প্রতিনিধি, তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) রুহুল আমিন : দিনে গরম, রাতে ঠান্ডা আর ভোরে ঘাস, লতাপাতার ওপর জমে থাকা হালকা শিশির বিন্দু দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। শীত আসার আগেই সবাই প্রস্তুত হয় ঠান্ডা মোকাবিলার জন্য। হাওরাঞ্চলের শুরু কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার সর্বত্রই অন্যান্য এলাকার তুলনায় খানিকটা আগে ভাগেই শীত পড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে হেমন্তের দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। আর শীতের আগমনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে লেপ-তোষক তৈরির কারিগররা।
কার্তিকের সকালে শীতের শুরু হলেও পৌষ ও মাঘ-এ দুই মাস শীত মৌসুম হিসেবে বিবেচিত। তাইতো লেপ-তোষক তৈরি করতে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে দোকানগুলোয়। দোকানদার ও কারিগররাও ক্রেতাদের চাহিদা মতো লেপ-তোষক সরবরাহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
তবে শীত পড়লেও প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়তি থাকার কারণে আগের মতো বেচাকেনা নেই। শীতের তীব্রতা বাড়লে বেচাকেনা বাড়বে বলে মনে করছেন দোকানি ও কারিগররা।
গতকাল মঙ্গলবার তাড়াইল সদর বাজার বড় মসজিদ রোড তুলার দোকান ও লেপ-তোষক তৈরির দোকানগুলোয় ক্রেতাদের ভিড় দেখতে পাওয়া যায়। অনেকেই শীতের জন্য লেপ, তোষক ও বালিশ তৈরি করছেন। ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা।
লেপ-তোষকের কারিগর উপজেলার জাওয়ার ইউনিয়নের বোরগাঁও গ্রামের মুহাম্মাদ আলী ও রোকন মিয়া জানান, বছরের বেশিরভাগ সময়ই আমাদের অলস সময় কাটাতে হয়। অনেকটা বসে থাকতে হয়। কিন্তু শীতের ২-৩ মাস আমাদের মৌসুম। যার কারণে এই সময়ে আমাদের কাজের ব্যস্ততা বেশিই থাকে।
গত কয়েকদিন ধরে উপজেলার সর্বত্রই শীত পড়তে শুরু করেছে। যার কারণে আমাদের মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। এতে করে আমাদের লেপ-তোষক তৈরির কাজের চাপ যেমন বেড়েছে তেমনি আমাদের ব্যস্ততাও বেড়েছে।
সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত কাজ করে ক্রেতাদের চাহিদা মতো লেপ-তোষক তৈরি করে ডেলিভারি দিতে হচ্ছে। তারা আরও বলেন, তোষকের মজুরী ১৫০ টাকা, লেপ ১৫০ টাকা, জাজিম ৩০০ টাকা। দুজন কারিগর ৩০ মিনিট সময়ের মধ্যেই ভালো মানের একটি তোষক বা লেপ বা জাজিম তৈরি করে ডেলিভারি দিতে পারে।
একেকজন কারিগর প্রতিদিন ৬-৭টি করে লেপ বানাচ্ছে, তাতে করে প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকার মতো হাজিরা পাচ্ছে। তবে আশা করছি সামনে শীতের তীব্রতা আরও বাড়লে লেপ-তোষকের চাহিদা যেমন বাড়বে তেমনি আমাদের কাজের চাপও বাড়বে আর কাজের চাপ বাড়লে মজুরিও বাড়বে।
ক্রেতা আছমা বেগম ও আকতার হোসেন জানান, এবারে কিছুটা আগে ভাগেই শীত পড়তে শুরু করেছে। তাই লেপ-তোষক তৈরি করতে বাজারে এসেছেন। এছাড়া মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, তাই মেয়ে-জামাইয়ের জন্যও লেপ-তোষক ও বালিশ দিতে হবে। সেজন্য বাজারে কিনতে এসেছি।
তবে তুলার দাম খানিকটা বেশি চাচ্ছে দোকানিরা। যে তুলা ৬০ টাকা কেজি বিক্রি করেছে সেই তুলা এখন ৯০ থেকে ১০০ টাকা চাচ্ছে। তাই তুলাসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে লেপ-তোষকের দাম খানিকটা বেশিই মনে হচ্ছে, তবে গতবার দাম কম ছিল। রিকশাচালক জামাল উদ্দীন বলেন, বাড়িতে শীত নিবারনের লেপ নেই, তাই বাজারে এসেছি তুলা কিনতে, তুলা কিনে বাড়ি নিয়ে গিয়ে লেপ বানাবো। তবে গতবারের চেয়ে এবার তুলার দাম অনেকটাই বেশি।
তাড়াইল সদর বাজারের তুলার দোকানি তাজুল ইসলাম ও আবদুল হাই বলেন, সারা বছরে শীতের দুই থেকে তিনমাস আমাদের মৌসুম। এই সময়ে লেপ-তোষক বিক্রিও যেমন বাড়ে তেমনি কারিগররাও ব্যস্ত সময় পার করেন। কিন্তু বাকি ৮/৯ মাস অনেকটা অলস সময় পার করতে হয়। গতকয়েকদিন থেকে আমাদের এলাকায় শীত পড়েছে। ফলে লেপতোষক বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। শীতের তীব্রতা বাড়লে এসব পণ্যের চাহিদা আরও বাড়তে পারে।