বধ্যভুমি খেয়াঘাটে র্যাবের উপস্থিতি দেখে মাঝি বাচ্চু মিয়া নিজের নৌকা থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে সঙ্গীয় ফোর্সের সহযোগিতায় বাচ্চু মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। ওই সময় জব্দ তালিকায় বর্ণিত ইব্রাহিমপুর গ্রামের শাহজালালের ছেলে মোহাম্মদ আলমগীর, আল হাদিস ও মোহাম্মদ সাবলকে স্বাক্ষী করা হয়।
এজাহারে বলা হয়, মাঝি বাচ্চু মিয়ার পরিহিত লুঙ্গির ডান কোমরে রক্ষিত ১টি কালো রংয়ের পলিথিনের মধ্যে ১টি সাদা স্বচ্ছ রংয়ের প্লাস্টিকের জীপারের ভিতর রক্ষিত অবস্থায় ২৯ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে র্যাব।
র্যাব ১৪ ভৈরব ক্যাম্পের কর্পোরাল মহিবুল আলম বলেন, গত ৮ এপ্রিল রাত ৯টায় ভৈরব থানাধীন পানাউল্লাহরচর বধ্যভুমি খেয়াঘাটে র্যাব সদস্যরা পৌঁছালে মাঝি বাচ্চু মিয়া দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে সঙ্গীয় ফোর্সের সহযোগিতায় বাচ্চু মিয়াকে আটক করি। পরে ভৈরব থানায় আমি বাদী হয়ে মামলা দায়ের করি। যার মামলা নং-১৫, তারিখ-৯ এপ্রিল ২০২৪খ্রি.। তাকে মারধর করার অভিযোগ সত্য নয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভৈরব থানার উপ পরিদর্শক শহিদুর রহমান বিষয়টি তদন্ত করে আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেবেন।