মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৩ অপরাহ্ন

রপ্তানিমুখী পণ্যে নতুনত্ব আনার তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০২৪
  • ৭৭ Time View

এফএনএস : গুটিকয়েক পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে রপ্তানিমুখী পণ্যে নতুনত্ব আনার এবং নতুন বাজার সৃষ্টির তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এই সময়ের ক‚টনীতি কেবল রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক‚টনীতির পথেও হাঁটতে হবে। গতকাল রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে রপ্তানি খাতে অবদানের জন্য জাতীয় রপ্তানি ট্রফি ২০২১-২২ প্রদান অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “বাজার বাড়াতে হবে, রপ্তানি পণ্য বহুমুখী করতে হবে। একটা রপ্তানি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকা যায় না। কারণ একটা পণ্যের চাহিদা চিরদিন সমানভাবে থাকে না। সেটা মাথায় রেখে আরা কোন কোন দেশে কি রপ্তানি করতে পারি, সেভাবে আমাদের নিজেদের একটা অনুসন্ধান চালানো, তাদের সাথে যোগাযোগ করা এবং সেই সুযোগটা তৈরি করতে হবে।

আমি যখন কোনো দেশে যাই সেখানকার অ্যাম্বাসেডরদের নিয়ে মিটিং করি। “আমাদের যেটা নির্দেশ সেটা হচ্ছে, এখনকার কুটনীতি শুধু রাজনৈতিক না, এটা হবে ইকোনমিক, বাণিজ্যিক। কোন দেশে কোনো মার্কেট আছে, কোন দেশে কী চাহিদা আছে, সেটা খুঁজে বের করা। তাদের কাছ থেকে আমরা কোন পণ্য সস্তায় কিনতে পারি, তাদের কাছে আমরা কোন পণ্য রপ্তানি করতে পারি- সেগুলো দেখা।

এখন আমাদের ডিপ্লোমেসি হচ্ছে ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি।” সিরামিক, পাটজাত পণ্য, হস্তশিল্প, প্রক্রিয়াজাত পণ্য-খাদ্য, হাতে তৈরি ফাইবার, এবং আইসিটি খাতে রপ্তানি বাড়াতে গবেষণায় জোর দেয়ার আহŸান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এত বাধা-বিপত্তি সত্তে¡ও আমরা যে অর্থনীতি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, তাতে ব্যবসায়ী মহলের সহযোগিতা দরকার। আপনাদের যে চাহিদা আছে, আমরা তা পূরণ করব। আপনাদেরও কিন্তু দেশের প্রতি দায়িত্ব আছে, সেটা আপনাদের মনে রাখতে হবে।”

চলতি অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেটের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২০০৯ সালে বাজেট ছিল ৬৮ হাজার কোটি টাকা যখন সরকার গঠন করি। এই ১৫ বছরের মধ্যে এত বড় বাজেট দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছি।” গত অর্থবছরের তুলনায় এবারের বাজেট প্রায় ৪.৬ শতাংশ বড় জানিয়ে তিনি বলেন, “বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি প্রায় ১৩ গুণ বৃদ্ধি করেছি।

রপ্তানি আয় ৫ গুণ এবং রেমিটেন্স ৬ গুণের বেশি এসেছে। দারিদ্রের হার কমিয়েছি। যেটা আগে ৪৮.৫ শতাংশ ছিল, সেটা এখন ১৮.৬ ভাগ। যদি কোভিড, রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ, এবং ফিলিস্তিনিতে গণহত্যা না হত, তাহলে বিশ্বের অর্থনীতি ভালো থাকত, আমরাও আরো এগিয়ে যেতে পারতাম। এজন্য অনেকটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এরপরও আমরা দারিদ্র্যের হার কমিয়েছি। অতিদারিদ্র্যের হার যেটা ২৫.১ ভাগ ছিল, সেটা ৫.৬ ভাগে নামিয়ে এনেছি। ইনশাল্লাহ অতি দরিদ্র বলে বাংলাদেশে কেউ থাকবে না।” গৃহহীন ও ভ‚মিহীন মানুষের জন্য সরকারে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “ইনশাল্লাহ মাত্র কয়েকদিনের ভিতরে আরো কয়েক হাজার ঘর দিলেই প্রত্যেকের একটা ঘর হবে।” সরকার প্রধানের ভাষ্য, উন্নয়নের ছোঁয়া এখন পৌঁছে গেছে তৃণমূল পর্যন্ত। তিনি বলেন, “ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ¦ালানির উৎপাদনে জোর দিচ্ছি। হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। আমাদের অর্থনীতি এখন বিশ্বের ৩৩ তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে।

সামনের দিকে আমরা আরো বড় করতে পারব বলে আমার বিশ্বাস। আমরা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা নিচ্ছি। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নিচ্ছি। ২০১০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করেছিলাম, যে লক্ষ্য স্থির করেছিলাম; সেটা আমরা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।” পরিকল্পিতভাবে কাজ করার ফলে মাত্র ১৫ বছরে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে ‘উন্নতি সম্ভব হয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাবে দেশের অর্থনীতি ‘চাপের মুখে পড়েছে’।

উৎপাদন, রপ্তানি এবং মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়িয়ে অর্থনীতিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় জানান শেখ হাসিনা। সরকার কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলে যাওয়ার জন্য এটা প্রয়োজন। দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে।” যুব সমাজকে ব্যবসায় এগিয়ে আসার আহŸান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে রপ্তানি ট্রফি গ্রহণে অনেক যুবককে দেখে আমার ভালো লাগল যে, অনেক যুবক ট্রফি হাতে তুলে নিয়েছে।

এটাতে আমি একটা আশার আলো দেখি যে, দেশটাই এগিয়ে যাবে আমাদের যুব সমাজ।” বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর সভাপতিত্বে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি টিপু মুনশি, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলমসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে। রপ্তানি খাতে ভ‚মিকার জন্য এবারে ৭৭টি প্রতিষ্ঠান ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জাতীয় রপ্তানি ট্রফি পেয়েছে।

জাতীয় রপ্তানি ট্রফি নীতিমালা-২০১৩ অনুসরণে প্রাথমিক ও চ‚ড়ান্ত বাছাই কমিটির মাধ্যমে মোট ৩২টি খাতের রপ্তানিকারকদের মধ্য থেকে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য রপ্তানি আয়, আয়গত প্রবৃদ্ধি, নতুন পণ্যের সংযোজন, নতুন বাজারে প্রবেশ, কমপ্লায়েন্স প্রতিপালন ইত্যাদি মূল্যায়নপূর্বক ট্রফি বিজয়ী প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করেছে। প্রতিটি খাতের জন্য কৃতী রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে স্বর্ণ, রোপ্য ও ব্রোঞ্জ ট্রফি দেওয়া হয় অনুষ্ঠানে। এছাড়া সব খাতের মধ্যে সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় অর্জনকারী প্রতিষ্ঠানকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রপ্তানি ট্রফি শিরোনামে ১টি বিশেষ ট্রফিসহ (স্বর্ণ) মোট ২৯টি স্বর্ণ, ২৭টি রৌপ্য এবং ২১টি ব্রোঞ্জ ট্রফি দেওয়া হয়।

আপডেট সংবাদ পেতে শতাব্দীর কন্ঠ পড়ুন, শেয়ার করে সাথে থাকুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
All rights reserved © Shatabdir Kantha . Developed by SDTT Academy & Tech Liberty