স্টাফ রিপোর্টার, আব্দুল কাদির : জাতীয়ভাবে উন্নতমানের দানাজাতীয় শস্যের চাহিদা মেটানোর জন্য কিশোরগঞ্জে বিএডিসি বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের সামনে এবার বোর মৌসুমে ১৪০২ মে. টন বীজ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের যশোদল সার কমপ্লেক্সে বিএডিসি’র ধান, গম, ভুট্টার উন্নততর বীজ উৎপাদন এবং উন্নয়ন কেন্দ্রটির অবস্থান। বিএডিসি’র সার গুদামকে বীজ গুদাম হিসেবে ব্যবহার উপযোগী করে অত্র কেন্দ্রের যাত্রা শুরু করে। বিএডিসি’র বীজ সংগ্রহ উইংয়ের অধীনে অধিক বীজ উৎপাদন প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে এই প্রকল্পটি ধান, গম ও ভুট্টার উন্নততর বীজ উৎপাদন এবং উন্নয়ন প্রকল্প নামে নামকরণ করা হয়।
কৃষি বিপ্লবের নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে কিশোরগঞ্জ বিএডিসি দেশের অন্যান্য বীজ উৎপাদনের কেন্দ্র থেকে অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে। জেলার চুক্তিবদ্ধ চাষীদের মাধ্যমে বীজ উৎপাদন করে উৎপাদিত বীজ অত্র কেন্দ্রে সংগ্রহ করা এবং সংগৃহীত বীজ অত্র কেন্দ্রেই প্রক্রিয়াজাত করে পরবর্তী মৌসুমে বীজ বিতরণ বিভাগের মাধ্যমে চাষীদের মাঝে ১০ বস্তা করে বীজ বিতরণ করা হয়।
কেন্দ্র শুধুমাত্র দানাদার জাতীয় শস্য বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ করা হয়। তাছাড়া বেসরকারি বিভিন্ন বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে সেবা প্রদান করা হয়। বর্তমানে এ বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের সামনে বোর মৌসুমের জন্য ১৪০০ মেট্রিক টনের উপরে বীজ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত কার্যক্রম চলছে।
এর মধ্যে বোর বীজ ব্রি-ধান ২৯ প্রত্যায়িত ৫৬৭ মে. টন, ব্রি-ধান ৫৮ প্রত্যায়িত ১৯ মে. টন, ব্রি-ধান ৮৯ প্রত্যায়িত ৪০৯ ও মান ঘোষিত ২৩৮ মে. টন, ব্রি-ধান ৯২ প্রত্যায়িত ৩৭ মে. টন ৫০০ কেজি ও মান ঘোষিত ৪৪ মে. টন, ব্রি-ধান ৮৮ প্রত্যায়িত ৪৪ মে. টন, ব্রি-ধান ১০০ প্রত্যায়িত ২৫ মে. টন, বিআর ১৬ প্রত্যায়িত ১০ মে.টন ও বিনা ধান ২৫ প্রত্যায়িত ৯ মে. টন।
এছাড়াও এ বীজ উৎপাদন কেন্দ্রে চুক্তিবদ্ধ চাষীদের মাধ্যমে দানাদার ফসল বিশেষত ধান, গম ও ভুট্টার গুণগত মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ বীজ উৎপাদনকারী চাষী তৈরী ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন, দানা শস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, ভিত্তি বীজ পরিবর্ধনের মাধ্যমে প্রত্যায়িত ও মানঘোষিত বীজ উৎপাদন করা এবং উৎপাদিত বীজের সরবরাহ প্রদান করে তা কৃষকদের হাতের নাগালে পৌঁছানো।
বেসরকারি খাতে বীজ শিল্প প্রতিষ্ঠানকে কারিগরি সহায়তা প্রদান করাসহ বীজ নীতির সফল বাস্তবায়ন করাই এ বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের মূল লক্ষ্য ও বৈশিষ্ট্য। বিএডিসির বীজ উৎপাদন কেন্দ্রে কর্মরত কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক তদারকিতে এ উৎপাদন কেন্দ্রে বীজের গুণগত মান খুবই উন্নত এবং বাজারে তুলনামূলকভাবে চাহিদাও বেশি। দেশের শস্য ভান্ডার বলে খ্যাত কিশোরগঞ্জ হাওরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কৃষকদের নিকট এ কেন্দ্রের বীজ ক্রয় করার আগ্রহ সবচেয়ে বেশি।
কিশোরগঞ্জ শহরের পুরান থানার আমানত বীজ ভান্ডারের সত্ত্বাধিকারী মো. বাচ্চু মিয়া জানান, আমাদের কিশোরগঞ্জের বিএডিসি’র বীজের সাথে কোন তুলনা নেই। বীজের গুণগত মান ও উন্নত মানের বৈশিষ্ট্যর কারণে এ কেন্দ্রের বীজ ক্রয় করতে মৌসুমের শুরুতেই কৃষকরা আগ্রহী হয়ে ওঠে।
কিশোরগঞ্জ বিএডিসি’র বীজ উৎপাদন ধান, গম ও ভুট্টার উন্নততর বীজ উৎপাদন এবং উন্নয়ন কেন্দ্রের উপ-পরিচালক এ.কে.এম মনিরুজ্জামান জানান, কৃষিই সমৃদ্ধি, ভাল বীজে ভাল ফসল। তাই কৃষি নির্ভর দেশ হিসেবে আমরা কৃষি ও কৃষকের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভাল মানের বীজ উৎপাদনে সর্বদাই আন্তরিকতার সাথে কাজ করি।
তিনি আরো জানান, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। তাই বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তরা একেবারে শুরু থেকেই চুক্তিবদ্ধ। কৃষকের বীজতলা থেকে শুরু করে শস্য রোপনের সকল দিক নিবিড়ভাবে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করে বীজ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করে কৃষক ভাইদের নিকট মানসম্মত বীজ সরবরাহ করতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ।