স্টাফ রিপোর্টার : ছিলেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী, তবে আমজনতার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন একটি আধুনিক বাংলা গান গেয়ে। বিখ্যাত সেই ‘নাই টেলিফোন নাই রে পিয়ন নাইরে টেলিগ্রাম’ গানের শিল্পী একুশে পদকপ্রাপ্ত পাপিয়া সারোয়ার আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।
পাপিয়া সারোয়ারের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন পাপিয়া সারোয়ারের স্বামী সারওয়ার আলম। তিনি জানান, আজ মরদেহ বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়েছে। আগামীকাল জুমার নামাজের পর জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাঁর বাবা সৈয়দ বজলুর রহমানের কবরে তাঁকে সমাহিত করা হবে।
কয়েক বছর ধরে ক্যানসারে ভোগা পাপিয়া গত মাসে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সর্বশেষ তেজগাঁওয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে চলে গেলেন গুণী এই শিল্পী।
তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্বামী ও দুই কন্যাসন্তান রেখে গেছেন। ১৯৭৮ সালে সারোয়ার আলমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর বড় মেয়ে জারা সারোয়ার কলেজ অব নিউ জার্সিতে জীববিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক এবং ছোট মেয়ে জিশা সারোয়ার কানাডার অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন নির্বাহী।
পাপিয়া সারোয়ার ১৯৫২ সালের ২১ নভেম্বর বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্র-অনুরাগী পাপিয়া ষষ্ঠ শ্রেণিতে ছায়ানটে ভর্তি হন। পরে তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে ভর্তি হন। ১৯৬৭ সাল থেকে বেতার ও টিভিতে তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে গান করেন তিনি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন।
১৯৭৩ সালে ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রসংগীতে ডিগ্রি নিতে ভারতে যান। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনিই প্রথম ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে সেখানে স্নাতক করার সুযোগ পান। এর আগে তিনি ছায়ানটে ওয়াহিদুল হক, সন্জীদা খাতুন ও জাহেদুর রহিমের কাছে গানের দীক্ষা নেন। তাঁর প্রথম অডিও অ্যালবামটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮২ সালে।
দীর্ঘ সংগীত ক্যারিয়ারে রবীন্দ্রসংগীতের জন্য কোটি শ্রোতার ভালোবাসা পেয়েছেন পাপিয়া সারোয়ার। তাঁর ব্যতিক্রমী কণ্ঠ ও গায়কির প্রশংসা ছিল সংগীতাঙ্গনে। আধুনিক গানেও আছে তাঁর সাফল্য। ‘নাই টেলিফোন নাই রে পিয়ন নাইরে টেলিগ্রাম’ গানটি তাঁকে আপামর বাংলা গানের শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয়তা দিয়েছে। সংগীতবোদ্ধাদের মতে, আধুনিক গান বাছাইয়ে বেশ সচেতন ছিলেন বলে তাঁর অ্যালবামের সংখ্যা কম। তাঁর সর্বশেষ অ্যালবাম ‘আকাশপানে হাত বাড়ালাম’ প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে।
পাপিয়া সারোয়ার ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি থেকে রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ লাভ করেন। ২০২১ সালে পেয়েছেন একুশে পদক। পাপিয়া সারোয়ার জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলিন পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন একসময়। সর্বশেষ এই পরিষদের নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে ‘গীতসুধা’ নামে একটি গানের দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বরেণ্য এই সংগীতশিল্পী।