প্রতিনিধি, তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) রুহুল আমিন : কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও উপজেলা সার-বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি তৌফিকুর রহমানের কাছে বিসিআইসি সার ডিলার আবদুস সালামের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। গত সোমাবার (৭ অক্টোবর) দৈনিক শতাব্দীর কণ্ঠ পত্রিকায় ‘সার ডিলার আবদুস সালামের দৌরাত্ব্য, গুদামঘর হিসেবে ব্যবহার করছেন ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
গতকাল মঙ্গলবার উপজেলা সার-বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৫নং দামিহা ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার মেসার্স আবদুস সালাম ট্রেডার্স (আবদুস সালাম) গত ১৫ বছর ধরে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনকে গুদাম ও দোকান বানিয়ে রেখেছেন, সার ও বীজ আইন ২০০৯ এর সমন্বিত নীতিমালা ৩ এর ২ ধারার পরিপন্থি। তার বিরুদ্ধে সাব ডিলার ও কৃষকের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অন্যত্র সার বিক্রি করারও অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, ভুয়া কৃষকদের নাম ব্যবহার করে স্বাক্ষর-টিপসই দিয়ে ভুয়া রেজিস্ট্রার খাতা তৈরির অভিযোগও রয়েছে। তিনি দামিহা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন।
তাড়াইল কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার দামিহা ইউনিয়নে ৪ হাজার ৭৭৩ জন কৃষক পরিবারের জন্য একজন বিসিআইসি সার ডিলার রয়েছে। অন্যদিকে তার অধীনে খুচরা ডিলারের সংখ্যা ৯ জন।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, দামিহা ১নং ওয়ার্ডের সাব ডিলার রাসেল ট্রেডার্স জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে ২ বস্তা কিনলেও তার নামে ৪০ বস্তা, সাব ডিলার শারজাহান ৪০ নিলেও তার নামে ১৯০ বস্তা ইউরিয়া সার লিখা রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে তাড়াইল উপজেলায় বর্ষার পানিতে ফসলি জমি তলিয়ে থাকে।
আরও ৭ জন সাব ডিলারের সাথে কথা হলে তারা বলেন, আবদুস সালামের মাধ্যমে খুচরা বিক্রেতা হিসাবে প্রতি মাসের বরাদ্দকৃত সার আমরা পাইনা। যার ফলে আমরা কৃষকদের চাহিদা মোতাবেক সার দিতে ব্যর্থ হই। কৃষক তাদের চাহিদা মোতাবেক সার না পাওয়াতে কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে এবং কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে।
ডিলার আবদুস সালামের নিকট সার চাইলে না দেওয়ার জন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান রিপনের মাধ্যমে বিভিন্ন অজুহাত দেখাতো ও চাহিদা মোতাবেক সার সরবরাহ করতো না। এমতাবস্থায় অন্য স্থান থেকে সার বেশী মূল্যে এনে এলাকার কৃষকদের চাহিদা মেটাতে হয়। অভিযোগে আরও উল্লেখ আছে, সে কৃষকদের নাম ব্যবহার করে ও স্বাক্ষর-টিপসই জালিয়াতি করে খাতা তৈরি করে রাখে।
সিন্ডিকেট করে ইউরিয়া ৩২, টিএসপি ৩০, এমওপি ২৪ ও ডিএপি ২৫ টাকা বা এর চেয়েও বেশি দামে বিক্রি করেন। সার বিক্রির পর ক্যাশ মেমো দেন না।
তাছাড়া ডিলারের খাতায় নামে বে-নামে কৃষকের নাম লিখে রাখলেও ২/৪ জন কৃষক ছাড়া অন্য কৃষকদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এমনকি এলাকার লোকজনও তাদের চিনে না। কৃষি উপসহকারীগণ মাঠ পর্যায়ে তদারকি না করায় বৈধ কোনো কাগজপত্র ছাড়াই ডিলার আবদুস সালাম এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলা, এক ইউনিয়ন থেকে অন্য ইউনিয়নে সার বিক্রি করছেন।
সার ও বীজ আইন ২০০৯ এর সমন্বিত নীতিমালা ৬ এর ৩ ধারায় উল্লেখ আছে যে, ডিলারশীপ প্রদানের পরবর্তী পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট ডিলার কর্তৃক পেশকৃত কাগজপত্রে কোনো প্রকার অসত্যতা প্রমাণিত হলে ডিলারশীপ বাতিল ও সংশ্লিষ্ট ডিলার কর্তৃক সমূদয় জামানত বাজেয়াপ্ত করা হবে। তদুপরি কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনবোধে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের করতে পারবে।
উল্লেখ্য যে, ডিলার আবদুস সালাম কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার টিসিবি’র ডিলার। তার বড় ভাই আবদুল হেকিম ইটনা উপজেলার চৌগাংগা ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার ও টিসিবি ডিলার এবং কিশোরগঞ্জ সদরের এমওসি ডিলার। আবদুল হেকিমের ছেলে সাইফুল ইসলাম অপু কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মহিনন্দন ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার।
তাড়াইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি
তৌফিকুর রহমান বলেন, দামিহা ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার আবদুস সালামের বিষয়ে লিখিত একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।