প্রতিনিধি, তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) রুহুল আমিন : কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নিজেই রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে নোংরা দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশের কারণে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভিতরে ময়লার স্তুপ আর নোংরা টয়েলের কারণে এখানে চিকিংসা নিতে আসা রোগী ও তার স্বজনরা স্বস্থ্যঝুঁকিতে আছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নোংরা ও অপরিষ্কার টয়লেটে যেতে হয় নাক চেপে। হাসপাতালে আগত রোগী ও তাদের স্বজনদের প্রাকৃতিক কাজ সারতে যেতে হয় আশপাশে থাকা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে অথবা নিকটস্থ আত্মীয় স্বজনদের বাসায়। ফলে, এই হাসপাতালে ভর্তিরত রোগীদের ভীষণ স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
রোগীদের কয়েকজন জানান- নর্দমা ও উচ্ছিষ্টের গন্ধে আমরা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছি। এখানে তীব্র দুর্গন্ধের কারণে ১ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এমন ভয়ানক নোংরা পরিবেশ এর আগে আর দেখিনি। কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে এই হাসপাতালে থাকা সম্ভব নয়, সেখানে একজন রোগী কিভাবে চিকিৎসা সেবা নিয়ে সুস্থ হবে? একটু ভেবে দেখুন!
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মহিলা ওয়ার্ডে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শুয়ে আছেন কেন্দুয়া উপজেলার চর বৈরাগী গ্রামের রশিদা বেগম (৮০) ও মোজাফফরপুর গ্রামের নাসিমা বেগম ডায়রিয়ায় আক্রান্ত তার ২ বছরের শিশু বাচ্চা উসামাকে ভর্তি করেছেন ৩/৪ দিন হল। সাথে থাকা তাদের স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতাল ভয়ানক নোংরা ও বিষাক্ত আবর্জনাযুক্ত ড্রেনের দুর্গন্ধের কারণে আমরা কোনো কিছুই মুখে দিতে পারছি না। বাড়ি থেকে কেউ আসলে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না।
এখানে আসার পর থেকে রোগীর সাথে আমরা নিজেরাও কয়েকবার বমি করেছি। উপজেলার জাওয়ার ইউনিয়নের বোরগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে মানছুরা বেগম ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৪ দিন ধরে। মা’কে কলা দিয়ে ভাত খাওয়ানোর অবিরাম চেষ্টা করছেন তার মেয়ে নাসিমা।
বৃদ্ধা কিছুতেই খাবে না। নাসিমা বেগম বলেন, তাড়াইল হাসপাতালে এসেছেন মা’র চিকিৎসা’র জন্য। কিন্তু দূর্গন্ধের কারণে বারবার বমি করছে মা। নোংরা পরিবেশের কারণে ভাল হওয়ার পরিবর্তে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে। দু’দিন থেকে আমি নিজেও কিছু মুখে দিতে পারছি না। এই বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
জরুরি বিভাগের দৃশ্য আরও ভয়াবহ। কিছু বহিরাগত ও আউটসোর্সিং এ ঠিকাদারের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া ওয়ার্ড বয়দেরকে বিভিন্ন ধরনের ড্রেসিং, সেলাই, হাত-পা ভেঙে যাওয়া রোগী’র চিকিৎসা দিতে দেখা গেল। রোগী যে বেডে শুয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে ঠিক সেখানেই ফেলে হচ্ছে রক্তাক্ত গজ, কাপড়, তুলাসহ নোংরা উচ্ছিষ্ট। রোগীর ড্রেসিং এর ব্যান্ডেজ ও অন্যান্য ব্যবহৃত বর্জ্য দিয়ে ভরে গেছে ওয়ার্ডের চারপাশ। তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এমন বেহালদশায় রোগীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তাড়াইল উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ছাড়াও পাশের উপজেলা ইটনা, করিমগঞ্জ, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া, মদন ও ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার মানুষেরা চিকিৎসা নিতে আসেন তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
পরিবেশ সংরক্ষণ ১৯৯৭ এর বিধিমালা অনুযায়ী হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ সকল চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের মেডিকেল বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের বিধান রয়েছে। কিন্তু তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্সে মেডিকেল বর্জ্য প্রক্রিয়া, পরিশোধন ও ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর ও যুগোপযোগী কোনো ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হয়নি।
হাসপাতালে ময়লা আবর্জনার পাহাড়, নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে রোগীরা। এ ব্যাপারে তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আলমাছ হোসেন দুঃখ করে প্রতিবেদককে বলেন, এত ভয়াবহ অবস্থা আপনি না জানালে হয়তো জানা যেত না। ধীরে ধীরে এসব সমস্যার সমাধান করা হবে।