জামাল আহমেদ ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের ভৈরবে একই গ্রামের বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাবেক চেয়ারম্যানের দুই বংশের আধিত্য বিস্তারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ১ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আরো ৩০ জন আহত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত যুবকের নাম মোঃ ইকবাল মিয়া (৩৫), সে ওই গ্রামের খালপাড় এলাকার ধন মিয়ার ছেলে। নিহত ইকবাল সংঘর্ষের সময় বুকে টেটা বিদ্ধ হলে গুরুতর আহত অবস্থায় বিকেল ৫টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে হাসপাতালের ডাক্তার মৃত বলে ঘোষণা করে । এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন শাফি ব্যাপারী (৬৫), হোসাইন (২০), ইয়াছিন (২৫), রাকিব (৩২) শাহ আলম (৩০) তোফাজ্জল (৩৫), হেলেনা বেগম (৩৫) ও লাদেন (২০)।
এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় লাদেন, হেলেনা বেগম, শাহ আলম ও শাফি ব্যাপারিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসক ডা. ফারিয়া নাজমুন প্রভা।
জানা যায়, ৫৬ বছর যাবত চলছে ভৈরবে দুই বংশের দ্ব›দ্ব। বংশ দুটি হলো উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামে বর্তমান চেয়ারম্যান সরকার বাড়ি ও সাবেক চেয়ারম্যান কর্তা বাড়ি। সরকার বাড়ির পক্ষে নেতৃত্ব দেন ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সরকার শেফায়াত উল্লাহ। আরেক পক্ষ কর্তা বাড়ির নেতৃত্ব দেন সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির নেতা তোফাজ্জল হোসেন।
দুই বংশের দ্ব›েদ্ব ইকবাল মিয়াসহ দুই পক্ষে খুন হয়েছে এ পযর্ন্ত ১৪ জন। চলতি বছর ১৬ জুন ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুই বংশের মধ্যে সংঘর্ষে কর্তা বাড়ির নাদিম গুরুতর আহত হলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৯ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। ৬ আগস্ট ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সাদেক পুরের মেন্দিপুর পূর্ব পাড়া এলাকায় দুই গ্রæপের সংঘর্ষ হয়। ৭ আগস্ট একই ঘটনায় সংঘর্ষে টেটার আঘাতে জহিরুল্লাহ নামে একজন নিহত হয়।
এ দিকে নাদিম হত্যার ঘটনায় সরকার বাড়ির চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লাহ, তার ভাই ও দুই ছেলেসহ ৮৩ জনকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করে কর্তা বাড়ির পক্ষ। পরে সরকার বাড়ির ৬৯ জন কিশোরগঞ্জ কোর্টে হাজিরা দিতে গেলে তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন বিচারক। ১৩ আগস্ট সরকার বাড়ির লোকজন জামিনে মুক্তি পায়। মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরতেই শুরু হয় দফায় দফায় সংঘর্ষ।
গত কিছুদিন যাবত দুই পক্ষে মধ্যে চলছে উত্তেজনা। পুলিশ-সেনাবাহিনী এলাকায় গিয়ে দই পক্ষে সাথে আলোচনা করে। গতকাল শুক্রবার ৩টার পর থেকে দুই বংশ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় ইকবাল মিয়া নামে একজন নিহত হন। আহত হন ৩০ জন।
এ বিষয়ে সরকার বাড়ির পক্ষে হাজী আনোয়ারুল হক বলেন, পূর্ব শত্রæতার জেরে কর্তা বাড়ির লোকজন আমাদের বাড়ির লোকজনের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। কর্তা বাড়ির লোকজনের টেটার আঘাতে আমাদের বাড়ির ইকবাল নিহত হয়। আমরা এর বিচার চাই।
এ বিষয়ে কর্তা বাড়ি পক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির নেতা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, পূর্ব শত্রুতা চলছে বহু বছর যাবত। আমি অতিষ্ঠ হয়ে ভৈরব শহরে দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করছি। আজকে (গতকাল) মারামারি হচ্ছে শুনেছি। তবে হত্যার বিষয়ে কিছুই জানি না।
এ বিষয়ে ভৈরব থানার (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৮টায় জানান, মৌটুপি গ্রামের মানুষ বংশ পরম্পরায় শত্রæ, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে যুগ যুগ ধরে ঝগড়া সংঘর্ষ করছে। পুলিশও তাদেরকে দমন করতে পারেনা। আজকে (গতকাল) দুই বংশের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।