নিকলী প্রতিনিধি, আব্দুর রহমান রিপন :
কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার হাওর-নদী-খাল-ডোবাতে হাঁস পালন করে অভাবকে জয় করে ভাগ্য পালটাচ্ছেন খামারিরা। এতে কর্মসংস্থান হচ্ছে বেকার নারী-পুরুষের। এ খামারিদের সাফল্যে অন্যরাও উৎসাহিত হয়ে গড়ে তুলছেন ছোট-বড় খামার। এতে বৃদ্ধি পাচ্ছে খামার ও খামারির সংখ্যা। এ হাঁসের মাংস ও ডিম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। অপরদিকে প্রাণিজ পুষ্টির ঘাটতি পূরণসহ জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে হাঁসের খামারগুলো।
সাধারণত হাওর নদী খাল ও ডোবায় হাঁস পালনে খরচ তুলনামূলক কম হয়ে থাকে। এছাড়া স্থানীয় বাজারসহ অন্য উপজেলায় হাঁস ও ডিমের দাম বেশি হওয়ায় খামার ও খামারির সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে। এ বছর ডিমের দাম অন্য বছরের চেয়ে বেশি হওয়ায় হাঁস পালনে খামারিদের আগ্রহও বেড়েছে ব্যাপক হারে। এতে করে বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে আগের তুলনায় অনেক বেশি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার জোয়ানসাই, বোয়ালিয়া, নয়নবালি, শোলাবাড়িয়া, লাউডা, পেরাজুরী ইত্যাদি ছোট-বড় প্রতিটি হাওর-নদী, খাল ও ডোবার পাশে হাঁসের খামার রয়েছে। পাশাপাশি বাড়ি সংলগ্ন খালের পাশে ও হাঁসের খামার করছেন খামারিরা। এতে করে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে এর সংখ্যা।
হাঁসের খামার করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। খামারের হাঁস মূলত হাওরের জলজ কীট-পতঙ্গ, ঘাস, শামুক ঝিনুক ও ছোট মাছসহ নানান ধরনের প্রাকৃতিক খাদ্য খায়। আর বর্ষাকালে হাওরের পানিতে এসব খাদ্য বেশি পাওয়া যায়।
নিকলী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: আবু হানিফ বলেন উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে হাঁসের খামার আছে প্রায় ১৪৫টি। এসব খামারে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার হাঁস রয়েছে। বছরে প্রায় ২ কোটি ৪০ লক্ষ ডিম দেয়, যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৩৬ কোটি টাকা। এতে উপজেলার ডিমের চাহিদা পুরণ হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হচ্ছে।
নিকলী উপজেলার সদর ইউনিয়েনের নাগারছি হাটি গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে ছাদু মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এ বছর ৩০০০টি ডিম দেওয়া হাঁস পালন করছি, এখন প্রতিদিন গড়ে ২০০০ হাঁস ডিম দিচ্ছে। হাঁসের ডিম বিক্রি করে নিজের সংসার খুব ভালোভাবেই চলছে। সংসারের খরচের পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া থেকে শুরু করে যাবতীয় খরচ করেও অনেক টাকা আয় করতে পারছি।
উপজেলার একই গ্রামের মৃত নাসিরুদ্দিনের ছেলে মাহাবুব বলেন, ১৪০০ ডিম দেওয়া হাঁস কিনেছি, এখন প্রায় অর্ধেকর মতো হাঁস ডিম দিচ্ছে। আগে অন্য পেশায় থেকেও আমার আর্থিক উন্নতি হচ্ছিল না। তাই এ পেশায় এসে আমার আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে।
তবে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে ভ্যাকসিন বা পরামর্শে তেমন কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। হাঁসের রোগ হলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোন লাভ হয় না। পাশাপাশি হাঁস পালনে কোনো পরামর্শও তাদের থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি সহযোগিতা পেলে আমরা আরও লাভবান হতে পারতাম।
উপজেলার পূর্বগ্রামের আলী আকবর এর ছেলে এরশাদ আলী বলেন, ১২০০টি হাঁস কিনেছি ৯০০ হাঁস ডিমও দিচ্ছে সামনের মাসে ডিম আরও দিবে। এ ধরনের হাঁস পাঁচ মাস লালন-পালন করে বিক্রি করা যায়। এ মৌসুমে খরচ কম হয় হাঁস লালন-পালনে। হাঁসের খামার করে আমার জীবনে আর্থিক পরিবর্তন হয়েছে।
সরকারি সহযোগিতা পেলে আরও এগিয়ে যাবে হাঁস খামারের ব্যবসা। তবে হাওরে কিছু নদী, খাল-ডোবা লিজ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এতে করে আমাদের হাঁস পালনে ব্যাঘাত ঘটছে। তাই এগুলোর লিজ বাতিল করে উন্মুক্ত রাখলে হাঁসের খামার আরও বেড়ে যাবে।
নিকলী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো: আবু হানিফ বলেন, হাওর এলাকায় হাঁসের খামার আর্শিবাদ হতে পারে। সম্প্রতি জেলা সমন্বয় মিটিংয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। করোনা কালীন সময় খামারিদের আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল। ইদানিং কিছু কিছু খামারীদের কাছ থেকে অভিযোগ আসছে যে- নদী বা জলাশয়ে হাঁস পালন করা হতো, এখন এই নদী জলাশয় গুলো লিজ নিয়ে নিচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী।
তাই উপজেলার একটা হাওরকে উন্মুক্ত করে রাখলে নিকলী উপজেলায় হাঁসের মাংস ও ডিম উৎপাদনে বিপ্লব ঘটতে পারে। তিনি আরো বলেন, এ উপজেলায় হাঁস পালনে খামারিদের সচেতনতা কম। তাদেরকে আমরা সচেতন করতে কাজ করছি। নিকলী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস খামারিদের কম মূল্যে ভ্যাকসিন সুবিধা দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছে।