আবু হানিফ, প্রতিনিধি, পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) : কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় পবিএ ঈদুল আজহাকে ঘিরে কামার পাড়ায় যেন দম ফেলার সময় নাই বললেই চলে। রাতদিন ব্যস্ত সময় পার করছেন কামার শিল্পীরা । আগামী ১৭ জুন সোমবার মুসলমানদের পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হবে। বছর ঘুরে বছর আসে, আসে ঈদুল আজহাও। আর বছরে এই সময়ই কামার শিল্পীরা ভালো সময় পার করেন।
কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে চারদিকে আনন্দ উল্লাস, উৎসব ও কোরবানির পশু কেনার ধুম পড়েছে। আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় কোরবানির উদ্দেশ্যে কেনা পশু জবাই করতে প্রয়োজন ছুরি, চাকু, দা, চাপাতি ইত্যাদি। তাই এখন লোকজন ছুটছেন কামারপাড়ায় ।
সারাবছর ব্যস্ততা না থাকলেও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে অপরিহার্য ছুরি, দা’সহ বিভিন্ন জিনিস তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন পাকুন্দিয়া উপজেলার পৌরসভাসহ বিভিন্ন হাট বাজারের কামার শিল্পীরা। দিন-রাত তারা তৈরি করছেন কোরবানির অনুসঙ্গ নানা যন্ত্রপাতি। পাকুন্দিয়া পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় দোকানেই কামার শিল্পীদের কর্মব্যস্ততা চোখে পড়ার মত। তারা গরম লোহা পিটিয়ে তৈরি করছেন দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার্য যন্ত্রপাতিসহ পশু কোরবানিতে ব্যবহৃত নানা ধরণর ছুরি, চাপাতি, দা, বটিঁ, দামা। এই কামার শিল্পীদর বেশিভাগই হিন্দু সম্প্রদায়ের।
ঈদকে সামনে রেখে কামারের দোকান কেউ আসছেন দা, ছুরি, চাপাতি, বটিঁ ক্রয় করতে। আবার কেউ আসছে পুরাতন দা, ছুরি সহ লোহার জাতীয় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি শান করাতে।
এ বছর লোহার তৈরী এসব জিনিসের দাম নেয়া হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ। এ বিষয়ে কামার শিল্পীরা জানান, লোহার দাম বেড়ে যাওয়ায় দা, ছুঁরি, চাপাতি ইত্যাদির দাম বেশী পড়ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পাকুন্দিয়া পৌরসভারসহ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে প্রায় ২০-২৫টি হাট রয়েছে। ওই হাটগুলোতে কামার শিল্পীরা কোরবানির পশু জবাইয়ের জন্য ছুরি, দা, চাপাতি, বটিঁ, দামাসহ নানা যন্ত্রপাতি দিন রাত তরি করছেন। পাকুন্দিয়া উপজেলার প্রধান হাটগুলো হলো কোলাদিয়া, পুলেরঘাট, কালিয়া চাপড়া পুরাতন বাজার, পাকুন্দিয়া পৌর সদর, হোসেন্দী, নারান্দি, মির্জাপুর, মঠখলা,বটতলা, জাঙ্গালিয়া, বুরুদিয়া, পাকুন্দিয়া পৌর সভা আলুর স্টোর, আসুতিয়া।
কামার শিল্পীদের অনেকেই পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া এ পেশায় রয়েছেন। ঐতিহ্যের টানে তারা অন্য পেশায় যেতে চাননা। তাই সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও তারা অপেক্ষায় থাকেন মুসলমানদের এ ধর্মীয় উৎসবের জন্য। কামার শিল্পী সৈয়দুজ্জান জানান, বছরের বেশিভাগ সময় কাজ না থাকায় অলস দিন কাটাতে হয়।
ফলে ওই সময় কোন উপার্জন না থাকায় বহু কষ্টে ছেলেমেয়ে নিয়ে দিন যাপন করতে হয়। ঈদুল আজহা এলেই হাতে কাজ বেড়ে যায়। বছর ছয় মাস কাজ করে যা উপার্জন হয়, ঈদুল আজহার সময় প্রায় দ্বিগুণ উপার্জন দিয়েই তাই তাদের সারা বছর পার করতে হয়। তাই ঈদুল আজহা উপলক্ষে সারা বছরের ঘাটতি পোষাতে নিরলস পরিশ্রম করে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি তৈরি করছেন কামার শিল্পীরা।