মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫১ পূর্বাহ্ন

বাংলার সুস্বাদু ফল লিচু

লেখা ও ছবি : নূর আলম গন্ধী
  • Update Time : বুধবার, ২২ মে, ২০২৪
  • ১১৮ Time View

লখো ও ছবি : নূর আলম গন্ধী : গোলাপি ঘ্রাণ আর আম্ল মধুর স্বাদের গ্রীষ্মকালীন রসালো ফল লিচু। গ্রাম কি বা শহর ছোট বড় সবার কাছে বেশ পরিচিত, আকর্ষণীয় এবং পছন্দের ফল। আমাদের দেশের প্রায় সব এলাকায় কম বেশি লিচু জন্মে। তবে বৃহত্তর রাজশাহী, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, যশোর, পাবনা, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম এলাকায় বেশি পরিমাণে লিচু উৎপাদন হয়। তাছাড়া এ সকল অঞ্চলের লিচু স্বাদে-গুণে অতুলনীয়। এর ইংরেজি নাম Litchi , পরিবার Sapindaceae, উদ্ভিদতাত্তি¡ক নাম Litchi chinensis। আদিনিবাস চীন।

বাংলাদেশ ছাড়াও ভিয়েতনাম, ভারত, বার্মা, ইন্দোনেশিয়া, জাপানের দক্ষিণাঞ্চল, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ব্রাজিল, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, মরিশাস প্রভৃতি দেশে লিচু চাষ হয়। লিচু মাঝারি থেকে বড় আকারের চিরসবুজ বৃক্ষ। গাছ উচ্চতায় সাধারণত ৩০-৩৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। গাছ বিস্তৃত অধিক শাখা-প্রশাখাযুক্ত। কাঠ বেশ শক্ত ও মজবুত মানের, রঙে লালচে। বাকল রঙে ধূসর। পাতা রঙে গাঢ় সবুজ, উপরিভাগ মসৃণ, অগ্রভাগ সূচালো, লম্বায় ১৪-১৫ সেন্টিমিটার এবং চওড়ায় ৩-৪ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। প্রায় সব ধরনের মাটিতে লিচু জন্মে। তবে পানি নিকাশের উত্তম ব্যবস্থা সম্পন্ন রৌদ্রোজ্জ্বল উঁচু থেকে মাঝারি উঁচু ভূমি ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে বেশি ভালো জন্মে। প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে।

স্থানীয় জাতের পাশাপাশি আমাদের দেশে চাষকৃত লিচুর উন্নত জাতের মাঝে- বারি লিচু-১, বারি লিচু-২, বারি লিচু-৩, বারি লিচু-৪, বারি লিচু-৫, চায়না-৩, বেদানা, বোম্বাই, মঙ্গলবাড়ি, মোজাফ্ফরপুরী, মাদ্রাজী, পূরবী, গুলাবী, কদমি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বীজ ও কলম চারার মাধ্যমে বংশ বিস্তার করা সম্ভব। তবে বীজ থেকে তৈরি চারার গাছে একদিকে ফল ধরতে সময় লাগে বেশি এবং অন্যদিকে ফল গাছের মাতৃগুণাগুণ বজায় থাকে না। তাই লিচু চাষের বেলায় বংশ বিস্তারের ক্ষেত্রে কলম চারার মাধ্যমে বংশ বিস্তার সর্বাধিক উপযোগী এবং দ্রুত সময়ের মাঝে ফল ধরে। কলম চারার গাছে সাধারণত ৩-৫ বছরের মাঝে গাছে ফুল-ফল ধরে। লিচু গাছে ফুল ফোটার মৌসুম বসন্তকাল, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস। শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগে বড় মঞ্জরিতে গুচ্ছাকারে ফুল-ফল ধরে। ফুল আকারে ক্ষুদ্রাকৃতির ও পাপড়িবিহীন, রঙে সবুজাব-সোনালি। ফুটন্ত ফুলে মধু থাকে আর তাই ফুল ফোটার সময়ে গাছে মৌমাছিসহ নানান রকম পতঙ্গের আগমন লক্ষ করা যায়।

লিচু ফুলের মধু উৎকৃষ্টমানের বলে মধু চাষিগণ মধু সংগ্রহের উদ্দেশ্যে এ সময়ে লিচু বাগানে মৌ-বক্স স্থাপন করে থাকেন এবং মধু আহরণ করেন। লিচু ফল আকারে ডিম্বাকার থেকে হৃদপিণ্ডকার, কাঁচা ফল রঙে সবুজ, পাকা ফল রঙে গোলাপি লাল থেকে সিঁদুর লাল রঙের হয়ে থাকে। ফলের উপরিভাগে খোসা অমসৃণ ও হালকা কাঁটাযুক্ত, ভেতরে থাকে সুমিষ্ট সাদাটে রঙের শাঁসের মাঝে একটি মাত্র বীজ। বীজ আকারে লম্বাটে, চকোলেট রঙের। ফল ওজনে সাধারণত ২০-২৫ গ্রাম পর্যন্ত ওজন হয়ে থাকে। জাতভেদে লিচু আগে-পরে পাকে আর তাই মৌসুম বিবেচনায় মে মাসের শুরুতে গাছে লিচু পাকা শুরু হয়, তবে মে মাসের মাঝামাঝি থেকে মে মাসের শেষ সময় পর্যন্ত লিচু পাকার ভরা মৌসুম এবং এর ব্যাপ্তি থাকে জুন মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত।

পাকা লিচু ফলে বিদ্যমান রয়েছে নানাবিধ পুষ্টি উপাদান এবং রয়েছে এর নানান উপকারী দিকও। লিচু ফল হিসেবে সরাসরি খাওয়া ছাড়াও লিচুর রস থেকে চকোলেট, জুস ও চকোলেট জাতীয় খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহার হয়ে থাকে। ফলে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদানের মাঝে- জলীয় অংশ, হমজযোগ্য আঁশ, খাদ্যশক্তি, আমিষ, শর্করা, চর্বি, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, আয়রন, লৌহ, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন বি-১, ভিটামিন বি-২, ভিটামিন-বি৬, রিবোফ্লাভিন, থায়ামিন, নায়াসিন ও ভিটামিন-সি উল্লেখযোগ্য।

তবে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় খাদ্যশক্তি, শর্করা ও ভিটামিন-সি। লিচুর উপকারী দিকগুলোর মাঝে- দেহের শক্তি বাড়ায়, দাঁত, হাড়, ত্বক ও নখ ভালো রাখে, শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন শোষণে সহায়তা করে, হজমশক্তি বৃদ্ধি করে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, চোখ ভালো রাখে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
লিচু ফলের ছবিটি ক্যামেরাবন্দি করি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার বনগ্রাম পশ্চিমপাড়া গ্রামের হাবিবুর রহমান মাস্টারের বসতবাড়ি থেকে।

আপডেট সংবাদ পেতে শতাব্দীর কন্ঠ পড়ুন, শেয়ার করে সাথে থাকুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
All rights reserved © Shatabdir Kantha . Developed by SDTT Academy & Tech Liberty