প্রতিনিধি, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) : কিশোরগঞ্জের ভৈরবে র্যাব হেফাজতে সুরাইয়া খাতুন (৫২) নামের এক আসামীর মৃত্যু হয়েছে। তবে র্যাবের দাবি অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার গেইট থেকে আটকের পর গভীর রাতে ভৈরব র্যাব ক্যাম্পে নিয়ে আসে।
গতকাল শুক্রবার সকাল ৭টায় সুরাইয়া খাতুনকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। নিহত সুরাইয়া খাতুন নান্দাইল উপজেলার বরুনাকান্দি গ্রামের আজিজুল ইসলামের স্ত্রী। আটককৃত তিনজন নান্দাইল এলাকার নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ধারায় রেখা আক্তার (২০) নামের এক গৃহবধূ হত্যা মামলার আসামি।
এছাড়া নিহতের ছেলে তাইজুল ইসলাম লিমন (২৩) কে নারায়নগঞ্জ এলাকা থেকে একই রাতে আটক করা হয়। অপর আসামী নিহত সুরাইয়ার স্বামী মোঃ আজিজুল ইসলাম (৬০)। আসামিরা সম্পর্কে নিহত রেখার স্বামী, শুশুর ও শ্বাশুড়ি। রাতে মা ছেলেসহ দুই আসামীকে আটকের পর ভৈরব র্যাব ক্যাম্পের ভিতরে র্যাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায় গরমে অসুস্থ হয়ে বা হৃদরোগে মারা গেছে বলে র্যাবের দাবি।
খবর পেয়ে সকাল হাসপাতালে গেলে মিডিয়াকর্মীরা র্যাবের কাছে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে র্যাব কোনভাবেই খোলাসা করে না বলে জানায়, অসুস্থ হয়ে সুরাইয়া মারা গেছে। তারা আরো জানায়, উর্ধতন কর্মকর্তারা এসে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবে। কিন্তু সারা দিন পার হলেও রাত ৮টা পর্যন্ত র্যাবের উধ্বর্তন কোনো কর্মকর্তা এ বিষয়ে মুখ খোলেনি। এদিকে নিহতের পরিবারের দাবি, র্যাব নির্যাতন করে তাকে হত্যা করেছে। তারা আদালতে এ বিষয়ে মামলা করবে।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, দেড় বছর আগে একই উপজেলার ভেড়ামারি গ্রামের কৃষক হাসিম উদ্দিনের মেয়ে রেখা আক্তারের সাথে তাইজুল ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তার স্বামী তাইজুল দুই লাখ টাকা যৌতুকের জন্য রেখাকে চাপ সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে আরো একলাখ টাকা যৌতুক দাবি করলে টাকা দিতে অস্বীকার করে তারা। গত ২৬ এপ্রিল রাতে রেখাকে যৌতুকের টাকার জন্য তার স্বামী, শুশুর-শ্বাশুড়ি নির্যাতন করে আহত করে।
সে রাতেই তাকে আহত অবস্থায় পাশের উপজেলা ইশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। খবর পেয়ে রেখার পরিবারের লোকজন লাশ হাসপাতাল থেকে নিয়ে ময়না তদন্তের পর দাফন করে।
তারপর থানায় তারা মামলা দিতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে অপমৃত্যু মামলা করে। গত ২ মে রেখার মা রমিছা বেগম ময়মনসিংহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইক্যুনালে তিন জনকে (স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি) অভিযুক্ত করে একটি মামলা করে। আদালতের বিচারক মামলার শুনানী শেষে নান্দাইল থানার ওসিকে মামলাটি এফআইআর করে তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে গত ১৩ মে নান্দাইল থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয় (মামলা নং ১৫)।
ভৈরব র্যাব ক্যাম্পের সদস্যরা গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে থানার গেইটে গিয়ে শ^শুড়কে ছেড়ে দিয়ে সুরাইয়াকে আটক করে ভৈরব র্যাব ক্যাম্পে নিয়ে আসে গভীর রাতে। শুক্রবার সকালে মৃত অবস্থায় ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসাপাতালে নিয়ে যায় সুরাইয়াকে। নিহত রেখার স্বামী তাইজুল ইসলাম বর্তমানে র্যাবের হাতে আটক আছে।
নিহত সুরাইয়া খাতুনের স্বামী আজিজুল ইসলাম জানান, আমার স্ত্রীকে পুলিশ কৌশলে থানার গেইট থেকে তুলে নেয়। খবর পেলাম রাতেই মারা গেল আমার স্ত্রী। র্যাব নির্যাতন করে আমার স্ত্রীকে হত্যা করেছে। আমি এ বিষয়ে আদালতে মামলা করব। আমি বিচার চাই। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে নান্দাইল থানার এস আই নাজমুল হাসান।
এ বিষয়ে ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সফিকুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমরা অবগত হলেই আইনি প্রক্রিয়ায় আমার থানায় একটি জিডি করবে র্যাব। সুরাইয়াকে কেন, কিভাবে, কি কারণে আটক করল এবং কিভাবে মারা গেল তার জবাব দিবেন র্যাব সদস্যরা।
এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ বুলবুল আহমেদ জানান, শুক্রবার সকাল ৭টায় র্যাব সদস্যরা সুরাইয়া খাতুন নামের এক নারীকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তাকে আনার পর কর্তব্যরত ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করে। হাসপাতালে আনার আগেই হয়তো পথিমধ্যে সে মারা গেছে।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ইসরাত জাহান শুক্রবার রাত ৮টায় লাশের সুরতহাল তৈরি করে জানান, ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তবে নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে কিনা এমন প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে বলেন, ময়না তদন্তের তার প্রমাণ হবে। এ বিষয় আইনি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে তিনি জানান।