এফএনএস : চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে ইতিহাসের সর্বোচ্চ কনটেইনার পরিবহন হয়েছে গত মে মাসে। ওই মাসে আমদানি-রপ্তানি সব মিলিয়ে ৩ লাখেরও বেশি কনটেইনার (প্রতিটি ২০ ফুট লম্বা) পরিবহন হয়েছে। যা বন্দরের ইতিহাসে মাসভিত্তিক হিসাবে সর্বোচ্চ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সরবরাহ সংকটে বিগত বছরগুলোয় আমদানি-রপ্তানিতে নেতিবাচক ধারা থাকলেও চলতি অর্থবছরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাড়ছে।
মূলত চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটি, কমলাপুর কনটেইনার ডিপো ও পানগাঁও নৌ-টার্মিনালের পণ্যভর্তি ও খালি কনটেইনার ওঠানো-নামানোর সংখ্যা হিসাব করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আমদানি ও রপ্তানি আলাদাভাবে বিবেচনায় নিলেও গত মে মাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মে মাসে আমদানি হওয়া সর্বোচ্চ ১ লাখ ৫৯ হাজার কনটেইনার পরিবহন হয়েছে। এর আগে সবচেয়ে বেশি আমদানি কনটেইনার পরিবহন হয়েছিল অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে, যার সংখ্যা ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮১২টি।
একইভাবে মাসভিত্তিক হিসেবে সবচেয়ে বেশি পরিবহন হয়েছে রপ্তানির ক্ষেত্রেও। মে মাসে চট্টগ্রাম বন্দরের অধীনে রপ্তানি কনটেইনার পরিবহন হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৪৫৬টি। চলতি অর্থবছরে এর আগে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি কনটেইনার পরিবহন হয়েছিল গত জুলাইয়ে ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৪৯টি। চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে দেশে কনটেইনারে পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। এর মধ্যে কনটেইনার পরিবহনের ৯৮ শতাংশই আনা-নেয়া হয় চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যবহার করে।
শিল্পের কাঁচামাল, মূলধনি যন্ত্রপাতি, বাণিজ্যিক পণ্য- এর সবই আনা হয় কনটেইনারে। আবার সমুদ্রপথে রপ্তানি পণ্যেরও প্রায় পুরোটাই কনটেইনারে পাঠানো হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় পণ্য আমদানি-রপ্তানি পরিবহন বেড়েছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে (জুলাই-মে) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কনটেইনার পরিবহন হয়েছে ২৮ লাখ ৯৩ হাজার ৯১৭টি। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ২৭ লাখ ১৯ হাজার ২৩টি।
সূত্র জানায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও দেশে ডলার সরবরাহ সংকটে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে আমদানি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। তবে সাম্প্রতিককালে ব্যবসায়ীদেরও ঋণপত্র খুলতে আগের মতো কঠোর নিয়ন্ত্রণে না পড়ায় আমদানিতে ইতিবাচক প্রবণতা তৈরি হয়েছে। দেশের উৎপাদন ব্যবস্থা সম্পর্কিত আমদানি কার্যক্রম আগামীতে আরো সহজ ও স্বাভাবিক করে আনতে পারলে অর্থনীতিতে আরো গতি আসবে।
বর্তমানে শুধু কনটেইনারই নয়, বন্দরে বেড়েছে কার্গো পরিবহনও। চলতি অর্থবছরে মে মাসেই চট্টগ্রাম বন্দরের অধীনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ কোটি ১১ লাখ কার্গো পরিবহন হয়েছে চলতি অর্থবছরে এর চেয়ে বেশি কার্গো পরিবহন হয়েছিল গত মার্চে ১ কোটি ১৩ লাখ ৩৪ হাজার। তবে অর্থবছরের ১১ মাস হিসাব করলে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ কোটি ৩৪ লাখ ৮৭ হাজার। গত অর্থবছরে একই সময়ে (২০২২-২৩) মোট কার্গো (কনটেইনার পণ্য ও কনটেইনারবিহীন পণ্য) পরিবহন হয়েছিল ১০ কোটি ৮০ লাখ ৩৬ হাজার।
নানান চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে রপ্তানি ঘুরে দাঁড়ানোর একটা আভাস মিলছে। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, চলতি অর্থবছরের মে মাসে সর্বমোট কনটেইনার পরিবহন ৩ লাখ ছাড়িয়েছে। বন্দরে এক মাসে এতসংখ্যক কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের নজির নেই। এর আগে আমদানি-রপ্তানি মিলিয়ে সর্বোচ্চ কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল গত বছরের মে মাসে ২ লাখ ৯৮ হাজারটি। আমদানি ও রপ্তানি আলাদাভাবে বিবেচনায় নিলেও মে মাসে রেকর্ড গড়েছে।