পাকুন্দিয়া প্রতিনিধি, মুহিব্বুল্লাহ বচ্চন :
মোঃ আমির হামজা (২১) ঢাকার মাতুয়াইলে একটি বইয়ের কোম্পানীর বাধাইয়ের কারখানায় কাটিং মেশিনে কাজ করতো। গত মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কারখানায় কাজ করার সময় যান্ত্রিক ত্রুটিতে তার ডান হাতের কব্জি শরীর থেকে সম্পূর্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালের একদল চিকিৎসক ৬ ঘন্টার চেষ্টায় সফলভাবে বিচ্ছিন্ন হাতকে প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। আর এতে আশার আলো দেখছেন আমির হামজার পরিবার।
আমির হামজার বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলার হাটাইল গ্রামে। তার বাবা মোঃ চাঁন মিয়া ঢাকায় একটি ট্রান্সপোর্ট কোম্পানিতে চাকুরি করেন। সেই সুবাদে ছেলেকেও ঢাকায় নিয়ে এসে চাকুরি দিয়েছিলেন।
আমির হামজার শরীর থেকে কব্জি বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবরটি নিশ্চত করেছেন তার ছোট ভাই আবুল কালাম এবং পঙ্গু হাসপাতালের সহকারী সার্জন ডা. মো. দ্বীন ইসলাম মিঠু। বর্তমানে আহত আমির হামজা ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধিন রয়েছে।
জানা যায়, আমির হামজা চার বছর যাবত ঢাকার মাতুয়াইলে একটি বইয়ের দোকানে কাজ করছে। গত মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কাটিং মেশিনে কাজ করার সময় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ডান হাত কাটা পড়ে। শরীর থেকে হাতের কব্জি একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়, সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৫ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেন। মেডিকেল বোর্ড পরীক্ষা নিরিক্ষা শেষ করে এক ঘন্টার মধ্যেই আলাদা হয়ে যাওয়া হাতের কব্জি প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু করেন। প্রায় ৬ ঘন্টাব্যাপী প্রচেষ্টায় ডাক্তারগণ সফল প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হয়।
চিকিৎসক দলের নেতৃত্ব দেন পঙ্গু হাসপাতালের প্লাষ্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. অভিজিত সরকার, সাথে ছিলেন- হেন্ড সার্জারী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিপুল কুমার দাস, প্লাষ্টিক সার্জারী বিভাগের সহকারী রেজিষ্টার ডা. ইসতিয়াক আহম্মেদ, মেডিকেল অফিসার ডা. দ্বীন ইসলাম মিঠু, সহকারী মেডিকেল অফিসার ডা. সারওয়ার, ডা.তামিম এবং ডা. ছাইদুজ্জামান।
এ ব্যাপারে পঙ্গু হাসপাতালের সহকারী সার্জন ডা. মো. দ্বীন ইসলাম মিঠু জানান, ডান হাতের কব্জি শরীর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যাওয়া আমির হামজা নামক এক ব্যক্তি পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হলে আমরা দ্রুত একটি মেডিকেল টিম গঠন করি। প্রাথমিকভাবে আমরা রোগীর শরীরের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা সম্পন্ন করে এক ঘন্টার মধ্যেই আমরা ওটির কাজ আরম্ভ করি, প্রায় ছয় ঘন্টার চেষ্টার পর কয়েকজন ডাক্তার সমন্বয়ে এটি সফল প্রতিস্থাপন করতে আমরা সক্ষম হই। শরীর থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া কোন অঙ্গ সমানভাবে কেটে গেলে অন্তত ছয় ঘন্টার মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে আসলে হয়তো প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়। তবে এটা খুবই সেনসেটিভ ব্যাপার। এর আগে বাংলাদেশে মাত্র ২ বার এ ধরনের অপারেশণ সফল হয়েছে।
আহত আমির হামজার ছোট ভাই কলেজ শিক্ষার্থী আবুল কালাম জানান, আমার বড় ভাই একটি দুর্ঘঠনায় তার ডান হাত শরীর থেকে সম্পূর্ন আলাদা হয়ে যায় কারখানার লোকজন তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায়। পঙ্গু হাসপাতালের ডাক্তারদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় হয়তো আমার ভাইয়ের একটি হাত ফিরে পেতে যাচ্ছে। আর এজন্য প্রথমেই মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে শোকরিয়া জানাচ্ছি, সেই সাথে আমি ডাক্তারদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের পরিবার এখন আশার আলো দেখছে।