ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, আহসানুল হক জুয়েল :
কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুরে নতুন কিন্ডারগার্টেন উদ্ভোধন করলেন ইউএনও। এ নিয়ে সমালোচনা সচেতন মহলে। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়ন পরিষদ ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সম্মুখ রাস্তার বিপরীত পাশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেসমেন্ট এরিয়াতে গত ২১ ডিসেম্বর শনিবারে সকাল ১১টার দিকে ইউএনও ফারাশিদ বিন এনাম উপস্থিত হয়ে বোর্ড বাজার আইডিয়াল কিন্ডারগার্টেন স্কুল উদ্ভাবন করেন। উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে সচেতন মহলে এ নিয়ে না না প্রশ্ন উঠেছে?
এদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকের নিবন্ধন নীতিমালায় সেহেতু দূরত্বের নির্দিষ্ট কোন সীমা উল্লেখ নেই সেই সুযোগই সাধারণত নিয়ে থাকেন কিন্ডারগার্টেন মালিকরা। তবে সরকারিভাবে কৌশলে চেষ্টা করা হয়ে থাকে দূরত্ব বজায়ের ক্ষেত্রে। এমন যুক্তিও তুলে ধরেন।
স্থানীয়ভাবে আলোচনা রয়েছে সরকারিভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয় যেখানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ানোর লক্ষ্যে মা সমাবেশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের প্রচার প্রচারণা চালিয়েও হিমসিমে খাচ্ছে অনেক বিদ্যালয়। সেখানে নতুন একটা কিন্ডারগার্টেনে উদ্ভোধন করা মানেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে আরো ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া।
একটি সূত্রে জানা যায়, বাজিতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সেখানে দাওয়াত দেয় হয়েছিল। ইউএনওকে ফূলেল শুভেচ্ছা জানাতেও দেখা গেছে প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তি বর্গের উপস্থিতিতে। ইউএনও ফারশিদ বিন এনামককে ক্রেস্ট প্রদান করতেও দেখা যায় সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উদ্বোধনের বিভিন্ন স্থিরচিত্র দেখা গেছে।
বোর্ড বাজার আইডিয়াল কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ডালিম-এর সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি ক্যাচমেন্ট এরিযার ভেতরে কিন্ডারগার্টেন তৈরি করেছেন এমন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। পাশাপাশি ইউএনওকে দিয়ে উদ্বোধনের বিষয়টিও স্বীকার করেন।
৫২নং ডুয়াইয় গাঁও সুলতানপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাসলিমা আক্তারকে প্রশ্নে করতেই অভিযোগের সুরে বলেন, এই স্কুলটি ১৯০৬ সালে নির্মিত, বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ২৬৩ জন, শিক্ষক রয়েছেন ১০ জন। স্কুলের সামেনে স্থাপত কিন্ডারগার্টেনটি শিক্ষার্থী সংগ্রহের ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ হবে বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি অবহিত করেছেন।
তবে সচেতন মহলের ভাষ্য, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে যদি কিন্ডারগার্টেন স্থাপনের ক্ষেত্রে আইনি কোন বাধ্যবাধকতা না থাকে, তাহলে সরকারি স্কুলের পাশে কিন্ডারগার্টেন স্থাপনে উৎসাহ বহুগুণে বেড়ে যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে সরকারি প্রাথমিকের শিক্ষা কার্যক্রম। কমে যেতে পারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি। এ কারণে, যদি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ জনের নিচে নেমে আসে তবে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদানও অন্য বিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত হয়ে যাবে। তাই সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান রক্ষার্থে সরকারিভাবে তদারকির প্রয়োজন বলেও তারা যুক্তি তুলে ধরেন।
বাজিতপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সাখাওয়াত হোসেনের সাথে এই বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, ২০২৩ সালের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম নীতিমালায় উল্লেখ আছে যে, কেউ ইচ্ছে করলেই নিয়ম বহির্ভূতভাবে যে কোন স্থানে কিন্ডারগার্টেন স্থাপন করতে পারে না। এই বিষয়ে লিখিতভাবে কেউ তাকে জানায়নি বলেও উল্লেখ করেন। তবে খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলেও জানান।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মজিব আলম এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রথমে তিনি জানতে চেয়েছেন কে উদ্বোধন করেছেন? ইউএনও’র কথা বলতেই জবাবে প্রাথমিকের নিবন্ধন নীতিমালায় যেহেতু দূরত্বের কোন বিষয় উল্লেখ নেই সেই সুযোগই সাধারণত নিয়ে থাকেন কিন্ডারগার্টেন মালিকরা। এমনি মতামত ব্যক্ত করেন তিনি। তবে সেক্ষেত্রে যতটুকু পারা যায় তাদেরকে বুঝিয়ে দূরে রাখার চেষ্টা করা হয়ে থাকে বলেও জানান। পাশাপাশি এই বিষয়টি তার জানা নেই বলেও জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারাশিদ বিন এনামের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কিন্ডারগার্টেন উদ্বোধনে তিনি ছিলেন কি না, জবাবে সত্যতা স্বীকার করলেও ভিন্ন প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তবে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে বলে জানান।