হাওর সৈকত ‘নিকলী বেড়িবাঁধ’
ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের কারফিউ জারী, শেখ হাসিনা ভারতে পলায়নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর পরই দেশের ১১টি জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যাসহ নানা কারণে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভ’মি নিকলী বেড়িবাঁধ প্রায় পর্যটক শূন্য। কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলার এই পর্যটনস্থলে বছর পর্যটকের আগমন কম হওয়ায় বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ।
পর্যটকের উপর নির্ভর করে পর্যটন এলাকা ও আশপাশে আবাসিক হোটেল, খাবারের রেস্তোরাসহ বিভিন্ন ধরনের শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে পর্যটকগণকে আকৃষ্ট করার জন্য বিনোদনমূলক পসরা সাজিয়ে বসেছে। পর্যটকরা প্রথমে নিকলী আগমন করে বিস্তীর্ন হাওরের জলরাশির সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে ইটনা, অষ্ট্রগ্রাম ও মিঠামইন উপজেলাসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখতে যায়।
পর্যটকগণের ভ্রমণ চাহিদা মেটাতে পর্যটন এলাকায় সহ¯্রাধিক ইঞ্জিনচালিত ট্রলার রয়েছে। এবছর নিকলী বেড়িবাঁেধ পর্যটকের আগমন কম হওয়ায় এসব ট্রলারের মালিকেরা বর্তমানে অলস সময় পাড় করছেন। মোহরকোনা গ্রামের ট্রলারচালক মোঃ কানন জানান, এ বছর ২ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়া নতুন ট্রলার কিনেছি, পর্যটক না আসায় বসে বসেই সময় পাড় করার কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছি। আল্লার দান রেস্তোরার স্বত্বাধীকারি শরীফুল ইসলাম শুভ্র শরীফ জানান, আগের বছরের তুলনায় পর্যটক নেই বললেই চলে, এবছর হোটেল ডেকোরশেনে অনেক টাকা খরচ করেছি, শুক্র ও শনিবার কিছু বেচা-বিক্রি হলেও বাকি ৫ দিন বসে থাকতে হয়।
আষাঢ-আশ্বিণ এ ৪ মাস নিকলী বেড়িবাঁধ পর্যটকগণের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে। বিগত বছরগুলোতে পর্যটকগণ বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, মটর সাইকেল এবং অটোরিক্সা করে ছুটে আসত প্রকৃতির এই সৌন্দর্য্যরে টানে। শুক্র ও শনিবার বা বিশেষ কোন বন্ধের সময় একদিনে লক্ষাধিক পর্যটক আগমনের ইতিহাস রয়েছে। তখন পর্যটক ও গাড়ির ভিড়ে নিকলী বেড়িবাঁধ এলাকায় তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। সৃষ্টি হতো তীব্র যানজট। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয় প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হতো। দেশের প্রায় সব জেলা থেকেই পর্যটকের আগমন ঘটে থাকে।
বিগত সময়ে রাষ্ট্রের উচ্চ পদস্থ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তি, সাংবাদিক, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের লোকজনসহ প্রায় সকল পেশার মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে নিকলী বেড়িবাঁধে আগমন করে এর সৌন্দর্য্য উপভোগ করে গেছেন। বর্ষাকালে এলাকার বিশাল হাওরাঞ্চল যখন পানিতে একাকার হয়ে পড়ে তখন এই দিগন্তহীন হাওরকে সমুদ্রের মতোই মনে হয়। আর বিস্তীর্ণ হাওর পারের নিকলী বেড়িবাঁধ এলাকাও হয়ে উঠে অপরুপ ‘হাওর সৈকত’। কিন্তু এবার পর্যটকের উপস্থিতি কম হওয়ায় গত কয়েক বছরের পরিস্থিতি দেখা যায়নি।