তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থেকে দেশি ফল বিলুপ্তির হুমকিতে পড়েছে। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে এবং কৃষি বিভাগের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যর্থতাই এর কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এতে দেশি ফলের স্বাদ পুষ্টি গুণ ও বৈচিত্র্য থেকে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে।
জানা যায়, জনসংখ্যার ক্রমাগত বৃদ্ধিতে বাড়িঘর নির্মাণে নির্বিচারে ফলের গাছ কাটা, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইত্যাদি ঐতিহ্যবাহী দেশি ফল হারিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে কৃষিবিদরা দায়ী করছেন। এ ছাড়াও বিদেশি ফলের আমদানিও দেশি ফলের বিলুপ্তির জন্য অনেকখানি দায়ী বলে তাদের অভিমত। বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় ও শ্রাবণ এই চার মাসেই পাওয়া যায় শতকরা ৫৪ শতাংশ দেশি ফল। আর বছরের আট মাসে পাওয়া যায় ৪৬ শতাংশ।
কৃষিবিদদের মতে, কৃষি উৎপাদন ও উর্বর মাটির এই দেশে গ্রাম-গঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন ধরণের ফলগাছের সংখ্যা ছিল শতাধিক। তবে নানা কারণে গত দুই দশকের ব্যবধানে এ সংখ্যা নেমে এসেছে অর্ধশতকে। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য মতে, বর্তমানে ফলের বাজারের ৮০ শতাংশই দখলে রেখেছে আমদানি করা ফল। এসব কেমিক্যাল মেশানো ফল খেয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি যেমন বাড়ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে পুষ্টিঘটিত সমস্যা। বাংলাদেশের আবহাওয়া ফল উৎপাদনে বিশেষভাবে সহায়ক। রোপণ না করা সত্তে¡ও প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো ফলের সংখ্যাও ছিল উল্লেখযোগ্য।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, বর্তমানে প্রধান ও অপ্রধান মিলিয়ে দেশি ফলের সংখ্যা ৪০-৫০টি। এগুলোর মধ্যে আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, জাম, নারিকেল, লেবু, আমলকি, সফেদা, আতা, কলা, জাম্বুরা, সুপারি, বাঙ্গি, বেল, কামরাঙ্গা, জলপাই, চালতা, পেঁপে, তেঁতুল, তাল, বেল, গাব, পানিফল, কদবেল, আনারস, জামরুল, লটকন, ডালিম, আমড়া, কমলা, অরবরই, সাতকড়া, লুকলুকি, তরমুজ উল্লেখযোগ্য।
তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলমাছ হোসেন দৈনিক শতাব্দীর কন্ঠ’কে বলেন, আমদানি করা ফলের বেশির ভাগই ম্যাচিউর (পরিপক্ক) থাকে না। ওইসব ফল পচে যাওয়া রোধে কার্বাইড, প্রিজারভেটিভসহ নানা ক্ষতিকারক ব্যবহার করা হয়। তার মতে, প্রাথমিকভাবে এসব ফল খেয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রভাব দেখা না গেলেও পরবর্তীতে তা লিভার সিরোসিস, কিডনি বিকলসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কার্যকারিতারোধ এবং কঠিন ও জটিল রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংসের কারণও হতে পারে। কেমিক্যাল মিশ্রিত ফল শুধু ঝুঁকিই তৈরি করছে না, পুষ্টিঘাটতিও সৃষ্টি করছে।
তাড়াইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমন কুমার সাহা এ বিষয়ে দৈনিক শতাব্দীর কন্ঠ’কে বলেন- আম, কাঁঠাল, লিচু, কুল ইত্যাদি হাতেগোনা কয়েকটি ফল দেখতে পাওয়া গেলেও অপ্রধান বেশির ভাগ ফলই আর সহজলভ্য নয়। বেসরকারি উদ্যেগের পাশাপাশি কৃষি বিভাগকেও দেশীয় ফলের উৎপাদন ও সম্প্রসারণে আরো অগ্রাধিকার দিতে হবে।