স্টাফ রিপোর্টার : কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার চৌগাংগা পুরান বাজার কামিল মাদ্রাসায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর, ছাত্রদের মারপিট এবং ছাত্রীদের শ্লীলতাহানীর অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে কমলভোগ গ্রামের মোঃ হবু মিয়ার ছেলে মোঃ রফিক এর নেতৃত্বে কয়েক জনের একটি দল মাদ্রাসায় হামলা চালায়।
ইটনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, পূর্ব বিরোধের জেরে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পালা-বদলের সুযোগে মোঃ রফিক তার কয়েকজন অনুসারী নিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে মাদ্রাসায় হামলা চালায়। শুরুতে তারা ঢিল ছোড়ে দরজা ও জানালার কাঁচ ভাংচুর করে। পরে প্রতিষ্ঠানের ভিতরে ঢুকে চেয়ার, টেবিল ও বেঞ্চ ভাংচুর করে। এক পর্যায়ে তারা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মারপিট করতে শুরু করে।
এখানেই থেমে থাকেনি হামালাকারী রফিকের বাহিনী। তারা মাদ্রাসার ছাত্রীদের গায়ে হাত তোলে, কাপড়-চোপর টানা-টানি করে শ্লীলতাহানীও করে। এতে একজন শিক্ষিকা ও ৬ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। মাদ্রাস কর্তৃপক্ষ রফিক বাহিনীকে থামাতে তাৎক্ষাণিকভাবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে থানা ও সেনা ক্যাম্পে যোগাযোগ করলে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হামলায় আহতরা কিশোরগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
উল্লেখ্য যে, বছর দুই আগে মোঃ রফিক ও তার সঙ্গীরা প্রায় রাতেই মাদ্রাসার নিচে মদ, গাঁজা সেবন সহ নানা অপকর্ম এবং দিনের বেলায় মাদ্রাসার ছাত্রীদের ইভটিজিং করত। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো আব্দুল হাকীম তাদের ডেকে এনে বিচার করলে ক্ষিপ্ত হয়ে মোঃ রফিক গত ১৭/০৪/২০২২ ইং তারিখে তাঁর (অধ্যক্ষ) উপর হামলা চালায়। এ ব্যাপারে একটি পুলিশ মামলা বিচারাধীন আছে।
পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলার অবনতির সুযোগ নিয়ে মোঃ রফিক নতুন করে সংগঠিত হয়ে গত মঙ্গলবার ইটনা উপজেলার চৌগাংগা কামিল মাদ্রাসায় হামলা চালায়। মাদ্রাসার আশপাশে রফিক ও তার গংদের আবাসস্থল হওয়ায় প্রায়ই তারা মাথাচারা দিয়ে ওঠে। তাই মাদ্রাসার শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইটনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সুদৃষ্টি কামনা করেছেন অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল হাকীম।
অভিযুক্ত মোঃ রফিক এর সাথে ফোনে কথা হলে তিনি জানা- গত ২৭ আগস্ট আমরা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল হাকীম এর দুর্নীতি এবং স্বেচ্ছাচারীতার প্রতিবাদে মাদ্রাসার সামনে মানববন্ধ করতে গিয়ে ছিলাম। কিন্তু অধ্যক্ষ তার লোকদের দিয়ে হামলা চালিয়ে আমাদের কর্মসূচিকে ভন্ডুল করে দেন। আমরা হামলা করিনি, বরং তিনি তার ছেলেদের নেতৃত্বে বহিরাগতদের। এমন কি অধ্যক্ষ তার মেয়েকে দিয়ে বোরকা ও জামা ছিড়িয়ে উল্ট শ্লীলতাহানীর নাটক সাজিয়েছেন।
মোঃ রফিক আরও বলেন- গত কয়েক বছর ধরে অধ্যক্ষ রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ম্যানেজিং কমিটিকে পাশ কাটিয়ে একক সিদ্ধান্তে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি কখনই মাদ্রাসার কোন নিয়োগ এবং আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে জবাবদিহি করতেন না। আমার বয়স ৩৪, এ বয়সে কি কেউ মাদ্রাসার সামনে দাঁড়িয়ে ইভটিজিং করে? আমি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, আমার স্ত্রী গার্মেন্টসে চাকুরি করে, ছেলে বড় হয়েছে, আপনিই বিচার করেন আমার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ কতটা ভিত্তিহীন। গত ১৭/০৪/২০২২ ইং তারিখে অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল হাকীম আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন, যা বিচারাধীন। খুব সহসাই মামলার রায় আমার পক্ষে আসবে।
যথাযথ কর্তৃপক্ষ এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত উভয় পক্ষের সাথে কথা বলে, তদন্তসাপেক্ষে বিষয়টির আশু সুরাহা করে চৌগাংগা পুরান বাজার কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন নিরাপদ করবেন বলে প্রতিবেদকের আশা।