স্টাফ রিপোর্টার : পূর্বের সকল রেকর্ড ভেঙ্গেছে ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স। এবার পাওয়া গেছে ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা। যা এ যাবত কালের সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। গত (শনিবার ২০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৭টায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ ও ৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দানবাক্স গুলো খোলা হয়। চার মাস ১০দিন পর ৯টি লোহার দানবাক্স থেকে ২৭ বস্তা টাকা পাওয়া যায়। এরপর মসজিদের দ্বিতীয় তলার মেঝেতে ঢেলে চলে গণনা কার্যক্রম। গণনায় ৯৮ জন মাদ্রাসার ছাত্র ৯ জন শিক্ষক ৭০ জন ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ১০ জন আনসার সদস্য অংশগ্রহণ করেন। দিনভর গণনা শেষে রবিবার (২১ এপ্রিল) রাত ২টায় দানের পরিমাণ জানা যায়। তথ্য নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মমতাজ।
দানবাক্স থেকে টাকা ছাড়াও স্বর্ণ, রুপা, রিয়েল, রিংগিত, ডলার পাওয়া গেছে। প্রতি তিনমাস পর পর পাগলা মসজিদের দানবাক্স খোলা হলেও এবার রমজান মাসের কারণে চার মাস ১০দিন পর খোলা হয়। কথিত আছে- খাস নিয়তে এ মসজিদে দান করলে মানুষের মনের আশা পূরণ হয়। আর সে কারণে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষজন এখানে দান করে থাকেন। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে প্রতারণার বিষয়ে সচেতন থাকার আহŸান জানান মসজিদটির খতিব মাওলানা আশারফ উদ্দিন। তিনি বলেন- বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাগলা মসজিদের নাম ব্যবহার করে একটি প্রতারক চক্র বিভিন্ন ভাবে দানের টাকা পৌঁছে দেওয়া, মসজিদের উন্নয়নের জন্য দান করার নাম করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এ দিকে সাধারণ মানুষের সর্তক থাকতে হবে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন- পাগলা মসজিদের দানবাক্স খালি হওয়ার পর থেকে পরবর্তী খোলার সময় পর্যন্ত ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে নজরদারি করা হয়। এবং ডিভাইসগুলো সবসময় সচল রাখা হয়। পুলিশের টহল টিম কাজ করে এবং গণনার দিন বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, পাগলা মসজিদে দানের টাকার পাশাপাশি গবাদিপশু, হাঁস, মুরগী, গরু, ছাগল দান করা হয়। প্রতিদিন আসর নামাজের পর দানকৃত এসব পশু নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। এখানে অনলাইনের মাধ্যমে দান করার কোন ব্যবস্থা নাই। যা দান হয় সরাসরি দান করতে হয়। পাগলা মসজিদের প্রতি মানুষের এমন আবেগ আছে বলে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাওয়া যায়। ইসলামিক কমপ্লেক্স স্থাপনের লক্ষ্যে পরামর্শক প্রক্রিয়া এ মাসেই শেষ হবে। এরপর মসজিদের উন্নয়ন কাজে হাত দেওয়া হবে। যেখানে একসাথে ত্রিশ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারবে। এই মসজিদের অর্থ বাহিরে অপচয় করার কোন সুযোগ নেই। সকল অর্থ ব্যাংকে জমা থাকে অর্থের লভ্যাংশ এখানকার সাধারণ মানুষের উপকারে ব্যয় করা হয়। মসজিদ নির্মাণের জন্য সকলকে দান করার আহŸান জানান তিনি।
এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর পাগলা মসজিদের দানবাক্স খোলা হয়। সে সময় ২৩ বস্তা টাকা পাওয়া যায়। এসব বস্তা থেকে ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা পাওয়ায় যায়। এর আগে কখনও এত টাকা পাওয়া যায়নি। সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়ে গণনা শেষ হয় রাত সাড়ে ১০টায়। গণনায় অংশ নেয় প্রায় ২০০ জনের একটি দল। টানা প্রায় ১৫ ঘন্টা গণনা শেষে টাকার পরিমাণ জানা যায়। গণনায় ৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট, ১৩০ জন শিক্ষার্থী, ৬০ জন ব্যাংক কর্মকর্তা, ১০ জন শিক্ষক এবং ১০ জন আনসার সদস্য অংশগ্রহণ করেছিলেন।