মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪১ অপরাহ্ন

গ্রীষ্মকালীন ফল জামরুল

নূর আলম গন্ধী
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০২৪
  • ১৩৮ Time View

লেখা ও ছবি : নূর আলম গন্ধী :

গ্রীষ্মকালীন রসালো ফল জামরুল। এর ফলের আকর্ষণীয় রং-রূপ ছোট বড় সবাইকে কাছে টানে খুব। তবে বেশি টানে শিশুদের। জামরুল অঞ্চলভেদে নানা নামে পরিচিত- জামরুল, আমরুজ, আম্বুল, পানিফল, লকট, মÐল ইত্যাদি। আমাদের দেশের প্রায় সর্বত্রই কম বেশি জামরুল জন্মে। তবে বেশি জন্মে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, দিনাজপুর, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে। এর ইংরেজি নাম Water apple, Rose apple, Royal apple ইত্যাদি। পরিবার Myrtaceae, উদ্ভিদতাত্তিক নাম Syzygium samarangense

আদিনিবাস দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ। বাংলাদেশ ছাড়াও বিশে^র যে সকল দেশে জামরুল চাষ হয় তার মাঝে- ইন্দোনেশিয়া, ভারত, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, শ্রীলংঙ্কা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। জামরুল মাঝারি আকারের চিরসবুজ বৃক্ষ। গাছ উচ্চতায় সাধারণত ১৫-২০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। ঘন পাতা ও অধিক শাখা-প্রশাখায় বেশ ঝোপালো গাছ। গাছের কাঠ বেশ শক্ত মানের। পাতা আকারে বড়, রঙে সবুজ, উপরিভাগ মসৃণ, অগ্রভাগসূচালো, লম্বায় ১৮-২০ সেন্টিমিটার ও চওড়ায় ৭-৮ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। জামরুল গাছে ফুল ফোটার মৌসুম মার্চ-এপ্রিল মাস। মৌসুম বিবেচনায় ফল পাকার মৌসুম মে-জুন মাস।

তবে জাতভেদে বছরের অন্যান্য সময়েও জামরুল গাছে ফুল-ফল ধরতে দেখা যায়। গাছের শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগে গুচ্ছাকারে ফুল-ফল ধরে। ফুটন্ত তাজা ফুল হালকা সুগন্ধযুক্ত। ফুল রঙে সাদাটে। তাছাড়া ফুলে সবুজাব-সাদা রঙের ছোট পাপড়ি ৪টি, মাঝে থাকে অসংখ্য পরিমাণ লম্বা পরাগ কেশর ও গর্ভ । ফুলের গঠন, রং, পরিস্ফুটন বিন্যাস সব মিলে ফুটন্ত জামরুল ফুল খুবই নজরকাড়া। ফল স্বাদে হালকা মিষ্টি, আকারে ঘণ্টাকৃতির, ভেতরে থাকে অল্প পরিমাণে বীজ। বীজ বাদে ফলের পুরু অংশই ভক্ষণযোগ্য। জামরুলের রয়েছে রং বাহারি জাত। আমাদের দেশে লাল, সাদা, সবুজ, গোলাপি, মেরুন ও গোলাপি-লাল রঙের জামরুলের উৎপাদন চোখে পড়ে।

ফল ওজনে সাধারণত ৫০-৬০ গ্রাম বা জাতভেদে ফলের ওজন কম বেশিও হয়ে থাকে। বীজ ও কলম চারার মাধ্যমে বংশ বিস্তার সম্ভব। তবে সাধারণত কলম চারার মাধ্যমে বংশ বিস্তার করা হয়ে থাকে। তাছাড়া কলম চরার গাছে মাতৃগুণাগুণ বজায় থাকার পাশাপাশি কম সময়ের মাঝে গাছে ফুল-ফল ধরে। সরাসরি মাটি ও টবে চাষ উপযোগী। প্রায় সব ধরনের মাটিতে জামরুল জন্মে। তবে পানি নিকাশের উত্তম ব্যবস্থা সম্পন্ন রৌদ্রোজ্জ্বল উঁচু থেকে মাঝারি উঁচু জমি এবং দো-আঁশ মাটিতে বেশি ভালো জন্মে। স্থানীয় জাতের পাশাপাশি জামরুলের রয়েছে নানাবিধ উন্নত জাত। উন্নত জাতের জামরুলের মাঝে- বারি জামরুল-১, বারি জামরুল-২, বাউ জামরুল-১, বাউ জামরুল-২, বাউ জামরুল-৩ ও থাই জামরুল উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বারোমাসি জামরুলের বিস্তারও চোখে পড়ছে। এর মাঝে থাই বারোমাসি জামরুল উল্লেখযোগ্য।

জামরুল ফলে বিদ্যমান রয়েছে নানাবিধ পুষ্টি উপাদান এবং রয়েছে এর নানাবিধ উপকারী দিকও। এর তাজা ফল সরাসরি খাওয়া ছাড়াও ফল থেকে সালাদ, জ্যাম, জুস তৈরি করে খাওয়া যায়। ফলে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদানের মাঝে- জলীয় অংশ, হজমযোগ্য আঁশ, খাদ্যশক্তি, আমিষ, শর্করা, চর্বি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, সালফার, নিয়াসিন, আয়রন, লৌহ, ক্যারোটিন, ভিটামিন-এ, ভিটামিন বি-১, ভিটামিন বি-২ ও ভিটামিন সি উল্লেখযোগ্য। তবে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় জলীয় অংশ, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস, ক্যারোটিন ও খাদ্যশক্তি। জামরুলের উপকারী দিকগুলোর মাঝে- কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর করে, হজমশক্তি বৃদ্ধি করে, ক্যানসার প্রতিরোধ করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে, শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করে, তৃষ্ণা নিবারণ করে ও শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করে, দাঁত ও হাড় মজবুত করে, চোখ ভালো রাখে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

আপডেট সংবাদ পেতে শতাব্দীর কন্ঠ পড়ুন, শেয়ার করে সাথে থাকুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
All rights reserved © Shatabdir Kantha . Developed by SDTT Academy & Tech Liberty