বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪০ পূর্বাহ্ন

গারো পাহাড় এলাকায় বুনোহাতির তাÐবে বসতবাড়ি লন্ডভন্ড, অতিষ্ঠ মানুষ

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ৬ জুলাই, ২০২৪
  • ৭৯ Time View

এফএনএস : শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকায় প্রায় প্রতিরাতেই বুনোহাতির পাল তান্ডব চালিয়ে ঘরবাড়ি, আমন ফসলের বীজতলা ও ফল বাগানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে আসছে। বর্ষা মৌসুমে তান্ডব চালানোয় গারো পাহাড়ি জনপদের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বুনোহাতির অব্যাহত তান্ডবে স্থানীয় অধিবাসীদের দ্বিগুণ দুর্ভোগ বেড়েছে। ক্ষুধার্ত হাতিগুলো এখন আর কোন বাঁধাই মানছে না। দিনের বেলায় গহিন জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে আর সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেই লোকালয়ে নেমে এসে তান্ডব চালাচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার রাত দুইটার দিকে উপজেলার সীমান্তবর্তী নয়াবিল ইউনিয়নের দাওধারা কাটাবাড়ি পাড়া এলাকার নাকুগাঁও স্থলবন্দরের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান মুকুলের ফল ও কাঠ বাগানে ঢুকে ৫০/৬০ টির বুনোহাতির দল একযোগে তান্ডব চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। এরআগে গত বুধবার (৩ জুলাই) রাতেও নাকুগাঁও স্থলবন্দরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় তান্ডব চালিয়ে কৃষকের ঘরবাড়ি, ধানচাল ও আমন ফসলের বীজতলা মাড়িয়ে বিনষ্ট করেছে।

হাতিগুলো আমন ফসলের মৌসুমে মাঠের ফসল ও গাছের কাঁঠাল খেয়ে সাবার করে। এখন মাঠে ফসল না থাকায় ক্ষুধার্ত হাতিগুলো বসতবাড়িতে হামলা চালাচ্ছে। হামলা চালিয়ে বসতবাড়িতে থাকা গোলার ধান চাল খেয়ে সাবার করে চলেছে। ঘরে থাকা আসবাবপত্র তছনছ, আমন ফসলের বীজতলা মাড়িয়ে বিনষ্ট ও বাগানের ফলগাছ ভেঙে চুরমার করছে। বৃষ্টির মৌসুম হওয়ায় পাহাড়ি এলাকার মানুষ হাতি তাড়াতে হিমশিম খাচ্ছে। এতে তাদের দ্বিগুণ দুর্ভোগ বেড়েছে। তাছাড়া বুনোহাতি এখন আর কোনো কিছু দেখে ভয় পায় না। এমনকি কোনো বাঁধাই মানে না।
দুই যুগেরও অধিক সময় ধরে প্রায় ৫০/৬০ টির বুনোহাতি দল গারো পাহাড়ি এলাকায় অব্যাহত তাÐব চালিয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে আসছে। হাতির তান্ডবে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। মানুষ মরছে হাতিও মরছে। কিন্তু এর কোনো স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না।

এলাকাবাসী জানান, বুনোহাতির তান্ডব সমাধান করতে হলে ভারত ও বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কেননা হাতিগুলো ভারত অংশে প্রবেশ করতে গেলে ভারতীয়রা কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলে। যে কারণে বছরজুড়ে শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চলাচল করে সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারীদের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করে আসছে। এলাকাবাসীর দাবি বুনোহাতির অত্যাচার বন্ধে দুই দেশের সমন্বয়ে এর স্থায়ী সমাধান করা হোক।

ক্ষতিগ্রস্ত বীরমুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল জানান, বৃহস্পতিবার রাত দুইটার দিকে ৫০/৬০ টি বুনোহাতি একযোগে তার বাগান বাড়িতে তান্ডব চালায়। তান্ডব চালিয়ে ঘরে থাকা চাল ও কবুতরের খাদ্য খেয়ে সাবার করেছে। ঘরে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরা ও ফ্রীজসহ সকল আসবাবপত্র তছনছ করেছে। এ সময় হাতিরদলটি ফল বাগানের আমগাছসহ ২৫টি বড় নারিকেল গাছ ভেঙে গুড়িয়ে ওইসব গাছের কচি পাতা খেয়ে সাবার করেছে। বুনোহাতি তার প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি করেছে।

গারো আদিবাসী নেতা লুইস নেংমিনজা বলেন, প্রায় প্রতিরাতেই বুনোহাতি বসতবাড়িতে হামলা করে গ্রামবাসীর ব্যাপক ক্ষতি করছে। এখন বৃষ্টির মৌসুমের কারণে হাতি তাড়ানো যায় না। তাছাড়া বুনোহাতি এখন মশাল দেখে তেমন ভয় পায় না। ডাক চিৎকার চেঁচামেচি ও হৈ-হুল্লোড় করে হাতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলাও সম্ভব হচ্ছে না। তাই বর্তমান বর্ষায় সরকারিভাবে রেইনকোট ও উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন লাইট সরবরাহ করা হলে হাতি তাড়ানো যেত।
ময়মনসিংহ বনবিভাগের মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জকর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি পরিদর্শন করা হয়েছে। তাদেরকে আবেদন সাপেক্ষে সরকারিভাবে ক্ষতিপুরণ দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ রানা বলেন, বুনোহাতি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ও আহতদের কাছ থেকে আবেদন সংগ্রহ করতে বনবিভাগকে বলা হয়েছে। তাদেরকে সরকারিভাবে অনুদান দেয়া হবে। এ ছাড়া ইতঃপূর্বে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে।

আপডেট সংবাদ পেতে শতাব্দীর কন্ঠ পড়ুন, শেয়ার করে সাথে থাকুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
All rights reserved © Shatabdir Kantha . Developed by SDTT Academy & Tech Liberty