প্রতিনিধি অষ্টগ্রাম, মো. নজরুল ইসলাম : বয়স আশি ছুঁই ছুঁই। বার্ধক্যজনিত নানান রোগে আক্রান্ত তিনি। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি পেতে চান বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। বলছিলাম কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামের কাগজীগ্রাম এলাকার বাসিন্দা মৃত গাজী মামুদ কাগজীর ছেলে ৭১ সালের রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিদ্দিকুর রহমান কাগজীর কথা।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে দীর্ঘ সময় কথা হয় তার সাথে। এসময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে ’৭১এর রণাঙ্গনের বিভীষিকাময় দিনগুলির স্মৃতিচারণ করেন।
’৭১এর ২৫ মার্চের পর ন্যাপ নেতা ভাষা সৈনিক কাজী আবদুল বারীর নেতৃত্বে ছাত্র ইউনিয়ন ও এলাকার সাধারণ ছাত্রদের নিয়ে গেরিলা সংগঠন করে ছিদ্দিকুর রহমান কাগজী ইপিআর সদস্য আ. হাফিজের কাছে প্রশিক্ষণ শুরু করেন এবং এপ্রিলের ৯/১০ তারিখে নেত্রকোনা হয়ে ভারতের মেঘালয়ের বারেঙ্গাপাড়ায় ন্যাপ-কমিউনিস্ট ও ছাত্র ইউনিয়ন পরিচালিত ট্রানজিট ক্যাম্পে চলে যান।
সেখান থেকে আসামের তেজপুর সালনী বাড়িতে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ শেষে বামনহাট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাঁচদিন উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরে সেখানকার কোম্পানী কমান্ডার অধ্যাপক নূরুল হকের অধীনে সহযোদ্ধা হোসেন আহম্মদ, আবদুল হেকিম ও ফজলুর রহমান খাঁনকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ১১নং সেক্টরে গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে (ডিজি নং-১১৬২৩৮৪) যোগদান করে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনার কলমাকান্দা, খালিয়াজুড়ি, ইটনা, মিঠামইন,
অষ্টগ্রাম, নিকলী ও বাজিতপুর উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেকুজ্জামান, রাশু চৌধুরী, কাজী আফতাব, এরশাদ আলী ও আবু ছালেকের সাথে বিভিন্ন রণাঙ্গনে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৬ ডিসেম্বর’৭১ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৪ জানুয়ারি’ ১৯৭২ ন্যাপ নেতা ভাষা সৈনিক কাজী আবদুল বারীর কাছে রণাঙ্গনে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র মার্ক ৪ রাইফেল নং- ২৭১১০ জমা দেন।
এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিদ্দিকুর রহমান কাগজী এ প্রতিনিধিকে জানান, জীবন বাজী রেখে গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে দেশ স্বাধীন করেছি। সহযোদ্ধারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। অনেকে যুদ্ধ না করেও মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু আমি রাজনৈতিক রোষানলে পরে দীর্ঘ নয়মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করার পরেও মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পাইনি। তিনি বলেন, মৃত্যুর আগে যদি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেতাম তাহলে মরেও সুখ পেতাম।
এবিষয়ে অষ্টগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার ও তার সহযোদ্ধা কাজী আফতাব বলেন, ছিদ্দিকুর রহমান কাগজী সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যাবতীয় প্রমাণাদি থাকা সত্তে¡ও তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গ্যাজেটভ‚ক্ত হতে পারেননি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।