ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি : মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষের কয়েক হাজার মানুষ। দুই দফা সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ আহত হন। বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে সুরুল্লার বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে।
ভৈরব থানার (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে ওই এলাকায় এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে ও বুধবার সকালে দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার আগানগর গ্রামের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। লুটপাট ও ভাংচুরের ঘটনায় আনুমানিক ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন আগানগর ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবদুল হক ও ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মোঃ সেলিম মিয়া। তবে লুটপাট ও বাড়িঘর ভাংচুরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আগানগর সুরুল্লার বাড়ির মো: নজরুল ইসলাম।
আজ (বুধবার) সকালে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার আগানগরে অবস্থিত আনন্দ বাজারে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার ও জিল্লুর রহমান স্কুল অ্যান্ড কলেজের ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে দুটি পক্ষের দ্ব›দ্ব ছিলো দীর্ঘদিন ধরে। একটি পক্ষ আগানগর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক ও ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি সাইফুল ইসলাম সুমন ও অপর পক্ষ আগানগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোমতাজ মিয়ার পুত্র ও ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি শফিকুল ইসলাম হিরা। গেলো ২২এপ্রিল, জিল্লুর রহমান স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় একজন ডাক্তারকে অতিথি করা নিয়েও দুই প্যানেলের মধ্যে হট্টগোল হয়। এঘটনা স্থানীয়দের মাধ্যমে সমাধানও হয়।
বিভিন্ন ঘটনার সূত্রধরে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিনের একটি দ্ব›দ্ব ঘুরপাক খাচ্ছিলো। গতকাল ৭ মে, মঙ্গলবার বিকেলে শফিকুল ইসলাম হিরার বাড়ির শুক্কর মিয়ার সাথে ও সাইফুল ইসলাম সুমনের পক্ষের মো: আক্কাস আলীর ড্রেজারের পাইপ নিয়ে তর্কবিতর্ক ও মারামারি হয়। পরে তারা মাইকে ঘোষণা দিলে দুই পক্ষে হাজার হাজার মানুষ টেটা, বল্লম, দা সহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ওই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৩০ জন মানুষ আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। সংঘর্ষের খবর পেয়ে ভৈরব থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
মঙ্গলবার বিকেলের সংঘর্ষের পরদিন আজ (বুধবার) সকাল আটটায় আবারও মাইকে ঘোষণা দিয়ে দ্বিতীয় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের লিপ্ত হয় বেপারী বাড়ি ও আফিল উদ্দিনের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে সুরুল্লার বাড়ির লোকজন। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে সংঘর্ষ। খবর পেয়ে ভৈরব থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন বলে জানান ভৈরব সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো: দেলোয়ার হোসেন খান।
দুই দফা সংঘর্ষে উভয় পক্ষের আনুমানিক শতাধিক মানুষ আহত হন। আহত ব্যক্তিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে চিকিৎসা নেন। আহতদের মধ্যে আটজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সের মেডিকেল অফিসার ও কর্তব্যরত চিকিৎসক।
আগানগর গ্রামের সরুল্লা বাড়ির শুক্কুর মিয়া জানান, দীর্ঘদিন যাবত ব্যাপারি বাড়ি ও অফিল উদ্দিন মিয়ার বাড়ির লোকজনের সাথে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্ব›দ্ব ছিলো। মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ নিয়ে গণসংযোগে গেলে পথের মধ্যে আক্কাস মিয়া ও তার লোকজন আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। পরে তারা স্থানীয় একটি মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়।
ব্যাপারি বাড়ি ও আফিল উদ্দিনের বাড়ির পক্ষে সাইফুল ইসলাম সুমন বলেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কোনো দ্ব›দ্ব নেই। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন নিয়ে পূর্ব থেকেই দ্ব›দ্ব ছিলো তাদের। মঙ্গলবারের রেষ ধরে শুক্কুর মিয়াসহ সুরুল্লার বাড়ির লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সর চিকিৎসক জানান, আগানগর গ্রামের ঝগড়ায় আহত হয়ে উভয় পক্ষের ৩০ জন চিকিৎসা নেয়। এছাড়াও বুধবারের সংঘর্ষে আহত হয়ে সকাল থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ৫০ জন রোগী চিকিৎসা নেয়। এরমধ্যে আটজনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।
এবিষয়ে ভৈরব সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ দেলোয়ার হোসেন খান জানান, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গোষ্ঠীর লোকজন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এবং বুধবার সকালে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দুই পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।