কৃষি প্রতিবেদ, কিশোরগঞ্জ : ধানের রোগবালাইয়ের মধ্যে ব্যাকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট (Bacterial Panicle Blight – BPB) একটি মারাত্মক রোগ, যা উৎপাদনে বড় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। ব্যাকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট (BPB) রোগটি (Burkholderia glumae) নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয়।
এই ব্যাকটেরিয়া একটি হলুদ রংয়ের বিষাক্ত টক্সোফ্লাভিন নামক পদার্থ নিঃসরণ করে। টক্সোফ্লাভিন ধানের কোষে বিষক্রিয়া ঘটায়, ফলে ধানের দানাগুলো সঠিকভাবে গঠিত হতে পারে না এবং চিটা হয়ে যায়। এই বিষাক্ত পদার্থটি ধানের ফুলের রেণুগুলোকেও নষ্ট করে। যার ফলে ধানের গাছে দানা বাঁধতে বাধা সৃষ্টি হয়।
ধানের শিষে দানাগুলো ধূসর, কালো বা গোলাপি রঙ ধারণ করে, এবং শিষগুলো ওজনহীন ও খাড়া হয়ে থাকে। এর ফলে ফসলের ফলন ও গুণগত মান উভয়ই কমে যায়, যা ধানের উৎপাদনে বড় বাধা সৃষ্টি করে।
ব্যাকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট রোগের ব্যাকটেরিয়া মূলত ধানগাছের পাতা এবং খোলে অবস্থান করে। প্রতিকূল পরিবেশেও এরা বেঁচে থাকতে সক্ষম এবং ধানগাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে উপরের অংশে চলে আসে। ধানের শিষ বের হওয়ার সময় ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে এবং ফুলের রেণুগুলো নষ্ট করে, যার ফলে ধানের দানা চিটাতে পরিণত হয়। গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া এই রোগ ছড়াতে সহায়ক।
এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন এবং অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার এই রোগের প্রকোপ বাড়ায়। রোগাক্রান্ত বীজ থেকে চারা উৎপন্ন হলে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়।
ব্যাকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট দমন ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বীজ বপনের পূর্বে তা শোধন করতে হবে। বীজ বপনের ৫-৬ দিন আগে কড়া রোদে শুকিয়ে নেওয়া কার্যকর হতে পারে। সঠিক নিয়ম মেনে ধানের চারা রোপণ এবং সার ও সেচ প্রদান করা উচিত। পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশ সার প্রয়োগ রোগ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। অতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহার এড়ানো উচিত।
লক্ষণ দেখা দিলে ৬০ গ্রাম এমওপি’র সাথে ২.৫ গ্রাম চিলেটেড, দস্তা ৬০ গ্রামের সাথে থিওভিট/কুমুলাস ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। ব্যাকটেরিসাইড- কাসুগামাইসিন + বিসমারথিওজল (কিমিয়া, ব্যাকটোবান, ব্যাকট্রল, টিমসেন, সানপোমা, ব্যাকটাফ ইত্যাদি) অনুমোদিত মাত্রায় স্প্রে করতে হবে।